রাষ্ট্র থাকলো কি গেলো কিচ্ছু যায় আসেনা
আবু জাফর মাহমুদ: রাষ্ট্রশাসন, প্রশাসন, বিচার, আইনশৃঙ্খলা ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিষয়ে হচ্ছিলো কথা। রাষ্ট্র এবং নাগরিকদের স্বার্থ রক্ষার নামে চলছে রাষ্ট্রীয় প্রতারণা, ভাওতা। রাজনীতির রকমফের যাই থাকুক, চলছে ক্ষমতাভোগ এবং লুন্ঠনের স্বার্থে রাজনীতিকদের প্রতিযোগীতা। বিদেশী শক্তির স্থানীয় প্রতিনিধির টাইটেল। এতে বাংলাদেশ আছে নামেমাত্র। পরিচালিত হচ্ছে অন্যের হুকুমে।
একজন বললেন, একজনের ব্যর্থতার দায় অপরের কাঁধে দিয়ে কপটতার প্রতিযোগীতার রাজনৈতিক ভ-ামিতে সামান্যও আগ্রহ নেই আমার। অপরজন বললেন, তাহলে আপনি দলীয় রাজনীতির বর্তমান গ-ির বাহিরে থাকাই উত্তম। আরেকজন বললেন, চোখের সামনে যা ঘটছে এবং ঘটে এসেছে সে ঘটনাগুলোর ধারাবাহিকতাতেই পরিস্কার হওয়া যায় বাংলাদেশে কি ঘটানো হচ্ছে এবং কি ঘটছে। রাষ্ট্রশাসনের রাজনীতিতে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে যেনো প্রতারণার আধিক্য। আলাপ জমে উঠলো।
আলাপ এগুতে লাগলো এভাবে; কিছু কিছু অবস্থা আকাশের বজ্রপাতের মতো আকস্মিক, চিন্তারও বাইরে। কয়েক বছর যাবত ক্ষমতাধর রাজনীতিকরা মুখে দেশপ্রেম, সততা এবং স্বাধীনতার চেতনার একমাত্র ঠিকাদাররূপে নিজেদেরকে জাহির করেন এবং স্বাধীনতাযোদ্ধা ও স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রধান সংগঠকদেরকেও “ষড়যন্ত্রকারী” বলে জাতিকে বুঝাতে চান, প্রচার করেন। যারা এচেষ্টা করছেন তারা এতোই পরিচিত যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলন এবং যুদ্ধে তাদের সামান্যও অবদান নেই, দেখাতে পারেনি। অথচ এদের কার্যকলাপে স্পষ্ট প্রমাই আছে তাদের নীতি হলো, “আমি আছি তো রাষ্ট্র আছে, দেশ আছে। আমি না থাকলে দেশ রাষ্ট্র থাকলো কি গেলো, তাতে কিছুই যায় আসেনা”।
কথা টেনে নিয়ে আরেকজন বললেন, আগে থেকে কথা থাকলেও সাতই মার্চের ভাষণে আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণা না দেয়ায় সিরাজুল আলম খান বঙ্গবন্ধু মুজিবকে ধানমন্ডি ৩২ নং বাড়িতে যখন গণ অসন্তুষ্টির কথা জানাচ্ছিলেন, তখন বঙ্গবন্ধু কি স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতাকে ষড়যন্ত্রকারী বলেছিলেন? না। তাতো করেননি। জীবনে কোনদিন সিরাজুলের অবদানকে অস্বীকার করেছিলেন? তাতো করেননি,বরঞ্চ বিদেশী নেতা ও কূটনীতিকদের কাছে পরিচয় করে দিতেন, এই হচ্ছে আমাদের দার্শনিক নেতা।
কতো আদর তিনি করতেন সিরাজ সহ তৎকালীন ছাত্রনেতাদেরকে! তিনি কর্মীদের মেধার গুরুত্ব দিতেন। প্রথমজন আবার খুললেন মুখ। বললেন, রাখো রাখো অতীতের কথা। শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর কণ্যা এবং স্বাধীন বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, সব কৃতিত্ব কেড়ে নেবার চেষ্টায় নিজেই জানিয়ে দিলেন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি। মুজিব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কিছু করেননি,ষড়যন্ত্র করেছেন সিরাজুল আলম খান। তাহলে প্রধানমন্ত্রীর কথায় কি দাঁড়ালো?
