বিশ্বের প্রথম জিন-সম্পাদিত শিশুর জন্ম, জেলে গেলেন বিজ্ঞানী
চীনে পৃথিবীর প্রথম সংশোধিত জিন নিয়ে জন্মিয়েছে দুই যমজ শিশু। ল্যাবরেটরিতে এই জিন সংশোধন করেছেন যে বিজ্ঞানী তাঁকে তিন বছরের জেল দিয়েছে আদালত। ওই বিজ্ঞানী জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জিন এডিটিং পদ্ধতিতে শিশুটির জিনগত বৈশিষ্ট্য বদলে দিয়েছিলেন।
হে জিয়ানকুই নামের ঐ বিজ্ঞানীর বিরুদ্ধে অবৈধ চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগের অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি কিছুদিন আগে দাবি করেছিলেন, এইডস-সুরক্ষিত জিন নিয়ে জন্মেছে ঐ যমজ শিশুরা। তিনি বিতর্কিত উপায় অবলম্বন করে তাদের জিন সংশোধন করে এমনটা ঘটিয়েছেন।
অধ্যাপক জিয়ানকুই দাবি করছেন, সম্পাদনার মাধ্যমে ডিএনএতে পরিবর্তন আনার কারণে এই দুই যমজ শিশুর ভবিষ্যতে এইচআইভিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অথচ তাদের বাবা এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন।
তিনি জানান, ক্রিসপার/কাস৯ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিএনএ সম্পাদনা করা হয়েছে। তবে অধ্যাপক জিয়ানকুই-এর দাবি সঠিক কিনা তা এখনো যাচাই করে দেখা হয়নি।
তিনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেন, সেই বিশ্ববিদ্যালয় এক বিবৃতিতে তাঁর কাজের সমালোচনা করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে অবিলম্বে তদন্ত শুরুর ঘোষণাও দিয়েছে তারা৷ অধ্যাপক জিয়ানকুই এর কাজ ‘অ্যাকাডেমিক নৈতিকতা ও নীতিমালার মারাত্মক লঙ্ঘন’ বলে ঐ বিবৃতিতে মন্তব্য করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, গত ফেব্রুয়ারি থেকে বিনা বেতনে ছুটিতে ছিলেন অধ্যাপক জিয়ানকুই।
চীনের প্রায় ১০০ বিজ্ঞানীও এক যৌথ বিবৃতিতে অধ্যাপক জিয়ানকুই-এর কাজের সমালোচনা করেছেন। ভবিষ্যতে এমন উদ্যোগ ঠেকাতে আরো শক্ত সরকারি নীতিমালা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তাঁরা।
সোমবার চীনের আদালত গবেষক হে জিয়ানকুইকে তিন বছরের জেল দেয়। তাঁর গবেষণা দলের দুই সহকারীকেও কম মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে।
‘এই তিনজনের এমন ঔষধ দেয়ার এখতিয়ার ছিল না। তাঁরা খ্যাতি ও অর্থের জন্য বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও চিকিৎসাসংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করেছেন,’ রায়ে এমনটা বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে চীনের জিনহুয়া নিউজ এজেন্সি।
রায়ে আরো বলা হয়, ‘তাঁরা বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও চিকিৎসাসেবার নৈতিক সীমা লঙ্ঘন করেছেন।’
বিজ্ঞানী জিয়ানকুই ২০১৮ সালে তাঁর এই গবেষণা নিয়ে একটি ইউটিউব ভিডিও প্রকাশ করেন। সেই ভিডিওতে তিনি বলেন যে, ‘সিআরআইএসপিআর’ নামের একটি জিন সিকোয়েন্স ব্যবহার করে তিনি বাচ্চা দুটির জিন সংশোধন করেন। কারণ, তাদের বাবার শরীরে এই ভাইরাস রয়েছে।
‘তাদের বাবা-মা ‘ডিজাইনার’ শিশু চান না,’ ভিডিওতে বলেন তিনি। ‘তাঁরা এমন শিশু চান যে কিনা কোনো অসুখে ভুগবে না, যা চিকিৎসাবিজ্ঞান করতে পারে। আমি জানি, আমার কাজ বিতর্কিত হবে। কিন্তু আমি জানি, পরিবারগুলোর এই প্রযুক্তি দরকার এবং আমি সেজন্য সমালোচনা শুনতে রাজি আছি।’
তবে বিশ্বের বিজ্ঞানীরা এখনো জিন সংশোধন বা পরিবর্তনকে পুরোপুরি গ্রহণ করেননি।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন-এর জিনতত্ত্বের অধ্যাপক জয়েস হার্পার এই গবেষণাকে বিপজ্জনক বলে আখ্যায়িত করেছেন।
উল্লেখ্য, জিন এডিটিংয়ের মাধ্যমে উত্তরাধিকার সূত্রে বাবা-মা’র শরীর থেকে আসা রোগ থেকে মুক্ত করা যায় নবজাতক শিশুকে। তবে প্রক্রিয়াটি বিতর্কিত। তাই যুক্তরাষ্ট্রে শুধু গবেষণাগারে এই কাজ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে।