জাগ ছাত্রদল থেকে ছাত্রদল – দীর্ঘ ৪১ বছরের পথ চলা >>আশিক ইসলাম
বিএনপির আবেগ,ভালোবাসা আর হৃদয় থেকে প্রানের গহীনে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।আক্ষরিক অর্থে সর্ববৃত্তে বিএনপির ভ্যানগার্ড হয়ে আছে ছাত্রদলের অবয়ব।আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অপরিমেয় স্বপ্নে বিমূর্ত হয়ে আছে তারুন্যের প্রতিভূ ছাত্রদল।তিনি চেয়েছিলেন, তরুন মেধাবী ছাত্ররা নিজেদের মেধা,মনন ও যোগ্যতা দিয়ে রাজনীতিকে ঋদ্ধ করবে। হয়ে উঠবে জাতির যোগ্য-সাহসী কান্ডারী।ছাত্র রাজনীতির মধ্যদিয়ে নিজেদেরকে অভিজ্ঞ,উপযুক্ত ও নিখাঁদ করে জাতীয় রাজনীতির বিকাশ ঘটাবে। তিনি বিশ্বাস করতেন, সৎ, সাহসী, শিক্ষিত, নিষ্ঠাবান পরীক্ষিত দেশপ্রেমী ছাত্র নেতাদের হাতে যখন এই বাংলাদেশ থাকবে, থাকবে জাতীয় রাজনীতি তখন বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য দ্রুত উন্নতির দিকে ধাবিত হবে। জাতীয় রাজনীতিতে আসবে কাংখিত গুনগত পরিবর্তন।আর এ লক্ষে-বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের জনক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী বুধবার গঠন করেন জাগদলের ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী গনতান্ত্রিক ছাত্রদল (জাগ ছাত্রদল)। আহমেদ মির্জা খবিরকে আহ্বায়ক করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়। যুগ্ন আহ্বায়ক ছিলেন- মিয়া শহীদ হোসেন, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, রশীদ চৌধুরী প্রমুখ। বিএনপি গঠিত হবার পর ‘জাগ ছাত্রদল’ বিলুপ্ত করে গঠন করেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারী সোমবার দেশের এক সন্ধিক্ষনে কাজী আসাদকে আহ্বায়ক করে গঠন করা হয় জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের প্রথম কমিটি। শুরুতেই এই কমিটি ব্যাক্তি আশির্বাদ দোষে দুষ্ট হয়। বলা হয় কাজী আসাদ তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কর্নেল মুস্তাফিজুর রহমানের নিজস্ব লোক ছিলেন। কমিটিতে তাদের নিজেদের পছন্দের বাইরে অন্যান্য জেলার তেমন কাউকে রাখা হয়নি। দ্রুতই ছাত্রদলের মধ্যে উপ কোন্দল শুরু হয়। পরবর্তিতে একই বছর আগস্ট মাসে ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে এনামুল করিম শহীদকে সভাপতি এবং গোলাম হোসেনকে সাধারন সম্পাদক করে একটি “মধ্যস্ততার” কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির মধ্যদিয়ে বিলুপ্ত হয় ভাসানী ন্যাপ পন্থি ছাত্র সংগঠন “জাতীয় ছাত্রদলের”। জাতীয় ছাত্রদলের সদস্যদের সাথে একই সময় ছাত্রলীগের একটি অংশ ছাত্রদলে যোগ দেয়। কথা ছিলো মধ্যস্ততার এই কমিটি ডিসেম্বর ১৯৭৯ নাগাদ ছাত্রদলের সম্মেলন করবে। কিন্তু তিন মাস পার হয়ে গেলেও কোন অগ্রগতি না থাকায় কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হয়।১৯৮০ সালের মাঝামাঝি সময়ে গোলাম সারোয়ার মিলনকে আহ্বায়ক করে ২১ সদস্যের একটি নুতন কমিটি গঠন করা হয়। সম্মেলনের জন্য এই কমিটিকে দেয়া হয় ৬মাস সময়। কিন্তু ৬ মাস পার হলেও কমিটি সম্মেলন করতে ব্যর্থ হয়। যদিও তারা ১৯৮১ সালের মে মাসের শেষ নাগাদ সম্মেলনের একটি আন অফিসিয়াল তারিখ নির্ধারন করেছিলো।
কিন্তু অত্যান্ত দুঃখ জনক ভাবে ৩০ মে ১৯৮১ সালে চট্টগ্রামে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শাহদাত বরন করেন। রাজনীতির নানা পট পরিবর্তনে থমকে দাড়ায় সম্মেলনের কার্যক্রম। পরবর্তিতে ৬ ডিসেম্বর ১৯৮১ সালে গোলাম সারোয়ার মিলনকে সভাপতি এবং আবুল কাশেম চৌধুরীকে সাধারন সম্পাদক করে ছাত্রদলের পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। এর পরের ইতিহাস সবার জানা।
