বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নিউইয়র্ক স্টেটের বিজয় দিবস উদযাপন
সাখাওয়াত হোসেন সেলিম: বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, নিউইয়র্ক স্টেট কমান্ডের উদ্যোগে গত ১৭ ডিসেম্বর উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জ্বীবিত হোক আগামী প্রজন্ম’ এ স্লোগানে নিউইয়র্কে ব্রঙ্কসের গোল্ডেন প্যালেসে এদিন সন্ধ্যা থেকে নানা আয়োজনে দিবসটি উদযাপন করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিল প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা, স্মৃতিচারণ, আলোচনা সভা সহ মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। অনুষ্ঠানের গ্র্যান্ড স্পন্সর ছিল মার্কস হোম কেয়ার এবং টাইটেল স্পন্সর ছিল পার্কচেস্টার ফ্যামিলি ফার্মেসী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আবদুল মতিন। পবিত্র গীতা পাঠ করেন মুক্তিযোদ্ধা রবীন্দ্র নাথ গোপ। পরিবেশন করা হয় বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীত। শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
নিউইয়র্ক স্টেট কমান্ডের কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা মুন্সী বশির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়েজুন নেসা।
নিউজ প্রেজেন্টার দিমা নেফারতিতি ও উদযাপন কমিটির সমন্বয়কারী মিয়া মো. দাউদ পরিচালনায় সভায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন বিজয় দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা, সদস্য সচিব মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুস সালাম, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, নিউইয়র্ক স্টেট কমান্ডের উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম মুন্সী, মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আবদুল মতিন, মুক্তিযোদ্ধা মঞ্জুর আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা মো. লিয়াকত আলী, মুক্তিযোদ্ধা মো. মজিবুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা আবু কায়সার চিশতি, মুক্তিযোদ্ধা রবীন্দ্র নাথ গোপ, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক, মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা আহাম্মদ ভূইয়া, মুক্তিযোদ্ধা সরকার আবদুল মজিদ, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম প্রমুখ।
অন্যদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, অনুষ্ঠানের গ্র্যান্ড স্পন্সর মার্কস হোম কেয়ারের ব্রঙ্কস শাখার ম্যানেজার আলমাস আলী, এটর্নী গোলাম মোস্তফা, স্টার্লিং ফার্মেসীর অন্যতম পরিচালক মোহাম্মদ আলী, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট মোহাম্মদ এন মজুমদার, আবদুস শহীদ, আবদুর রহিম বাদশা, ফরিদা ইয়াসমিন, সোলেমান আলী, নূরে আলম জিকু, জহুরুল ইসলাম, রেজা আবদুল্লাহ স্বপন, নতুন প্রজন্মের সালমা সুমি প্রমুখ।
নতুন প্রজন্মের সালমা সুমি কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়েজুন নেসাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন এবং উত্তরীয় পরান। মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরীয় পরিয়ে দেন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান শেখ আল মামুন, এস এম মইনুল ইসলাম, কাজী রবিউজ্জামান, আদনান সহ অন্যান্যরা।
অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, কমিউনিটির নের্তৃবৃন্দসহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী উপস্থিত ছিলেন।৪৯তম বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নিউইয়র্ক স্টেটের পক্ষ থেকে ‘অনিবার্ণ’ নামে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়।
পরে কাজী জাকির হোসেনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক পর্বে প্রবাসের জনপ্রিয় শল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। শিল্পীদের অসাধারণ পরিবেশনা দর্শকদের দারুণভাবে মুগ্ধ করে। শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন কৃষ্ণা তিথি, শারমিন তানিয়া, আনোয়ার হোসেন, সৈয়দ কামরুজ্জামান ফয়েজ, মাহবুব প্রমুখ। বাফার নতুন প্রজন্মের শিল্পীরাও অসাধারণ নৃত্য পরিবেশন করে। শিল্পীদের মনোজ্ঞ পরিবেশনা গভীর রাত পর্যন্ত দর্শক-শ্রোতারা উপভোগ করেন। জাকজমকপূর্ণ এ অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধারা ছাড়াও নিউইয়র্কের নানা শ্রেণী পেশার বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা মুক্তিযোদ্ধাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে অভিহিত করে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারীদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেন। তারা বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছেন। এজন্য পুরো জাতি তাদের আজীবন কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যে প্রত্যাশা নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিল সেই প্রত্যাশা আজো পূরণ হয়নি। দেশ স্বাধীনের ৪৮ বছরেও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস রচিত হয়নি। তারা নতুন প্রজন্মের জন্য মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস রচনার আহ্বান জানান। স্বাধীনতা যুদ্ধে যার যা অবদান তাকে সেই সম্মান দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস প্রণয়ণের আহ্বানও জানিয়েছেন তারা।
অনুষ্ঠানে নিউইয়র্ক স্টেট কমান্ডের কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা মুন্সী বশির উদ্দিন, উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা ও সমন্বয়কারী মিয়া মো. দাউদ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। নানাভাবে সহযোগিতাকারীদের প্রতি জানান বিশেষ কৃতজ্ঞতা।