বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সঙ্গঠন ঘোষণা সময়ের ব্যাপার মাত্র!
বিশেষ প্রতিনিধিঃ ভারতের আর এস এস, আফগানিস্তানের আল কায়েদা, তালেবান, ইরাকের বাথ পার্টির মত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আন্তর্জাতিকভাবে সন্ত্রাসী সঙ্গঠন হিসাবে চিনহিত হতে যাচ্ছে।
সম্প্রতি চেইঞ্জ ডট অরগ নামক একটি ওয়েবসাইটে পিপল অফ বাংলাদেশ নামে একটি আবেদন করা হয়; যেখানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক কালের সন্ত্রাসী তৎপরতা সহ বেশ কিছু পত্রিকার সংবাদ লিঙ্ক ও ছবি ও প্রামান্য চিত্র তুলে ধরা হয়। একটি সাইন আপ পিটিশন জুড়ে দেয়া হয় সেখানে। চেইঞ্জ ডট অরগে কোন পিটিশন জমা হলে এবং সেখানে দেড় লাখ সাক্ষর সম্বলিত হলে জাতিসঙ্ঘে সে বিষয়ে আলোচনা করার ক্ষেত্র তৈরী হয়।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সরকার সমর্থিত একটি সন্ত্রাসী সঙ্গঠন বিষয়টি বাংলাদেশে ব্যাপক পরিচিত হলেও আন্তর্জাতিকভাবে এই প্রথম বারের মত ঘোষনা হতে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে সাধারন ছাত্রদের ওপর হামলার কারনে দেশে বিদেশে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী সঙ্গঠন হিসাবে কুখ্যাত হয়ে উঠেছে, এর সাথে আবার জাতিসঙ্ঘে যুক্ত হয়েছে পিটিশন; সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এখন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সঙ্গঠন হিসাবে কুখ্যাত হয়ে উঠেছে।
নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় পিটিশন জমা দেয়ার মাত্র দুই দিনের মধ্যে দেড় লাখের বেশী সাক্ষর জমা হয়েছে। সকলের দাবী একটাই কুখ্যাত ছাত্রলীগকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সঙ্গঠন ঘোষনা করে আন্তর্জাতিকভাবে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হোক। এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে খুব শীঘ্রই আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
এছাড়া গত ১০ আগষ্ট বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিক সম্বমেলন করেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে একটি সন্ত্রাসী সঙ্গঠন দাবী করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন, রিজভী বলেন, কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন ন্যায্য ও বিবেক জাগানিয়া। তারা গোপন কিছু করেনি। তাদের আন্দোলন প্রকাশ্য ও জনসমর্থিত। কিন্ত তাদের আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও কাদের সাহেবরা প্রথম কয়েকদিন করুণামাখা কথা বলছেন।
সরকারে সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রায় সবাই বলেছেন কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের দাবি ন্যায় সঙ্গত। তাহলে এখন তাদের ওপর এই সহিংসতা কেন? আসলে আন্দোলনের প্রথম দিকে পড়–য়াদের আন্দোলন নিয়ে সরকারের সহানুভূতি ছিল ছলনামাত্র। মূলত এর অন্তরালে ছাত্রলীগ-যুবলীগ দিয়ে আন্দোলন দমানোর জনা প্রস্তুতি চলছিল। এর প্রমাণ দুইদিন পরেই দেখা গেল। অশুভ সরকারের স্বমুর্তিতে আত্মপ্রকাশ হওয়া দেখা গেল যখন হেলমেট পরিহিত আওয়ামী সশস্ত্র ক্যাডাররা ঝাঁপিয়ে পড়ে কচি শিশু-কিশোরদের ওপর। সেজন্যই ছাত্রলীগের আক্রমণকারীদের দেখতে গেলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আক্রান্ত শিশু-কিশোর ও সাংবাদিকদের দেখতে যাননি তিনি।
তিনি বলেন, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মিডিয়া, উন্নয়ন সহযোগী দেশ শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর ছাত্রলীগের এই সশস্ত্র হামলাকে সহিংস হামলা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ছাত্রলীগ আন্তর্জাতিকভাবে টেরোরিস্ট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রী ও ওবায়দুল কাদের সেই ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের বাঁচাতেই হাসপাতালে ভর্তি দেখিয়ে তামাশা করছেন। তাদের বাঁচানোর পাঁয়তারা করছেন। কিন্তু এরা রেহাই পাবে না। তাদের এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ভিডিও ও ছবি পরিচয়সহ দেশীবিদেশী গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আলোকচিত্রি শহিদুল আলমকে উচ্চ আদালত চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু সরকারী প্রতিষ্ঠান বিএসএমএমইউ সরকারের হুকুমে তাঁকে ভর্তি নেয়নি। এরা কতটা নিষ্ঠুর যে, একজন নির্যাতনে অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য উচ্চ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালেত আপিল করেছেন, যেন শহিদুল আলম হাসপাতালে সুচিকিৎসা না পান। ওই হাসপাতালে সরকারী নির্দেশের বাইরে কোন চিকিৎসা হয় না। ভিন্ন মতালম্বীদের সেখানে কোন সুচিকিৎসার সুযোগ নেই।
রিজভী আহমেদ বলেন, গতকাল সকল বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। বৈঠকে উপাচার্যরা সকল শিক্ষার্থীদের মুক্তি দাবি করেছে, কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী তা নাকোচ করে দিয়েছেন। ক্ষমতাপিপাসা কত তীব্র হলে শিক্ষামন্ত্রী মাসুম শিশু-কিশোরদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেন। ছাত্রলীগের সহিংস অপকর্ম ঢাকতে এবং সরকারের প্রতারণা আড়াল করতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর দমন-পীড়ণ চালানো হচ্ছে। অন্যদিকে দলীয় পান্ডাদের দিয়ে শিশু-কিশোরদের রক্ত নিঙড়ে নেয়ার পরেও ক্ষান্ত হয়নি সরকার। এখন চলছে র্যাব-পুলিশ দিয়ে বর্বর ক্র্যাক-ডাউন। রাজধানীর ১৮ থানায় ৩৫টি মামলা দেয়া হয়েছে, যে মামলায় অজ্ঞাতনামা হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের জড়িত করা হবে। ইতিমধ্যে ৪৫ জনকে আটকের কথা পুলিশ স্বীকার করেছে এবং ২২ জন রিমান্ডে আছে। নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের আটক করার পর কোমরে দড়ি বেঁধে রিমান্ডে নিয়ে পৈশাচিক নির্যাতন করা হচ্ছে। গতকাল সারাদেশ জুড়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এই অভিযান সরাসরি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর এক নির্মম আগ্রাসন।
তিনি বলেন, গতকাল বসুন্ধরাসহ ঢাকা মহানগরীতে হাজার হাজার সরকারি বাহিনীর সদস্যরা চিরুণী অভিযান চালিয়েছে। অরাজনৈতিক কিশোর-কিশোরী ছাত্র-ছাত্রীদের এই ন্যায্য আন্দোলনকে দমানোর জন্যই পুলিশ রাতভর সমগ্র বসুন্ধরা এলাকা আতঙ্কের জনপদে পরিণত করেছে।