প্রচণ্ড শীতে ২২৬ এতিম নিয়ে বেকায়দায় বাঘার শমেস ডাক্তার
আমানুল হক আমান, বাঘা (রাজশাহী): ওরা আশ্রয়হীন এতিম, এদের মধ্যে কারো বাবা নেই, কারো বা নেই মা, আবার অকালে অনেকেই হারিয়েছে বাবা-মা দুইজনকেই।
একেক জনের জীবনের গল্প একেক রকম। এদের পরিবারের কোনো খোঁজ নেই, এদের মধ্যে কেউ পরিত্যক্ত আবার কেউ দুর্ভাগ্যক্রমে পরিবার বিচ্ছিন্ন মানুষ।
তাদের পরিবারও নেই, আনন্দও নেই। এতিমখানায় তাদের আসল ঠিকানা। তারা আনন্দ করতে চায়, স্নেহ ভালোবাসার মধ্যে বেড়ে উঠতে চায়। বাড়ি যেতে চাইলেও বাড়িই তাদের এতিমখানা।
রাজশাহী শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার পূর্বে পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে বাঘা উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নের সরেরহাট গ্রাম। এ গ্রামে গড়ে উঠেছে ছোট্ট একটি এতিমখানা। নাম দেয়া হয়েছে সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদন। বর্তমানে বৃদ্ধ ও এতিমের সংখ্যা ২২৬ জন।
৩১ বছরে পৈতৃক ১৭ বিঘা জমি বিক্রয় করে এতিমদের তিনি রক্ষা করে চলেছেন। এতে দেশের মানুষের ভালোবাসা ছাড়া কি-ই-বা পেয়েছেন। পেয়েছে কেবল একটি খেতাব ‘সাদা মনের মানুষ’ তাতে তো আর এতিমদের পেট ভরে না।
কিন্তু চলমান শীত নিয়ে বেকায়দার রয়েছে এতিমদের নিয়ে। তিনি দেশবাসীর কাছে আবেদন করেন এতিমদের বাঁচানোর জন্য।
জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন সরকার শমেস ডাক্তার প্রথমে স্ত্রী মেহেরুন্নেসার মোহরানা বাবদ অর্থে ১২ শতাংশ জমি ক্রয় করে চালু করেন এতিমখানা। আয় বলতে মেহেরুন্নেসার সেলাইয়ের কাজ ও শমেস ডাক্তারের চিকিৎসা থেকে আসা কিছু অর্থ।
এতিমদের রক্ষার্থে আশ্রয়হীনদের ব্যবস্থা করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি বাড়ির ভিটা বিক্রি করে নিজেই পরিবার নিয়ে হয়ে পড়েন গৃহহীন। তিনি পল্লী চিকিৎসক পরিবার নিয়ে পড়েন বিপাকে। শেষ পর্যন্ত স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে উঠে আসেন এতিমখানায়।
স্ত্রী মেহেরুন্নেসা শিশুদের দেখাশুনা ও তাদের জন্য রান্না করেন তিন বেলা। এখন মেহেরুন্নেসা সেখানকার একজন সেবিকা। বিনিময়ে দুটো খেতে পান মাত্র।
বর্তমানে ২২৬ জন বৃদ্ধ ও এতিমসহ তারা স্বামী-স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সবাই এক সঙ্গে দিন-রাত কাটান।
এ বিষয়ে এতিমখানার এতিম মজিবর রহমান বলেন, আমার বয়স যখন ৪ বছর, এ সময় এখানে রেখে যাওয়া হয়েছে। এখন আমি ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের বাণিজ্যিক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আমার এটাই ঠিকানা। এখানকার পরিচালক আমার বাবা-মা। তিনিই আমার সব খরচ বহন করেন। তবে কোনো কোনো সময়ে বাড়িতে এসে লেবারের কাজ করি। এগুলো দিয়ে ও পরিচালক বাবার দেয়া টাকা দিয়ে কোনোমতে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি।
আরেকজন রকি ইসলাম। তাকে ৩ বছর বয়সে এখানে রেখে যাওয়া হয়েছে। সে এখন স্থানীয় স্কুলে দশম শ্রেণির ছাত্র। সেও কোনো কোনো সময় লেবারের কাজ করে ও পরিচালকের সহযোগিতায় লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে।
পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন সরকার শমেস ডাক্তার বলেন, নিজের স্ত্রীর, ছেলে-মেয়ের, সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিগতভাবে যে সহযোগিতা পাই, তা দিয়ে ছয় মাস চলে। আর ছয় মাস বিভিন্ন দোকানে বাকি রাখতে হয়। বছর শেষে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা ঋণের মধ্যে থাকতে হয়।
তিনি বলেন, সরকার ও হৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছ থেকে সহযোগিতা পেলে অন্তত এই ঋণ থেকে মুক্তি পেতাম।