ইরানের কুদস বাহিনীর কমান্ডার সোলেমানির জানাজায় পদদলিত হয়ে নিহত ৩৫
ইরানের কুদস বাহিনীর কমান্ডার কাসেম সোলেমানির দাফন অনুষ্ঠানে ভিড়ের মধ্যে পদদলনে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। ইরানের রাষ্ট্রায়াত্ত টেলিভিশনের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার এ ঘটনায় অন্তত ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মেজর জেনারেল কাসেম সোলেমানিকে মঙ্গলবার তার নিজের শহর কেরমানে দাফন করা হয়। তার জানাজায় যোগ দিতে রাস্তায় লাখো মানুষের ঢল নামে।
শুক্রবার ইরাকের বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মার্কিন বিমান হামলায় ৬২ বছর বয়সী এ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন। এর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের যুদ্ধোন্মাদনা বিরাজ করছে।
সোলেমানির মৃত্যুতে ইরান তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছিল। ইরাক ও ইরানের বিভিন্ন শহরে কুদস বাহিনীর নিহত এ প্রধানের মৃতদেহর প্রতি সম্মান জানাতে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে ‘আমেরিকার মৃত্যু’ কামনা করে স্লোগান দিয়েছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। কেরমানে সোলেমানির দাফন অনুষ্ঠানে পদদলনে ৪০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানি গণমাধ্যম।
১৯৯৮ সাল থেকে ইরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর ‘বিদেশি শাখা’র দায়িত্ব প্রাপ্ত সোলেমানিকে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পর দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
যুক্তরাষ্ট্র তাকে ‘সন্ত্রাসী’ ও মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন বাহিনীর জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করলেও নিজের দেশে সোলেমানি বীরের মর্যাদা পেয়ে আসছিলেন। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে তার সমর্থন ছিল বাশার আল আসাদের প্রতি। লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটবিরোধী শিয়া গোষ্ঠীগুলোকেও তিনি দিক–নির্দেশনা দিতেন বলে মনে করা হতো।
মঙ্গলবার ইরানের দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলীয় কেরমানে সোলেমানির দাফন অনুষ্ঠানেও শোকার্ত জনগণ এখানেও ‘আমেরিকার মৃত্যু’, ‘ট্রাম্পের মৃত্যু’ চেয়ে স্লোগান দেয় বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদকরা জানিয়েছেন। “মৃত হলেও শহীদ কাসেম সোলেমানি এখন আরও ক্ষমতাধর,” দাফন অনুষ্ঠানে উপস্থিতদের উদ্দেশ্যে বলেছেন ইরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল হোসেন সালামি।
বিপ্লবী এ রক্ষীবাহিনী ইরানের ইসলামী শাসনব্যবস্থার রক্ষক; রাজনীতিতে এবং সামরিক বাহিনীতে তাদের প্রভাব ব্যাপক। এর আগে সোমবার তেহরান সোলেমানির জানাজায় ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি ইমামতি করেন; এক পর্যায়ে তাকে কাঁদতেও দেখা গেছে।
সোলেমানির হত্যাকাণ্ডের পরপরই এক ভাষণে আয়াতুল্লাহ ‘শত্রুদের জন্য ভয়াবহ প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে’ বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। কুদস বাহিনীর নতুন প্রধান ইসমাইল ঘানিও বলেছেন, তেহরান ‘কয়েক ধাপে’ সোলেমানি হত্যার বদলা নেবে।