স্বাধীনতার ঘোষণা বঙ্গবন্ধুর মুখে দেওয়ানোর জন্যে স্বাধীনতাপন্থি ছাত্র-যুব নেতাদের চেষ্টাকে “ষড়যন্ত্র” বলে আখ্যায়িত করলেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা। এতে ইয়াহিয়া খানের বাহিনী আর শেখ হাসিনার মনের কথার শব্দ এক হয়ে গেলোনা? কফি’র কাপে ঠোঁট লাগিয়ে একজন তাতে যোগ করলেন তার কথা।
গণতন্ত্রের শত্রু এবং স্বাধীনতার শত্রুদের মিল সব ক্ষেত্রেই এক। সময় মতো পরিচয় বেরিয়ে আসে। স্বাধীনতার চেতনা বুকে জন্ম দিতে কেবল রাজনীতির চেতনায় কি হয়? তাতো নয়। সেজন্যে বিপ্লবী দুঃসাহসের অধিকারী হতে হয়। নেতা হবার সাহস এবং সৃষ্টিশীলতা পরস্পরের পরিপূরক। তবে দুটো শব্দের অর্থ এবং গন্তব্য এক নয়। আবার স্বাধীনতার শত্রুদের চরিত্রের নিষ্ঠুরতা সবকালেই অভিন্ন। এক্ষেত্রে বাঙালী পাঞ্জাবী আর আর্য্য অনার্য্যে ভেদাভেদ নেই, হায়েনা আফ্রিকার হোক আর এশিয়ার হউক চরিত্র এক ও অভিন্ন। পাকিস্তানের হোক আর ভারতের হোক।
জবাবে আগেরজন আবার বললেন, তখন ছাত্রলীগের স্বাধীনতা পন্থিরাই ইস্পাত কঠিন দৃঢ় ছিলেন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার লক্ষ্যে এবং ছিলেন জনমত সংগঠিত করার প্রধান শক্তি। স্বাধীনতার প্রশ্নে ছিলেন অকুতোভয় এবং বয়স্ক রাজনীতিবিদদের চেয়ে অনেক ধাপ এগিয়ে। তাই আওয়ামী লীগকে অক্ষম অকেজো দেখেই ওরা বঙ্গবন্ধুর জন্যে অপেক্ষা না করে ২মার্চ বটতলা থেকে যুদ্ধ শুরু করে দিতে কি পারতোনা? ডাকসু ভিপি ও জয়বাংলা বাহিনীর অধিনায়ক তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি আ.স.ম আব্দুর রব স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করতে পারলে এটা কি পারতোনা?
পরদিন ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে। এরা উভয়েই ছিলেন সিরাজুল আলম খানের অনুগত ছাত্রনেতা। ছাত্রলীগের এই নেতারা যা পেরেছিলো তৎকালীন কোন রাজনৈতিক দল তো তা পারেনি। আমাদের কাছে এইযে ঐতিহাসিক সত্য, তাকে মিথ্যা প্রমাণের দলিল কি আছে ইতিহাসে?
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে দেখা গেছে, এরা ১৯৭২ সনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি নিজেদের রাজনৈতিক মতামতের দল গঠন করেছেন রাষ্ট্রপরিচালনায় স্বাধীনতাযুদ্ধের অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশ পরিচালনা করার প্রস্তাবের নীতি কৌশল ঘোষণা দিয়ে। এরা ৬ দফাভিত্তিক স্বায়ত্বশাসনপন্থী ও স্বাধীনতাপন্থী বাঙালীর ঐক্যবদ্ধ থাকার গুরুত্বকে অগ্রাধিকারে রেখেছিলেন বলেই বঙ্গবন্ধুকে রাজনৈতিক কৃতিত্ব দিতে এবং জাতীয় দায়িত্বের প্রতি ছিলেন অবিচল নিবেদিত।ওটা ছিলো তৎকালীন ছাত্রনেতাদের শিক্ষা এবং দেশপ্রেমের মানের উচ্চতা।
সিরাজুল আলম খান
এই জাতীয় বীর সহ সকল জাতীয় বীরদেরকে সম্মান করার মধ্যে আছে জাতির স্বাধীনতাযুদ্ধকে মর্যাদা দেয়ার প্রমাণ। দেশের সীমান্ত রক্ষায় বীরত্ব প্রমাণ করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ কি রাজনীতিতিতে এমনি এমনিই এসেছে? কাউকে দোষ দিয়ে নয়, আমি বলছি স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে জীবন বাজি রাখার নৈতিক মনোবল হচ্ছে মানুষের নাগরিক যোগ্যতার অনন্যতা। চাপাবাজি বা রাজনৈতিক ফন্দিবাজি আর রাষ্ট্রের স্বাধীনতার দায়িত্ব রক্ষার যোগ্যতাকে এক পাল্লায় তূলনা চলেনা।
এদিকে বিশ্বরাজনীতি পরিবর্তন হয়েছে বিশ্বশক্তির প্রতিযোগীতার পরিস্থিতি বদলে যাওয়ায়। আমেরিকা একক সুপার হয়ে মাথা তুলে বিজয়ীর মর্যাদায় আলোকিত ও উদ্ভাসিত হবার পর আঞ্চলিক এবং জাতীয় পরিস্থিতিও বিপরীত দিক থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থায় ভারতে পরিবর্তন হলেও বাংলা দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে রাজনীতিবিদদের গুণগত কোন পরিবর্তন দেখা যায়নি। তাই বাংলাদেশ ব্যর্থ হলো নয়া বিশ্বের সুযোগ সমৃদ্ধির অংশীদার হতে। প্রবাসী বাংলাদেশীর বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানোর বাহিরে গার্মেণ্টস মালিকরা সহ কিছু রফতানী আয়ে বাংলাদেশের বাজেটের সংকুলান হলো। রাজনীতিবিদ দেরকে ঘুষ দিয়ে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে হয়। মেধাবিরা দেশে হচ্ছেন পরিত্যক্ত এবং বাধ্য হন হতাশায় ডুবতে অথবা দেশ ছাড়তে।
রাজনৈতিক প্রাতিষ্ঠানিকতাকে স্বাধীনতাযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার ঐতিহ্যের ধারা কালক্রমে বাংলাদেশকে ভারতের পরাধীনতায় টেনে নিয়ে গেলো। বাংলাদেশকে ভারতের ঘনিষ্ট মিত্র প্রতিবেশী করার রাজনীতিতে উভয় দেশের জন্যে নিরাপদ এবং লাভজনক। অথচ উভয় দেশের নীচ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কাছে উন্নত সম্পর্কের চেতনা হলো পরাজিত। ভালো প্রতিবেশী ও স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে আপন মর্যাদায় টিকে থাকার রাজনীতি কার্যকর সম্ভব হলোনা যুদ্ধে বিজয়ী বাঙালী জাতির। এই ব্যার্থতার দায় কার? নেতৃত্ব কি এই দায় এড়াতে পারেন? স্বাধীনতাযুদ্ধের অভিজ্ঞতায় ঐক্যবদ্ধ জাতীয় চেতনা ছাড়া আরেকটি হলো পরাধীনতায় নিজেদের আখের গোছানোর রাজনীতি। ভারতবর্ষে যে রাজনীতি সকল বিদেশী শাসনামলে হয়ে এসেছে। বিদেশী প্রভূদের সেবাদাস হয়ে দেশ লুন্ঠনে ভাগিদার হওয়া এবং প্রভূদের স্থানীয় প্রতিনিধি হওয়া। প্রভূদের কাছে দেশের অর্থ সম্পদের বেশীর ভাগ তুলে দেয়ার কার্যক্রমে পাহারাদারের দায়িত্ব পালন করা।
