কাঙ্ক্ষিত দাম নেই, জমিতেই পড়ে থাকছে ধান
যশোরের শার্শায় চাষিদের মধ্যে আমন ধান ঘরে তুলতে চরম অনীহা দেখা যাচ্ছে। হতাশায় আগামী ইরি-বোরো মৌসুমে ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে চরম শঙ্কায় রয়েছে কৃষক। বাজারে চালের দাম বেশি থাকায় ও ধান বিক্রিতে কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় অনেক কৃষকই এখনও জমিতেই ফেলে রেখেছে তাদের কষ্টার্জিত ফসল।
চলতি বছর কারেন্ট পোকার আক্রমণে ফলন যেমন কমে গেছে তেমনি ন্যায্য দাম না পাওয়ায় চরম লোকসানের কবলে পড়েছেন কৃষকরা। গত ইরি-বোরো মৌসুমে লোকসানের পর এবার আমন আবাদেও লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। বাজারে চালের মূল্য চড়া থাকলেও ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় চরম ক্ষুব্ধ ও হতাশা প্রকাশ করেছে সাধারণ কৃষকরা।
সরেজমিনে শার্শার কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নতুন ধান কৃষক ঘরে তুললেও অনেকে তা কেটে মাঠে এখনও ফেলে রেখেছে। বাজারে নেই ধানের দাম, উঠছে না তাদের উৎপাদন খরচও। যার ফলে অনেক গরিব চাষী তাদের শত কষ্টে অর্জিত সোনার ফসল মাঠেই কেটে বেঁধে ফেলে রেখেছে।
শার্শার কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আসলাম শেখ বলেন, চলতি আমন মৌসুমে ২ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। বিঘাপ্রতি ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা উৎপাদন খরচ এবং ধান হয়েছে ২০ মণ হারে। ধান ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দামে বাজারে বিক্রি হওয়ায় উৎপাদন খরচও বাঁচছে না। ইসলামপুর গ্রামের চাষি শাহিন বলেন, ধান উৎপাদনে যে খরচ হয়েছে, দাম সে রকম পাইনি। বাজারে চাল কিনতে গেলে দাম বেশি আর ধান বিক্রি করতে গেলে দাম নেই। প্রতিবিঘা জমিতে ধান কাটা, আঁটি বাঁধা থেকে শুরু করে বাড়িতে নিয়ে মাড়াই করা পর্যন্ত খরচ দিতে হচ্ছে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। আবার সারের দাম বেশি। এভাবে চলতে থাকলে আমরা চাষ করব কিভাবে। সবাই বলে বাংলাদেশ নাকি আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। কিন্তু আমাদের কৃষকদের তো কোনো উন্নয়ন হলো না আজও। বাপ-দাদার আমলের থেকেও এখন আমাদের খারাপ অবস্থা। সরকার যদি ধানের দাম একটু বাড়িয়ে দেয় তাহলে কৃষকরা বেঁচে যেত।
ধান ব্যবসায়ী স্বপন হোসেন বলেন, বাজার থেকে ধান কিনে মিলারদের কাছে বিক্রি করি। কিন্তু সেখানেও এবার ধান দিতে পারছি না ঠিকমতো। মিলাররা আমাদের বলছে চাল বিক্রি নেই, চালের টাকা পাচ্ছি না। বাধ্য হয়েই কম দামে ধান কিনতে হচ্ছে।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল জানান, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় পর্যাপ্ত জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৯৮ ভাগ জমির ধান কাটাও শেষ হয়েছে। কারেন্ট পোকার আক্রমণে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে বাজারে একটু বেশি দাম পেলে চাষিদের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে যেত।