‘শিক্ষা- ঐক্য- প্রগতি’ -ছাত্রদলের মূল নীতি। শুধু মাত্র এই স্লোগানেই কি মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে সকলে দলে দলে ছাত্র দলে যোগ দিয়েছিলো ? তা মোটেই নয়, শুরুতে ছাত্রদলের পথ ছিলো অনেক কন্টকাকীর্ন ,অমসৃণ,ত্যাগ-তিতিক্ষায় দুর্গম। আজ যে ছাত্রদল, ইতিহাস বলে তার বীজ রোপিত হয়েছিলো ১৯৭৭ সালের নভেম্বর মাসে চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউটের এক সভায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন আরিফ মইনুদ্দিন। পারিবারিক সম্পর্কে কর্নেল অলি আহম্মদ এবং তার ছিলো মামা-ভাগ্নে সম্পর্ক। আরিফ মইনুদ্দিনের মা বেগম তোফাতুন্নেসা ছিলেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য । তিনি ১৯৫৪ সালে পূর্ব বঙ্গ আইন সভার সদস্য এবং ১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এমন এক পরিবারে বেড়ে ওঠা আরিফ মইনুদ্দিনকে জিয়াউর রহমানের কাছে নিয়ে এসেছিলেন কর্নেল অলি। মায়ের অনুমতি নিয়ে আরিফ মইনুদ্দিন জিয়াউর রহমানের নুতন দল গঠন প্রক্রিয়ায় নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। তিনিই প্রথম জিয়াউর রহমানকে একটি স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, “ নো নো, আই ওয়ান্ট দেম স্টাডি, ডোন্ট ডিস্টার্ব দেম। ট্রাই টু অরগানাইজ দ্যা ইয়ুথ অফ ইওর এরিয়া হু ক্যান সার্ভ দ্যা কান্ট্রি।“
সিদ্ধান্ত হয় আরিফ মইনুদ্দিন চট্টগ্রামে একটি “ইয়ুথ অর্গানাইজেশন” গড়ে তুলবেন । ১৯৭৭ সালের নভেম্বর মাসে চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউটে জিয়াউর রহমানের ততকালীন উপদেষ্টা জামালউদ্দিন আহমেদ একটি সভা ডাকেন। সভায় আরিফ মইনুদ্দিন এবং ফজলে করিম চৌধুরী কিছু ছাত্র নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয় চট্টগ্রামে একটি র্যালী করার। সুষ্ঠুভাবে র্যালী আয়োজনে সে সময় যারা সহযোগিতা করেছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন- ছাত্র ইউনিয়ন ( মতিয়া চৌধুরী) আনোয়ারুল কাদরী, বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের ওসমান গনি, জাসদ ছাত্রলীগের সিরাজুল ইসলাম, তারেক আহমেদ চৌধুরী, শাহজাহান চৌধুরী প্রমুখ। পত্রিকার মতে ,প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষের বিশাল র্যালী হয়েছিলো। কিন্তু জিয়াউর রহমান সেই র্যালীতে আসেননি। এসেছিলেন, বিচারপতি আব্দুস সাত্তার ও তথ্য উপদেষ্টা শামসুল হুদা চৌধুরী।
গ্রামে গঞ্জে দেশের মানুষের মাঝে দেশ প্রেম জাগিয়ে তুলতে, কর্ম মুখর করে গড়ে তুলতে, মানুষের দুই হাতকে কাজে লাগাতে, গ্রাম গ্রামান্তরের মেঠো পথে জিয়াউর রহমান দুই হাত প্রসারিত করে হেটে চলেছেন। কিন্তু কেন চট্টগ্রামের র্যালীতে তিনি এলেন না তা ছিলো একটি বড় প্রশ্ন। বিভিন্ন জার্নাল ও বইয়ের আলোকে ধারনা পাওয়া যায়, র্যালীতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচুর ছাত্র যোগ দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান তখনও চান নি ছাত্র-ছাত্রীরা লেখা পড়া শেষের আগেই রাজনীতিতে আসুক। পরবর্তিতে মওলানা ভাসানী সহ অন্যান্যের পরামর্শে এবং মওলানা ভাসানী যখন তার দলের প্রতীক ধানের শীষ এবং তার ছাত্র সংগঠন “জাতীয় ছাত্রদল” উপহার স্বরূপ জিয়াউর রহমানের হাতে তুলে দেন তখন জিয়াউর রহমান সিদ্ধান্ত নেন ছাত্রদের জন্য বিএনপির একটি ছাত্র শাখা প্রতিষ্ঠার। ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারী অফিশিয়ালী ছাত্রদল জন্ম নেয়। কর্নেল মুস্তাফিজুর রহমান হন ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা। একই বছর ২৬ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভু-তত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ডঃ খন্দকার মোশারফ হোসেনকে বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক মনোনীত করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছত্রদলকে শুরুতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। তবে ছাত্রদলের যাত্রার আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে “জাগ ছাত্রদল” কিছুটা ক্ষেত্র তৈরী করে রেখেছিলো। জাগ ছাত্রদল তাদের প্রথম মিছিল করেছিলো সূর্যসেন হলের গেইট থেকে মধুর ক্যান্টিন পর্যন্ত। শ’ খানেক ছাত্রের সেই মিছিলের ওপর হামলা করেছিলো জাসদ ছাত্রলীগ। মাহমুদুর রহমান মান্না তখন জাসদ ছাত্রলীগের সবচেয়ে জনপ্রিয় ছাত্র নেতা। ইতিহাস বলে, জাগ ছাত্রদলের সেই মিছিলে আর্টস বিল্ডিঙের পাশ থেকে গুলি ছুড়ে মিছিল রত ছাত্রদের কয়েক জনকে আহত করা হয়। তবে থেমে যায়নি জাগ ছাত্রদল। বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা বেশ কদিন মিছিল করেছিলো। বিভিন্ন হলে প্রবেশের চেষ্টা করেছিলো এমন পরিস্থিতিতে জাগ ছাত্রদল বিলুপ্ত হয়ে, জাতীয় ছাত্রদল, বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন এবং ছাত্রলীগ ছেড়ে আসা কিছু ছাত্র নিয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের যাত্রা শুরু করে।
শুধু মাত্র জিয়াউর রহমানের ক্যারিস্মাটিক নেতৃত্বে মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে দলে দলে ছাত্র-ছাত্রীরা ছাত্রদলে যোগ দিতে থাকে। দ্রুতই গোটা বাংলাদেশের বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের মজবুত অবস্থান তৈরী হয়। মাত্র আড়াই বছরেই দেশের বিভিন্ন কলেজ বিশব্বিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদে ছাত্রদল নির্বাচিত হয় নিরঙ্কুশ ভাবে। ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল একটি আসনও পায়নি তবে ৫টি হলে কিছু আসনে জয় লাভ করে। ১৯৮১ সালে ডাকসুতে ১টি সদস্য পদে জয়ী হয়েছিলো । জগন্নাথ হল এবং ইকবাল হল ( বর্তমানে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ছাড়া সব কটি হলে কম-বেশী বিভিন্ন পদে বিজয়ী হয়েছিলো ছাত্রদল। ১৯৮২ সালে ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল এ জি এস, সমাজসেবা সম্পাদক সহ প্রায় প্রতিটি হল সংসদে মোট ৫৭ টি পদে জয় লাভ করে। পরবর্তিতে বেগম খালেদা জিয়ার আপোষহীন নেতৃত্বের গুনে অল্প সময়ের ব্যাবধানে ছাত্রদল দেশের সব থেকে বড় ছাত্র সংগঠনে পরিনত হয়। ১৯৯০ সালের এক পরিসংখানে দেখা যায় ডাকসু, বাকসু, ইউকসু, বামেকসু, ঢামেকসু সহ বাংলাদেশের ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদে ছাত্রদল একক ভাবে জয়ী হয় । ৩১৮টি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এবং কলেজে পূর্ন প্যানেলে জয়ী হয় ছাত্রদল ।
বেগম খালেদা জিয়ার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে , জিয়াউর রহমানের দেখা স্বপ্নের সিড়ি বেয়ে ছাত্রদল আজ অনেকটা পথ পাড়ি দিয়েছে। এর মধ্যে কিছু ছাত্র নেতা রাজনীতি থেকে হারিয়ে গিয়েছেন। কিছু নেতাকে আমরা হারিয়েছি চিরতরে। কিছু নেতা দল ছেড়ে অন্য দলে যোগ দিয়েছে। কিছু নেতা প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। আবার অনেকে বহুদূর এগিয়েছেন। মোট কথা শহর কিংবা প্রত্যান্ত গ্রামে যে যেভাবেই ছাত্রদল শুরু করেছেন এবং রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন তার ওপর ভিত্তি করে প্রায় প্রত্যেকে ধারাবাহিক ভাবে রাজনীতিতে প্রোমশন পেয়েছেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিসহ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম স্ট্যান্ডিং কমিটিতে যায়গা পেয়েছেন চট্টগ্রামের সাবেক ছাত্রনেতা, সাবেক এমপি – প্রতিমন্ত্রী, সালাউদ্দিন আহমেদ। ১৯৮৫-৮৬ সালের কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন শামসুজ্জামান দুদু। ডাকসু নির্বাচন, সাবেক এমপি, কৃষক দলের সাধারন সম্পাদক, বিএনপি কেন্দ্রীয় কনিটির ভাইসচেয়ারম্যানের মত বিভিন্ন পদ অলংকৃত করেছেন । ১৯৮৭-৯০ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন ডঃ আসাদুজ্জামান রিপন। তিনি যেমন তুখোড় বক্তা তেমনি ক্ষুরধার তার লেখনী। সচিত্র দেশকাল, প্রেসক্রিপশনের মত জনপ্রিয় পত্রিকা প্রকাশের পর ইংরেজী পত্রিকা “ দ্যা ডিপ্লোম্যাট এন্ড গ্লোবাল” এর সম্পাদক । বেশ কিছুদিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন তিনি। বর্তমানে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির বিশেষ সম্পাদক এবং বিএনপি ডিপ্লোম্যাট কোরের অন্যতম সদস্য।১৯৯০ থেক ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক ছিলেন আমান উল্লাহ আমান। ৮৭-৯০ পর্যন্ত সাধারন সম্পাদক। ৯০ সালে ডাকসুর ভিপি, অষ্টম জাতীয় সংসদ সদস্য, সাবেক স্বাস্থ্য ও শ্রম প্রতিমন্ত্রীর পর বর্তমানে তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা। ৯২ সালের শেষের দিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারন সম্পাদক হন এম ইলিয়াস আলী। সাবেক এমপি ইলিয়াস আলী বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থাকাকালীন ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল গুম হন। আজো তার সন্ধান মেলেনি।
ছাত্রদল প্রতিষ্ঠিত হবার পর ১৯৯২ সালের ১৬ মে প্রথম বার সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তবে ছাত্রদলের আভ্যন্তরিন গ্রুপিংয়ের শিকার হয়ে মাত্র ৪ মাস ১৬ দিন ছিলেন এই পদে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (রাকসু)সাবেক ভিপি, অনলবর্ষী বক্তা,এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে পঙ্গুত্ব বরণকারী দু:সাহসী ত্যাগী নেতা রিজভী আহমেদ ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ন মাহাসচিব এবং দলের দফতরের দায়িত্ব পালন করছেন।
১৯৯৩ থেক ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপিতর পদে ছিলেন ফজলুল হক মিলন। সাবেক এমপি এবং বর্তমানে বিএনপি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক।
১৯৯৬-এর শষের দিকে ছাদলের সভাপতির পদে আসেন শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সভাপতির পদে ছিলেন তিনি। ৩বারের সাবেক এমপি, বতমানে বিএনপির প্রচার সম্পাদক। একই কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন হাবীব-উন-নবী সাহেল। ২০০০ সালে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি। বর্তমানে বিএনপির যুগ্ন মহাসচিব এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিনের সভাপতি।হাবীব-উন-নবী সোহেল রংপুর থেকে বিএনপি এমপি প্রাথী ছিলেন। মরহুম নাসিরুদ্দিন পিন্টু ১৯৯৮-২০০০ পর্যন্ত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক এবং ২০০০ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ছিলেন কেন্দ্রীয় সভাপতি। সাবেক এমপি নাসিরুদ্দিন পিন্টু বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক এবং ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক থাকা অবস্থায় ৩মে ২০১৬ রাজশাহী কারাগারে মারা যান। ২০০৩-২০০৪ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তিতে সভাপতি ছিলেন আজিজুল বারি হেলাল।
২০০৫-২০০৯ পর্যন্ত শফিউল বারী বাবু ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি।
