“স্বাধীনতা” স্বপ্নদ্রষ্টাদের অন্যতম সিরাজুল আলম খানের আজ জন্মদিন।
ব্যারিস্টার ফারাহ খান:
আজ ৬ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্মদিন। আমি মনে করি বাংলাদেশের ইতিহাসে আজ এক স্মরনীয় দিন। কারণ আজ ৬ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলার রুপকার জনাব সিরাজুল আলম খানের ভুমিষ্ট হওয়ার দিন। আজ স্বাধীন বাংলার রুপকার ও বাংলাদেশের সশস্ত্র যুদ্ধের প্রধান সংগঠক জনাব সিরাজুল আলম খান (দাদা) পৃথিবীতে এসেছিলেন। উনি না জন্মালে পৃথিবীর বুকে ‘বাংলাদেশ’ নামক রাষ্ট্র আদৌ হতো কিনা তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার রির্পোট অনুযায়ী জনাব সিরাজুল আলম খান সেই ব্যক্তি যিনি পাকিস্তান দ্বিখন্ড করার মূলকারিগর এবং স্বাধীন বাংলাদেশের রুপকার! আমার কথা বিশ্বাস না হলে গুগলে সার্চ করে দেখতে পারেন। শুধু লিখলেই হবে “person who broke Pakistan and created Bangladesh” তাহলেই দেখতে পাবেন পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা জনাব সিরাজুল আলম খান কে দায়ী করেছে পাকিস্তান দ্বিখন্ড করার মূলকারিগর হিসেবে। যদিও বলে রাখি, বাংলাদেশ থেকে সার্চ করলে এই লিংক পাবেননা কারণ আমাদের দেশের সরকার এই লিংকটি বল্ক করে রেখেছে(!), তবে বিশ্বের অন্য যে কোন দেশ থেকে যে কেউ এই লিংকটি দেখতে পাবেন।
১৯৬২ সালে যখন তিনি গোপন সংগঠন ‘নিউক্লিয়াস’ গঠন করেছিলেন তখন তাঁর বয়স ২১ বছর। ১৯৭১ সালে তাঁর বয়স ৩০ বছর। সেই ১৯৬২ সাল থেকে আজ ২০২০ সাল পর্যন্ত, বিগত এই ৫৮ বছরে সেই পূর্ব পাকিস্তান থেকে আজকের এই বাংলাদেশের রাজনীতি তে জনাব সিরাজুল আলম খান একমাত্র ব্যক্তি যিনি নিজস্ব তত্ত্ব নিজস্ব একটি রাজনীতি উপহার দিতে পেরেছেন। উনার রাজনৈতিক দর্শন যে সকলের ভাল লাগবে কিংবা সবাইকে গ্রহন করতে হবে তা আমি কখনই বলছি না। এটি অবশ্যই আমাদের ব্যক্তিগত ইচ্ছা আমরা উনার দর্শন গ্রহন করে তা মানবো কিনা, তবে আমাদের এটি অস্বিকার করার উপায় নেই যে বাংলাদেশে বহুগুণী রাজনীতিজ্ঞ জন্ম গ্রহণ করেও জনাব সিরাজুল আলম খান ছাড়া কেউ রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন কোন মডেল হাজির করতে পারেননি। তাই বলি, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ কে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র করেই জনাব সিরাজুল আলম খান ক্ষান্ত হননি, বরং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি তার নিজস্ব দর্শন হাজির করে প্রমান করেছেন তিনিই একমাত্র ব্যতিক্রম।
ঔপনিবেশিকবাদ ও আধুনিক জাতি গঠনের জন্য জনাব সিরাজুল আলম খানের রাষ্ট্রনীতি সাহিত্য বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে। তিনি মনে করেন যে আইন ও বিধি দ্বারা বিদেশী শাসকেরা শাসন করে, সে আইন ও বিধিকে বদলিয়ে নিজেদের উপযোগী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই হলো স্বাধীনতার মূলকথা। বিদেশি শাসক বদলিয়ে দেশীয় শাসকদের ক্ষমতায় বসিয়ে ঔপনিবেশিক আমলের রাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং শাসনব্যবস্থা দিয়ে দেশ পরিচালনা করা জনগণের জন্য এক ধরনের পরাধীনতা। যাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘অভ্যন্তরীণ উপনিবেশবাদ’ Internal Colonialism.
বর্তমানে তার সমাজ বিশ্লেষণ করে শ্রমজীবী, কর্মজীবী পেশাশ্রেনীর রাজনীতিগত অংশগ্রহণ, রাষ্ট্রীয় কাঠামোগত ফেডারেল পদ্ধতি, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, স্থানীয় সরকার কাঠামো, দুইকক্ষ পার্লামেন্ট একটি যুগান্তকারী চিন্তা।
তাই আমি আবারো বলবো, জনাব সিরাজুল আলম খান জন্মে ছিলেন বলেই পৃথিবীর বুকে ‘বাংলাদেশ’ নামের একটি দেশের মানচিত্র জায়গা পেয়েছে। আমি অনুরোধ করবো আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিহিংসা মূলক রাজনীতি বর্জন করে জনাব সিরাজুল আলম খান কে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরুন। আজ স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর জনাব সিরাজুল আলম খানের ৭৯তম জন্মদিনে আমার বিশেষ এবং আন্তরিক অনুরোধ থাকবে দেশবাসীর প্রতি আসুন দল মত শ্রেণী পেশা নির্বিশেষে সব ভেদাভেদ ভূলে গিয়ে জনাব সিরাজুল আলম খান কে আমাদের কে একটি স্বাধীন বাংলাদেশ দেওয়ার জন্য উনাকে উনার প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মান দেই।