“আমরা যেমন আছি তেমন রবো- বদলে যাবো না! >>মতিউর রহমান লিটু
বাংলাদেশের মানুষ দুটি ধারায় বিভক্ত- কথিত বামপন্থী অথবা ডানপন্থী। নিরপেক্ষ মানুষ বলতে তেমন কেও না থাকলেও নিরপেক্ষতার আড়ালে সুবিধাবাদী রয়েছে প্রচুর!
মূলত: ধর্মে বিশ্বাস করেনা (নাস্তিক), একটু উগ্র টাইপের, সমাজের নিয়ম শৃঙ্খলার মেনে চলার অভ্যাস নেই, গোয়ার্তামী করে চলা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বা নিজের স্বার্থ বিরোধী কোন কাজে শারীরিক প্রতিবাদ গড়ে তোলার সাহসিকতা নিয়েই বাম পন্থীরা মোটামুটি সঙ্গবদ্ধ। এদের সব কিছুতে উগ্রতা থাকলেও একটা ক্ষেত্রে এদেরকে বাহবা দিতেই হয় তা হলো তাদের নেতা বা নেত্রীর প্রতি অন্ধভক্তি। দেখবেন অধিকাংশ বামপন্থী নেতাদের কর্মী বাহিনী এতটাই “লয়াল” থাকেন যে নেতার কথায় জীবন উৎসর্গ করতেও প্রস্তুত। তাই তাদের জনসমর্থন কম হলেও রাজনীতিতে টিকে থাকার সক্ষমতা থাকে বেশি।
অপরদিকে ডানপন্থী নেতারা খুব চিন্তাশীল, কিছুটা ধর্মভীরু, গুরু গম্ভীর, অনেকটাই হিসেবে করে কথা বলেন, পাছে লোকে কিছু বলে আতংকে তারা সর্বদা আতংকিত থাকেন। সমাজের আমূল পরিবর্তনের চেয়ে রক্ষণশীল হয়ে যেমন সমাজ তেমন ভদ্র সুশীল ধরে রাখতেই তাদের প্রচেষ্টা থাকেন সর্বাধিক! এরাই নিজ নেতার ভুল ত্রুটি খুঁজে বেড়াতে বেশ ওস্তাদ! নিজেরা সাহস নিয়ে ভাঙা গড়ার নেতৃত্ব দিতে না পারলেও নীতি বাক্য শুনিয়ে কর্মীদের দমিয়ে রাখতে বড্ড পারদর্শী ডানপন্থী মানুষ গুলি। ধর্মের দোহাই দিয়ে যেমন আছি তেমনি ভালো নীতিতে স্বাবলম্বী হওয়ার চিন্তা এদের খুব বেশি কাজ করে। ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ নীতিতে বেশ পারদর্শী এই শ্রেণীর নেতা কর্মীরা। এক কথায় সমাজের বুজুর্গ হিসাবে পরিচিতি পেতে এদের বেশ প্রতিযোগিতার মোকাবেলা করতে হয়। “ভদ্র- বেশ ভদ্র” নাম ডাক শুনতে খুব ভালো বাসেন ডানপন্থী এই বুজুর্গ ব্যক্তিবর্গরা!
আচমকা কিছু কথা বলতে গিয়ে অনেক কথাই বলে ফেলেছি। চল্লিশোর্ধ বয়সের অভিজ্ঞতার আলোকে আমার এই লেখা কাউকে উদ্দেশ্য করে নয় বরং সামগ্রিক সমাজের একটা চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র। তাই ব্যক্তিগতভাবে না নিয়ে লেখাটাকে স্বাভাবিকভাবে নিলেই খুশি হব!
প্রবাসের চিত্র ভিন্ন হলেও এখানে দেশপ্রেমের বড্ড ছড়াছড়ি! আমরা বাংলাদেশীরা বিদেশে এলে বেশ দেশপ্রেমিক হয়ে পড়ি; আসলেই আমরা দেশপ্রেমিক- এটা লোক দেখানো নয়! যেমন বিদেশে এসে প্রথমেই খুঁজে বেড়াই দেশি ছোঁয়ায় বাংগালি খাবার কোথায় পাওয়া যাবে? বাঙালি গ্রোসারি কোথায় পাওয়া যাবে? কোথায় পাওয়া যাবে বাঙালি আড্ডাখানা? একটা বাঙালি পত্রিকা হাতের কাছে পেলে বেশ আনন্দ লাগে। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই সমাজ সমিতি গড়ে তুলি – ঐক্যের নামে অনৈক্যের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করতেই আমাদের আনন্দ বেশী!
