ভারতের ভার নিতে ৯০০ কোটি টাকার সরঞ্জাম কিনবে চট্টগ্রাম বন্দর
ভারতের ব্যবহার উপযোগী করতে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নতুন বছরের শুরুতে বৃহৎ বাজেটের যন্ত্রাংশ কিনতে যাচ্ছে বন্দর। প্রায় ৯০০ কোটি টাকার বাজেটে ১০৪টি ইক্যুইপমেন্ট (যন্ত্রাংশ) কেনা হচ্ছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরকে আরও গতিশীল করতে এবং ভারতকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুবিধা দেওয়ার জন্য এসব যন্ত্রাংশ ক্রয় করা হচ্ছে। এজন্য নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে নীতিগত অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করা হবে। এর মধ্যে ৪টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেনের জন্য খরচ হবে প্রায় আড়াশ কোটি টাকা। এ ৪টি গ্যান্ট্রি ক্রেন যুক্ত হলে এনসিটিতে কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে গ্যান্ট্রি ক্রেনের চাহিদা শতভাগ পূরণ হবে। এছাড়া রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্রেন (আরটিজি) রয়েছে ১১টি।
‘চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড এবং টার্মিনালের জন্য প্রয়োজনীয় ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ’ প্রকল্পে কেনা হচ্ছে এ ১০৪টি ইক্যুইপমেন্ট। আগে চীন থেকে অনেক ইক্যুইপমেন্ট কেনা হলেও এবার ইউরোপ থেকে আনা হবে এসব যন্ত্রপাতি।
নতুন যন্ত্রপাতির মধ্যে কী গ্যান্ট্রি ক্রেন ৪টি, রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্রেন (আরটিজি) ১১টির মধ্যে ৫টি সিসিটি ও ৬টি এনসিটিতে ব্যবহার হবে। স্ট্র্যাডেল ক্যারিয়ার (৪ হাই) ২১টি, স্ট্র্যাডেল ক্যারিয়ার (২ হাই) ৬টি, রীচ স্টেকার (লোড) ৪টি, কন্টেইনার মোভার ২টি, ভেরিয়েবল রীচ ট্রাক (৪৫ টন) ৪টি, মোবাইল ক্রেন (১০০ টন) ২টি, মোবাইল ক্রেন (৫০ টন) ২টি, মোবাইল ক্রেন (৩০ টন) ২টি, মোবাইল ক্রেন (২০ টন) ১২টি, মোবাইল ক্রেন (১০টন) ২৩টি, লগ হ্যান্ডলার-স্টেকার ২টি, ফর্ক লিফট ট্রাক (২০ টন) ৪টি, ম্যাটেরিয়াল-মাল্টি হ্যান্ডলার (৩৫ টন) ১টি, লো বেড ট্রেইলার ২টি, হেভী ট্রাক্টর-পাওয়ার ২টি মোট ১০৪টি যন্ত্রাংশ কেনা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়াল এডমিরাল জুলফিকার আজিজ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, নতুন এসব যন্ত্রাংশ সংযোজন হলে চট্টগ্রাম বন্দর আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে। বন্দরের পণ্য দ্রুত খালাসের জন্য ইক্যুইপমেন্ট খুবই জরুরি। তাই বন্দরের উন্নয়নের জন্য বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেই সাথে সংযোজন করা হচ্ছে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আরও কিছু যন্ত্রপাতি দরকার ছিল। তাই আমরা বৃহৎ বাজেটের ক্রয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এসব যন্ত্রপাতি পুরোপুরি পেতে আরও কিছু দিন সময় লাগতে পারে। হয়তো যন্ত্রগুলো কয়েক ধাপে বন্দরের বহরে যুক্ত হবে।
গত বছরের জুলাই মাসে চীন থেকে ক্রয় করা চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেন আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে দুই দফায় তিনটি করে ছয়টি গ্যান্ট্রি ক্রেন যুক্ত হয় বন্দরের বহরে । এরপর ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এটিই হবে বন্দরের যন্ত্রাংশ জন্য বৃহৎ বাজেটের ক্রয় প্রকল্প।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) আমিনুল ইসলাম বলেন, চীন থেকে ক্রয় করা গ্যান্ট্রি ক্রেনে বিভিন্ন সমস্যা পাওয়া যাচ্ছে। তাই আমরা আর চীন থেকে কোন ইক্যুইপমেন্ট ক্রয় করবো না। এবার আমরা ইউরোপের দিকে যাবো।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, কন্টেইনার উঠা-নামার সবচেয়ে কার্যকর ইক্যুইপমেন্ট হলো‘কী গ্যান্ট্রি ক্রেন’। চট্টগ্রাম বন্দরে গত ১৫ বছর ধরে ছিল মাত্র চারটি। এই চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেনের মধ্যে দুর্ঘটনার কারণে প্রায় দুই বছর অচল ছিল দুটি। ২০০৫ সালে জাপানের মিতসুবিসি থেকে নেওয়া এসব গ্যান্ট্রি ক্রেনের মেয়াদ শেষ হবে ২০৩০ সালে। পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি না থাকার কারণে জাহাজ থেকে পণ্য খালাস ও জাহাজীকরণে সময় বেশি লাগছে বলে বন্দর ব্যবহারকারীরা উদ্বিগ্ন ছিলেন।
চিটাগাং চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বলেন,‘দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদায় কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং বেড়ে যাচ্ছে। এই বাড়তি কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য ইক্যুইপমেন্টের পাশাপাশি নতুন নতুন ইয়ার্ড চালু করতে হবে। বন্দরে অপারেশনের কাজ আরও দ্রুত হলে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০১৪ সালে ১৭ লাখ ৩১ হাজার ২১৯, ২০১৫ সালে ২০ লাখ ২৪ হাজার ২০৭, ২০১৬ সালে ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯০৯ , ২০১৭ সালে কনটেইনার উঠানামা হয়েছে ২৬ লাখ ৬৭ হাজার টিইইউস। ২০১৮ সালে কন্টেইনার উঠানামা হয়েছে ২৯ লাখ তিন হাজার টিইইউস। ২০১৯ সালে ৩১ লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং করেছে চট্টগ্রাম বন্দর।
নতুন যন্ত্রাংশ যুক্ত হলে এনসিটির সবটিতেই দ্রুত পণ্য ওঠানামা ও পরিবহন করা সম্ভব হবে। এতে কম সময়ে দ্রুত পণ্য ডেলিভারি, পণ্য উঠানামার হারও কয়েকগুণ বাড়বে। ফলে বিদ্যমান জেটি দিয়েই ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি সামাল দেওয়া সক্ষম বলে মনে করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সাথে জড়িত সাইফপাওয়ার টেকের সত্ত্বাধিকারী তরফদার রুহুল আমিন বলেন, জেটিতে এখন ১৯০ মিটার দীর্ঘ জাহাজ ভিড়ছে। এখন আগের চেয়ে দ্বিগুণ কন্টেইনার নিয়ে জাহাজ ভিড়ছে। দ্রুত খালাস করা সম্ভব হলে আমদানি-রপ্তানিকারকদের অর্থ ও সময় সাশ্রয় হবে এবং দেশের অর্থনীতি গতিশীল হবে।