এমন পরিস্থিতি দেখানো চলছে যে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা দেশ চালাতে অক্ষম এবং তাদের শাসনামলে ব্যাংক পরিচালনা সবচেয়ে এলোমেলো। আইনশৃঙ্খলার অবনতি চরমে। সরকারী দলের লোক দেখলে মানুষ আঁতকে উঠে ভয়ে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্পর্শ কাতর আর্থিক খাত, যোগাযোগ ও স্বাস্থ্যখাত এবং আইনশৃঙ্খলা নিরাপত্তা খাতের প্রধান বেনিফিসিয়ারী হচ্ছে ভারতীয়রা। এই চাপিয়ে দেয়া পরিস্থিতি কার কার স্বার্থে প্রশ্ন না করেই মানুষ নিজেরাই দেখছেন।
ভারতীয়দের এই সম্প্রসারণ বিজয়ে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে ভারত জানে কিভাবে বাংলাদেশী লুটেরাদেরকে ব্যবহার করে স্বার্থ আদায় করতে হয় এবং দাস দাসীদেরকে ভালবাসার প্রেমের আগুণে পুড়ে ছাই করে দিতে হয়। নিঃস্ব করে, ঘর ছাড়া করে উপোস মারতে হয়। কার্য উদ্ধার হলে ছঁড়ে ফেলতে হয়। আগামী দিনে বর্তমানের ধারাবাহিকতাই তো দেশ চলবে। তার আর বিকল্প রাজনৈতিক চিহ্ন দেশে দেখা যায়না। তাই ক্ষমতাসীন শ্রেণী সম্পূর্ণই ভারতের হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। তারা হউক সরকারে অথবা হউক রাজনৈতিক দলের, মানুষ দেখছে এটাই এখন বাস্তবতা।
এই পরিচিতি কি ভারতের জন্যে শুভকর, সুনামের? সাধারণ বাংলাদেশীরা ভারতীয়দেরকে পছন্দ না করার পরিস্থিতিও চরমে পৌঁচে যাচ্ছে। ওটা অস্থিরতা উস্কাতে সহযোগীতাদায়ক। পুলিশ বিজিপি এবং গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে মানুষকে বিরক্তির উত্তেজনায় ঘামিয়ে তোলার দীর্ঘস্থায়ী কুফল সম্পর্কে ভেবে দেখা দরকার।ভারতকেও আরো কৌশলী হওয়া বাঞ্চনীয়। বাংলাদেশে যারা নিজেদের সীমাহীন লোভের স্বার্থে ভারতকে নগ্ন ব্যবহার করছেন, তারা কতটুকু ভারতের বন্ধু তা বুঝবার জ্ঞান ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের কি নেই? অবশ্যই তাদের রয়েছে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। নিশ্চয়ই সব কিছুর মেয়াদকাল নির্দ্দিষ্ট থাকে। সব বস্তুই কিছু সময় ভাল সার্ভিস দেয় এবং একসময় আবেদন ফুরিয়ে কম ফলদায়ক হয় বা অকার্যকর হয়। বাংলাদেশ রাজনীতিতে ভারতীয় হস্তক্ষেপের কৌশল পুনর্বিবেচনার সময় শেষ হয়ে যায়নি।বিশ্ববাণিজ্য এবং যোগাযোগের ভবিষ্যৎ ধারায় বাংলাদেশকে ভারত সহ অন্যান্যদের নিরাপদ মিত্রস্থল করেও ভারতের সাথে চুক্তিবদ্ধ থাকা যায়।
ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের জানা আছে নিশ্চয়ই, বাংলাদেশকে পরাধীন করে হলেও নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং লোভ চরিতার্থ করার সুযোগ সন্ধানী রাজনৈতিকচক্র যতই হোক সমাজে সাধারণ মানুষদের পছন্দের আর নেই। মানুষের অশান্তি ও দু;খ কষ্টের জন্যে দায়ী এই রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ভিন্ন চেহারা চরিত্র দেখার পর সমাজে তাদের প্রতি মানসিকতারও পরবর্তন ঘটেছে। মানুষদের নিরাপত্তাহানি কারা করেছেন তা ভূক্তভোগীরা আমাদের চেয়েও অনেকগুণ বেশী বুঝেন। তাই এরা সমাজে কোথাও নিরাপদ নেই। জনসাধারণের নিরাপত্তা কেড়ে নেবার বিনিময়ে যারা সম্পদের পাহাড় গড়েছে ও রাজনৈতিক ক্ষমতার বিনিময়ে যারা আপন মানুষদেরকে দূরে ঠেলেছেন তাদের উপর ভরসা করার পাশাপাশি বিকল্প থাকলে ভাল হয়।
ভারতীয় কোন কোন পত্রিকায় সম্পাদকীয় করে বলেছে, বাংলাদেশের মানুষ ভারতকে তাদের বন্ধু ভাবেন। জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিএনপির চেয়ে বেশী সমর্থন দেয়ার ওকালতিতে ছিলো সেই সম্পাদকীয়। সাংবাদিকতার পক্ষপাতিত্বের প্রতিযোগীতার এই যুগে দেশী মিডিয়া ও গোয়েন্দা সংস্থার দৃষ্টিভঙ্গির পক্ষে এই সম্পাদকীয়তে দোষ দিচ্ছিনা। এটা তাদের স্বাধীন পরামর্শ। তবে বাংলাদেশের মানুষের মনের প্রতিফলন তাতে ঘটেনি, ওকথাটা মনে করে দিলাম মাত্র। আওয়ামী লীগকে দিয়ে যেসব কাজ করানো হয়েছে তাতে প্রকাশ্যে কথা বলার স্পর্ধা হারিয়েছে দলটির নেতৃত্ব।বর্তমানে দলীয় নেতা ও মন্ত্রীদের অপরাধে নিজেদের মাথা নীচু করার পরিস্থিতিতে ভীষণ ক্ষুদ্ধ আওয়ামী লীগ সমর্থক ও কর্মীরা। ভারতীয় হাইকমিশন ও পত্রিকার সম্পাদকীয় গুলোতে সাধারণ মানুষের মনের প্রতিফলন ঘটাতে চাওয়া হয়নি। তারা এও বলছেন যে ভারতীয় পত্রিকার সম্পাদকীয়তে তাদের মতামত না নিয়েই তাদেরকে বিক্রয় করা হয়েছে। এটা বিশ্বাস করার যথেষ্ঠ যুক্তি আছে যে এসব চাকরিজীবিদের অনেকেই অনৈতিক অর্থলিপ্সায় কারো পক্ষে এসব করছেন। তদন্ত করেও দেখা যেতে পারে। দূরদর্শিতা রাষ্ট্রপরিচালনার জরুরী উপাদান।ভারতের কাছ থেকে তা আশা করা বাঞ্চিত।
আওয়ামী লীগের কোন নেতা কর্মী সমর্থক একবারও চায়নি ভারত বিএনপিকে ক্ষমতায় আনুক আওয়ামী লীগের বিপরীতে। তবে আওয়ামী লীগকে জনপ্রিয় করার পরিবর্তে জনবিচ্ছিন্ন করে দেয়ার জন্যে ভারতের কৌশলকে নিবেদিত আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী সমর্থক ও তাদের পরিবারগুলো দায়ী করছে। বিএনপির পক্ষে যতবেশী জনমত দেখা যায়, তার জন্যে দায়ী ভারত সরকারের বাংলাদেশ-নীতি এবং বাংলাদেশ সরকারের কার্যকলাপের বেশীরভাগ। তাই, চীন-পাকিস্তানপন্থী এড়িয়েও ভারত আরো বেশী নিরাপদ মিত্র গড়ার পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশের আপত্তির কারণ দেখিনা।
যারা ‘আমি না থাকলে রাষ্ট্র থাকলো কি গেলো কিচ্ছু যায় আসেনা’ রাজনীতি দেখিয়ে চলেছে তাদের পক্ষ নিয়ে ভারত সরকার বাংলাদেশে নিজের বিরুদ্ধে ক্ষোভের আগ্নেয়গিরি বানাচ্ছেন। এটা কারো জন্যে মঙ্গল নয়। অঞ্চলের শান্তির পক্ষেও বিবেচিত হয়না। মাথার উপর শত্রুর উদ্যত ছোবল ততোদিন নিরুপদ্রুত থাকে যতদিন রাগের মাত্রার সীমা থাকে। অপর দিকে শত্রু বেষ্টিত সীমান্তের এপারে বাংলাদেশ ভারতের বন্ধু থাকুক, এটা বাংলাদেশের জন্যেও শুভকর, ভারতেরও।
(লেখক আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাযোদ্ধা)।