বিদেশে আমরা বেশ পরিশ্রমী এবং সততার পরিচয় দিয়ে থাকি অথচ বাংলাদেশের মাটিতে এই একই ব্যক্তির চরিত্র হয়তোবা ভিন্নতায় ভরপুর থাকে! বিদেশের দৈনন্দিন কাজে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে ঢাকা এয়ারপোর্টে নামলেই কোথায় থাকে লাইন আর কোথায় কি? সে যেন জন্মসূত্রে পাওয়া ধাক্কাধাক্কি করতেই বেশি পছন্দ করে! আসলেই আমরা বাংলাদেশী বাঙালি, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য বলে কথা! মনে মনে আমাদের দেশপ্রেম থাকলেও হিংসা আমাদের ঐতিহ্য!
বিদেশে বাঙালি কমিউনিটির মাঝে একটি বাংলাদেশী গ্রোসারি দোকান আর ইন্ডিয়ান গ্রোসারি দোকান থাকলে অধিকাংশ দেশপ্রেমিক বাঙালিরাই ইন্ডিয়ান দোকানে গর্বের সাথে বাজার করেন। অথচ কোন ইন্ডিয়ানকে দেখিনি তার কমিউনিটিতে বাংলাদেশী দোকানে বাজার করতে- যদি কোন ইন্ডিয়ান দোকানের সুবিধা না থাকে থাহলে হয়তবা কালে ভাদ্রে ইন্ডিয়ানরা বাঙালি দোকানে বাজার করেন।
ফ্যাশনের দোকানে বাংলাদেশী ভালো মানের পণ্য থাকলেও মহিলাদের প্রথম পছন্দ ইন্ডিয়ান দোকানের ঝাকানাকা পোশাক, মূলত ইন্ডিয়ার পণ্য খরিদ করতে পারাই বেশ আনন্দদায়ক অনুভূতির! ভারতীয় কোন ব্যক্তি বাংলাদেশী দোকানে এসে কাপড় কিনেছে এমন দৃশ্য কখনো আমার চোখে পড়েনি!
অপরিচিত একজনকে দেখে বাংলাদেশী ব্যবসায়ী পরিচয় জানার সাথে সাথে প্রথমেই নিজেকে তার চেয়ে বড় ব্যবসায়ী বা বেশি প্রতিষ্ঠিত ভাব দেখানো আমাদের ঐতিহ্য! নিজের সফলতা কতটুকু সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই কিন্তু অন্যের ব্যর্থতা ল্যান্টার্ন জ্বালিয়ে খুঁজতে থাকা আমাদের ঐতিহ্য!
আপন কারো উপকার নিয়ে নিজেকে দাঁড় করানোর পরেই আপন ব্যক্তিটিকে সমাজের চোখে নিজের অধীনস্ত দেখানোর কৌশল আবিষ্কার করা আমাদের বৈশিষ্ট! উপকারীকেই সমাজের চোখে ছোট করতে পারাটাই সফলতা!
বিদেশী কোম্পানির দেয়া ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করতে মরিয়া হয়ে যাই কিন্তু প্রতিবেশীর থেকে উধার নেয়া অর্থ দিতে সমর্থ হইনা! এটাই আমাদের চলমান চরিত্র! চলবে অনতিকাল!
আমাদের লক্ষ গুনের মাঝে হাডুডু খেলার মতো অন্যকে টেনে নিচে নামানোর চিন্তা চেতনা অবিনশ্বর! চেষ্টা করেও কেও বদলাতে পারবেনা। চেষ্টা শুধু চেষ্টাই থেকে যাবে, সামাজিক এই ‘গ্রিড লক’ থেকে হয়তবা কোন দিন মুক্তি পাবনা. তারপরেও আশা ছেড়ে দেই না- হয়তোবা কোন একদিন আমরা হিংসা আর অহিংসার মাঝে সেতুবন্ধন দেখতে পাবো কিন্তু সেদিন যদি বেঁচে না থাকি?………..!!!!!!!!