২০০৯-২০১২ পর্যন্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। বর্তমানে যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক। এ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আমীরুল ইসলাম খান আলিম। গত সংসদ নির্বাচনে আলিম সিরাজগঞ্জে বিএনপি থেকে নমিনেশন পেয়েছিলেন । ২০১২ থেকে ২০১৫ এর শুরু পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল কাদের ভুইয়া জুয়েল বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক। এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিব । পরবর্তি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাজীব আহসান এবং সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান এখন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা। নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন ফজলুর রহমান খোকন এবং ইকবাল হোসেন শ্যামল।
অতীতে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সভাপতি-সেক্রেটারী পদে ছিলেন এমন কয়েক জনের কেউ রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় , কয়েক জন মারা গিয়েছেন, কেউ দল ছেড়েছেন,কেউবা দেশ ছেড়েছেন । শুধু মাত্র কেন্দ্রীয় ছাত্র নেতাই নন, মহানগর,জেলা-উপজেলা, থানা পর্যায়ে ছাত্রদল করে মন্ত্রি-এমপি হয়েছেন অনেকে । ওয়ার্ড কমিশনার, উপজেলা – ইউনিয়ন, জেলা চেয়ারম্যান হয়েছেন।
২০১৮ সংসদ নির্বাচনের বিএনপি প্রাথী তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যায় প্রত্যক্ষ ছাত্রদল করা ৯২ জন নমিনেশন পেয়েছিলেন। বর্তমানে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির বিশাল একটি অংশজুড়ে রয়েছেন সাবেক ছাত্রদল নেতারা। যুবদল, সেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, জাসাস, শ্রমিক দল, কৃষক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ।
তবে এ কথা সত্যি, বিগত কিছুদিন হয় ছাত্রদল তার আগের গৌরব, সংগ্রামী মর্যাদা কিছুটা হারিয়েছে।এর জন্য প্রশাসন, আওয়ামীলীগ এবং ক্যাম্পাস ভিত্তিক অপরাজনীতি যেমন দায়ী তেমনি কিঞ্চিত হলেও দায়ী ছাত্রদলের অনৈক্য।অভ্যান্তরীন গ্রুপিং।পকেট কমিটি।
তারেক রহমান বিশ্বাস করেন , যে কোন ছাত্র সংগঠন তার মূলদলের নেতা তৈরির রিক্রুটিং সেন্টার হিসাবে কাজ করে। ছাত্রদল তার ব্যাতিক্রম নয়। শুরুতেই যদি যোগ্য নেতৃত্বকে নার্সিং করা যায় তবে দেশ আগামীতে পাবে যোগ্য নেতা। আর এ কথা মাথায় রেখে গত ১৮ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্রদলের ৬ষষ্ঠ কাউন্সিল হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনের একটি অবাধ পরিবেশ তৈরী করে দিয়েছেন। অছাত্র, বিবাহিত, ৩৫ উর্ধ ছাত্র নেতাদেরকে দলের অন্যান্য শাখায় দায়িত্ব দিয়ে সকলের গ্রহন যোগ্য প্রকৃত ছাত্র প্রতিনিধিদের হাতে তিনি ছাত্রদলের নেতৃত্ব দিতে চান। এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃস্টির অপচেস্টা করেছিল দলের একটি ক্ষুদ্র অংশ, কিন্তু তারেক রহমানের দৃঢ়তার সামনে শেষ পর্যন্ত তারা রণেভঙ্গ দিতে বাধ্য হয়।তারেক রহমানের বিশেষ দূরদর্শীতা আর বিচক্ষন রাজনৈতিক ক্যারিশমায় ছাত্রদলে ফিরে আসছে টগবগে তারুন্যের জোয়ার। তৃনমূলের সাথে নিবিড় সংযোগ ছাড়া ছাত্রদলের নেতাদের রাজনীতি করা কঠিন করে দিলেন তারেক রহমান।
প্রকৃত ছাত্রদের হাতে আজ ছাত্রদলের দায়িত্ব। আশা করা যাচ্ছে নুতনদের হাত ধরেই ছাত্রদল তার সংগ্রামী সোনালী অতীত দ্রুত ফিরে পাবে ইনশাআল্লাহ্ ।
শুভ হোক ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী।ছাত্রদল আবার ফিরে আসুক রাজপথে সেই সংশপ্তক হয়ে দ্রোহের তীব্রতা নিয়ে।তাদের হাতেই বন্দী মায়ের মুক্তি হোক,আন্দোলন-সংগ্রামে মুক্ত হোক গণতন্ত্র।
(লেখকঃ সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক সহকারী প্রেস সচিব, সাবেক ছাত্রদল কর্মী)