মানুষ ভুলে যায়; অবুজ প্রাণী ভোলে না!- মতিউর রহমান লিটু
গত কয়েক সপ্তাহ আগে নিউইয়র্কে ঝড় হয়েছিল সকলের মনে আছে আশাকরি।
সেই ঝড়ের রাতে কাজের শেষে বাসায় ফিরছিলাম, রাট দুইটার একটু বেশি, বাসার খুব কাছে পার্কিং লটে পাখির আওয়াজ শুনতে পাই। কাছে গিয়ে দেখি ছোট একটি বচ্চা পাখি ঝড়ের কারণে বাসা থেকে পরে গিয়ে মৃত্যু প্রায় পরে আছে।
হাত দিতেই নড়ে উঠলো আর একটু ডাক দিলো। কিন্তু অবস্থা ভালো ছিলোনা, ভিজা গায়ে পাখিটির মৃত্যু প্রায় অবস্থা দেখে ফেলে আসতে মায়া লাগছিলো। হাতে করে বাসায় নিয়ে এলাম, ভালো করে মুছে বৌয়ের বানানো লিভিং রুমের ছোট্ট বাগানে তার জন্য কাগজ পেঁচিয়ে বাসার মতো বানিয়ে দিলাম। বাসায় ব্রেড ছিল মুখে পুড়ে পানি দিয়ে খাইয়ে দিলাম। সকালে বেশ তাজা মনে হলো, বৌ জোর করে আরেকটু ব্রেড খাইয়ে দিল।
অতঃপর কাজে যাওয়ার আগে প্রকৃতির জিনিস প্রকৃতিকে ফিরিয়ে দিতে পাখিটিকে বাসার পাশে একটি গাছের ডালে সুস্থ পাখিটিকে রেখে কাজে চলে যাই। বেশ কয়েকদিন পেরিয়ে গেলো; যদিও সামান্য সময় কিন্তু পাখিটির কথা বেশ মনে পড়ছিলো! আমার স্ত্রীও অনেক বার আলোচনা করেছিল পাখিটিকে নিয়ে।
আজ হঠাৎ জানালার এয়ারকন্ডিসনের কভারের উপরে পাখিটির মৃত্যু দেহ দেখে চমকে উঠলাম! হয়তোবা পাখিটি আবার অসুস্থ হয়েছিল বাঁচার জন্য একটু সহায়তা চাইতে এসেছিলো আমার জানালায় কিন্তু জানালায় নেট দেয়া থাকায় ঢুকতে পারেনি, বেশি সময় বাসায় থাকিনা তাই হয়ত টের পাইনি। বাসায় ফিরি রাতে, কখন যে পাখিটি এখানে এসে মৃত্যু বোরন করেছে বুঝতে পারিনি!
জীবনে কত মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছি মনে নেই- কেননা বিপদ ফুরিয়ে গেলে কেউতো আর মনে রাখেন বা খোঁজও নেয়না তাই মনে রাখতে চাইনা কখন কার বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছিলাম! কিন্তু আজ একটি বাস্তব শিক্ষা পেলাম মানুষ তাঁর উপকারীকে ভুলে গেলেও অবুজ প্রাণীরা ভুলে যায় না। অন্তত মৃত্যুর আগে হলেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের চেষ্টা করে! কি এক আজব দুনিয়া! আজকের এই শিক্ষাটায় পশু, পাখির প্রতি মমতা আমার আরো এক ধাপ বেড়ে গেলো- আল্লাহ সত্যিই মহান!