মাহমুদুর রহমানের মাথা-চোখের নিচে ৮ সেলাই
কুষ্টিয়ায় আদালত চত্বরে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলার ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। তবে পুলিশ জানিয়েছে, হামলার ঘটনায় কোনো মামলা না হলেও হামলাকারীদের চিহ্নিত করে
তারা আইনের আওতায় নেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। শহর বিএনপির সভাপতি কুতুব উদ্দিন বলেন, আমি জানতাম না মাহমুদুর রহমানের মামলার হাজিরা আছে। কোর্টে গিয়ে শুনে উনার সঙ্গে দেখা করতে যাই। কিন্তু প্রশাসনের কারণে আদালত চত্বর ত্যাগ করতে বাধ্য হই। অন্যদিকে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী বলেন, আমরা হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। এদিকে কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি নাসির উদ্দিন বলেন, আমার থানায় রোববার কোর্ট চত্বরে মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলার ঘটনায় কেউ মামলা করতে আসেনি, তা সত্ত্বেও হামলাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা।
অচিরেই দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনবেন বলে জানান তিনি।
ইউনাইটেডে যেমন আছেন মাহমুদুর রহমান
মাহমুদুর রহমান বর্তমানে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রোববার রাতে তার মাথায় সিটি স্ক্যানসহ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। ডান চোখের নিচে ও মাথায় কাটা অংশে ৮টি সেলাই দেন চিকিৎসকরা। আইসিইউতে শারীরিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকায় গতকাল দুপুরে তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডা. শফিকুর রহমানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। ইউনাইটেড হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট একজন চিকিৎসক জানান, হামলায় মাহমুদুর রহমান গুরুতর আহত হয়েছেন। তার ডান চোখের নিচে কেটে গেছে। মাথার পেছনে কেটে গেছে। ঘাড়েও কেটে গেছে। রাতে যখন ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তখনও তার মাথার পেছন দিক থেকে রক্ত ঝরছিল। এ ছাড়া তিনি মুখ, হাত, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত পেয়েছেন। বিশেষ করে অল্পের জন্য তার ডান চোখটি রক্ষা পেয়েছে। তিনি জানান, হাসপাতালে আনার পর প্রথমেই তার মাথা ও ঘাড়ে সিটি স্ক্যানসহ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। তারপর তাকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। রাত ১১টার দিকে তার শরীর থেকে অস্ত্রোপচার ও দুইটি কাটাস্থানে ৮টি সেলাই দেয়া হয়। সোমবার দুপুরের দিকে তার শারীরিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
বর্তমানে তাকে তরল খাবার দেয়া হচ্ছে। এছাড়া তিনি উচ্চরক্তচাপসহ বয়সজনিত নানা রোগে ভুগছেন। সেগুলো বিবেচনায় রেখেই তাকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। একজন চিকিৎসক জানান, রোববার বিকালে কুষ্টিয়ায় হামলার শিকার হওয়ার পর সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে না পারায় তার বেশ রক্তক্ষরণ হয়। যশোরে কেবল ব্যান্ডেজ দিয়ে তার রক্তক্ষরণ বন্ধ করা হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় মাহমুদুর রহমানকে যশোর থেকে বিমানযোগে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে আনা হয়। এদিকে গতকাল রাতে তাঁর পারিবারিক একটি সূত্র জানায়, তাঁর ডান চোখটি ফুলে গেছে।
শরীরের নানাস্থানে আঘাতের কারণে তীব্র ব্যথায় ভুগছেন। হাসপাতালের কেবিনে মাহমুদুর রহমানের মা ও স্ত্রী সার্বক্ষণিক তার সঙ্গে রয়েছেন। এদিকে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন- বিএফইউজে (একাংশের) মহাসচিব এম আব্দুল্লাহ চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জানান, রোববার কুষ্টিয়ায় বর্বরোচিত হামলার শিকার মাহমুদুর রহমানের ডান চোখ ঝুঁকির মুখে পড়েছে। রক্ত জমে ফুলে গেছে। মাথার ডানদিকে কানের উপরের আঘাতও গুরুতর। দুইদিন পর মাথার ড্রেসিং পরিবর্তন করা হবে। তবে তাকে বেশ কয়েকদিন হাসপাতালে অবস্থান করে চিকিৎসা দিতে হবে। ওদিকে বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. ফাইয়াজ শুভ জানান, রোববার রাতে মাহমুদুর রহমানকে ইউনাইটেড হাসপাতালে আনার পরপরই সেখানে আসেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি মাহমুদুর রহমানকে সান্ত্বনা ও সাহস দেন। সেই সঙ্গে তার চিকিৎসায় সর্বোচ্চ যত্নবান হওয়ার জন্য চিকিৎসকদের নির্দেশনাসহ অনুরোধ জানান। এ সময় দলের স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. ফাইয়াজ শুভ ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন উপস্থিত ছিলেন। গতকালও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. জাহিদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনসহ বিএনপি নেতা, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তাকে দেখতে হাসপাতালে যান।
উল্লেখ্য, মানহানির একটি মামলায় জামিন নিতে রোববার কুষ্টিয়া যান মাহমুদুর রহমান। তিনি আদালতে পৌঁছালে আদালত চত্বর ঘিরে ফেলে সরকার সমর্থকরা। তিনি আদালত থেকে জামিন পেলেও সরকার সমর্থকদের মারমুখো অবস্থানের কারণে বের হতে পারছিলেন না। এক পর্যায়ে বের হতে গেলে তার দিকে তেড়ে আসে ছাত্রলীগের কর্মীরা। এ সময় তিনি মহিলা আইনজীবী সমিতির অ্যাডভোকেট সামস তামিম মুক্তির চেম্বারে আশ্রয় নিলে ছাত্রলীগ সেখানেও হামলা চালায়। একপর্যায়ে তিনি আদালতের সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট এমএম মোরশেদের এজলাসে গিয়ে নিরাপত্তা চান। এ সময় আদালত সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ডাকলেও তিনি উপস্থিত হননি। পরে আদালতের জিআরওকে ডেকে তাকে নিরাপদে ঢাকার পথে এগিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন। এ সময় তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক লাইভে গিয়েও নিজের নিরাপত্তা চান।
একই সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করে মাহমুদুর রহমানের নিরাপত্তা চান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কিন্তু তারপরও হামলার শিকার হন মাহমুদুর রহমান। জিআরও বিকাল সাড়ে চারটার দিকে মাহমুদুর রহমানকে আদালত থেকে বের করে তার গাড়ির কাছে আনেন। এ সময় সরকার সমর্থকরা হামলা করে তাকে রক্তাক্ত করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তার ওপর ব্যাপকভাবে ইট-পাথর নিক্ষেপ করা হয়। এতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। তার মাথা ফেটে রক্ত ঝরতে দেখা যায়।