আজ ফেলানী হত্যার ৯ বছর; বিচারে নেই কোন অগ্রগতি !
৭ জানুয়ারি। ২০১১ সালের আজকের এ দিনে ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর অনন্তপুর সীমান্তে মই বেয়ে কাঁটাতার ডিঙ্গিয়ে বাবার সঙ্গে দেশে ফিরছিলেন ফেলানী নামের এক তরুণী। এ সময় টহলরত চৌধুরীহাট ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ তাকে গুলি করে হত্যা করে। সীমান্তে সেই হত্যার ৯ বছর আজ।
সেদিন ফেলানীর মরদেহ কাঁটাতারে ঝুলে ছিল সাড়ে চার ঘণ্টা। যে ঘটনা ও দৃশ্য দেশে-বিদেশে ব্যপক আলোচিত ও সমালোচিত হয়। প্রতিবাদের ঝড় ওঠে বিশ্ব মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে। কিন্তু আজও সেই হত্যার সঠিক বিচার পায়নি ফেলানীর পরিবার।
ফেলানীর বাড়ি উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনিটারী গ্রামে।
মেয়ের হত্যাকারীর কাঙ্ক্ষিত বিচার না পেয়ে হতাশ বাবা নুরুল ইসলাম ও মা জাহানারা বেগম। আজ পারিবারিকভাবে পালন করা হচ্ছে ফেলানী হত্যার দিনটি। আয়োজন করা হয়েছে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল।
ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ও মা জাহানারা বেগম হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে মানবাধিকার সংস্থাসহ বহুজনের কাছে গিয়েছি, কিন্তু ৯ বছরেও কাঙ্ক্ষিত বিচার পেলাম না।’
এদিকে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্বব্যাপী ফেলানী দিবস পালনের দাবিতে নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীনের সভাপতিত্বে তোপখানা রোডের নির্মলসেন মিলনায়তনে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ শামসুদ্দীন জানান, তাদের দাবি, ফেলানী হত্যাকারী বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের ফাঁসি, ফেলানীর পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান, কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্তের নাম ফেলানী সীমান্ত নামকরণ ইত্যাদি।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও ৭ জানুয়ারি ফেলানী দিবস পালনের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর ২০১৫ সালে একটি স্মারকলিপি দিয়েছিলাম।
পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, এটি বাস্তবায়নের জন্য জাতিসংঘের সদস্য যে কোনো রাষ্ট্রকে প্রস্তাব আনতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহার জেলার বিএসএফ’র ১৮১ সদর দফতরে স্থাপিত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যার বিচার শুরু হয়।
৫ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়। রায় প্রত্যাখ্যান করে ১১ সেপ্টেম্বর ফেলানীর বাবা ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে সে দেশের সরকারকে ন্যায়বিচারের আশায় চিঠি দেন।
২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনরায় বিচার শুরু হলেও বিভিন্ন কারণে তা একাধিকবার স্থগিত হয়। ২০১৫ সালে আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ আরও একটি ক্ষতিপূরণ মামলা করে।
৩১ আগস্ট ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সেদেশের সরকারকে ফেলানীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫ লাখ রুপি দেয়ার অনুরোধ করেন।
এর জবাবে সে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলামকে দায়ী করে বক্তব্য দেন। পরে ২০১৬ এবং ১৭ সালে কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য থাকলেও শুনানি হয়নি আজও।