দুনিয়ার তুলনায় আখেরাতের পুরস্কার অনেক গুণ বড়!
দুনিয়ার পুরস্কারের তুলনায় আখেরাতের পুরস্কার অনেক অনেক গুণ বড়। এ কথা কাউকে ওয়াজ করে বুঝানোর দারকার নেই। তাই মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত ইহকালীন পুরস্কারের তুলনায় আখেরাতের পুরস্কারই বেশি দেন। কী সেই পুরস্কার? আমাদের আকাবিরগণ কোরআনের আলোকে তাই বর্ণনা করেছেন-
(১) পুরস্কার. মুত্তাকীনদের বাড়ি হবে জান্নাত- ﴿وَسَارِعُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ﴾
তরজমা : ‘তোমরা তোমাদের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে দৌড়াও, এমন জান্নাত যার প্রশস্ততা আসমান জমিনের মতো। মুত্তাকিনদের বাসস্থান হিসেবে জান্নাতকে প্রস্তুত করা হয়েছে। (সূরা: আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৩)।
(২) পুরস্কার. জান্নাতের সব নিয়ামত হবে মুত্তাকীনদের জন্য- ﴿تِلْكَ الْجَنَّةُ الَّتِي نُورِثُ مِنْ عِبَادِنَا مَنْ كَانَ تَقِيًّا﴾
তরজমা : ‘জান্নাত (ও জান্নাতের সব) নিয়ামতের একমাত্র অধিকার করবো আমার বান্দাদের মধ্য হতে তাকওয়া অবলম্বনকারীদেরকে।’ (সূরা: মারয়াম, আয়াত: ৬৩)।
(৩) পুরস্কার. জাহান্নাম থেকে কেবল মুত্তাকিনরাই বেঁচে থাকবে। যেমন- ﴿ثُمَّ نُنَجِّي الَّذِينَ اتَّقَوْا وَنَذَرُ الظَّالِمِينَ فِيهَا جِثِيًّا﴾
তরজমা : ‘(কাল কিয়ামতের ময়দানে একমাত্র) তাকওয়া অবলম্বনকারী বান্দাদেরকেই আমি উদ্ধার করে দিবো আর জালেমদেরকে উপুরমুখি করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো।’ (সূরা: মারয়াম, আয়াত: ৭২)।
(৪) পুরস্কার. মুত্তাকিনরাই আল্লাহর মেহমান হবার মর্যাদা লাভ করবে। যেমন- ﴿يَوْمَ نَحْشُرُ الْمُتَّقِينَ إِلَى الرَّحْمَنِ وَفْدًا﴾
তরজমা : ‘সেদিন আমি তাকওয়া অবলম্বনকারী বান্দাদেরকে পরম মমতায়ময়ের মেহমান হিসেবে জমায়েত করবো।’ (সূরা: মারয়াম, আয়াত: ৮৫)।
(৫) পুরস্কার. মুত্তাকিনদেরকেই বেহিসেব দলে দলে জান্নাতে প্রবেশাধিকার হবে। যেমন- ﴿وَسِيقَ الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ إِلَى الْجَنَّةِ زُمَرًا حَتَّى إِذَا جَاءُوهَا وَفُتِحَتْ أَبْوَابُهَا﴾
তরজমা : ‘(দুনিয়ায়) যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে তাদেরকে জান্নাতের দিকে দলে দলে নিয়ে যাওয়া হবে; যখন তারা জান্নাতের দরজার সামনে দাঁড়াবে তখন তার দরজাগুলো তাদের জন্য খোলে দেয়া হবে।’ (সূরা: যুমার, আয়াত: ৭৩)।
(৬) পুরস্কার. তাকওয়া অবলম্বনকারীদের বাসস্থান হবে সুউচ্চ প্রাসাদ। যেমন- ﴿لَكِنِ الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ لَهُمْ غُرَفٌ مِنْ فَوْقِهَا غُرَفٌ مَبْنِيَّةٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَعْدَ اللَّهِ لَا يُخْلِفُ اللَّهُ الْمِيعَادَ﴾
তরজমা : ‘কিন্তু আর যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে জান্নাতে তাদের ভবনগুলো হবে বহুতল বিশিষ্ট। আর এর তলদেশ দিয়ে থাকবে বহমান নদী। নিশ্চয় আল্লাহ তার ওয়াদা ভঙ্গ করেন না।’ (সূরা: যুমার, আয়াত: ২০)।
(৭) পুরস্কার. তাকওয়া অবলম্বনকারী বান্দারা তাকওয়াবিহীন লোকদের মতো পরস্পর শত্রু হবে না- ﴿الْأَخِلَّاءُ يَوْمَئِذٍ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ إِلَّا الْمُتَّقِينَ﴾
তরজমা : ‘সেদিন সকল বন্ধু একে অপরের শত্রু বনে যাবে, তাকওয়া অবলম্বনকারী বান্দা ছাড়া। (সূরা: যুখরুফ, আয়াত: ৬৭)।
(৮) পুরস্কার. তাকওয়া অবলম্বনকারীদের বাসস্থান নিরাপদ, হুরদের সঙ্গে বিয়ে- ﴿إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي مَقَامٍ أَمِينٍ () فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ () يَلْبَسُونَ مِنْ سُنْدُسٍ وَإِسْتَبْرَقٍ مُتَقَابِلِينَ () كَذَلِكَ وَزَوَّجْنَاهُمْ بِحُورٍ عِينٍ () يَدْعُونَ فِيهَا بِكُلِّ فَاكِهَةٍ آمِنِينَ () لَا يَذُوقُونَ فِيهَا الْمَوْتَ إِلَّا الْمَوْتَةَ الْأُولَى وَوَقَاهُمْ عَذَابَ الْجَحِيمِ () فَضْلًا مِنْ رَبِّكَ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ﴾
তরজমা : ‘(অপর দিকে) তাকওয়া অবলম্বনকারী বান্দারাই অবশ্যই নিরাপদ স্থানে থাকবে- বাগানসমূহে ও ঝরনারাজিতে! ওরা পরিধান করবে মিহি ও পুরু রেশমী বস্ত্র এবং মুখোমুখি হয়ে বসবে। তাদের সঙ্গে এ রকমই ব্যবহার করা হবে। আমি ডাগর ডাগর চোখের হুরদের সঙ্গে তাদের বিবাহ দেব। সেখানে তারা অত্যন্ত নিশ্চিন্তে সব রকম ফলের ফরমায়েশ করবে। (দুনিয়ায়) তাদের যে মৃত্যু প্রথম এসেছিল, তা ছাড়া সেখানে (অর্থাৎ জান্নাতে) তাদেরকে কোনো মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে না এবং আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করবেন। তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে অনুগ্রহ স্বরূপ। (মানুষের জন্য) এটাই মহামূল্যবান।’ (সূরা: দুখান, আয়াত:৫১-৫৭)
(৯) পুরস্কার. তাকওয়া অবলম্বনকারীদের জন্য জান্নাত হবে কল্পনাতীত স্বাচ্ছন্দ্য আবাসস্থল- مَثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُونَ فِيهَا أَنْهَارٌ مِنْ مَاءٍ غَيْرِ آسِنٍ وَأَنْهَارٌ مِنْ لَبَنٍ لَمْ يَتَغَيَّرْ طَعْمُهُ وَأَنْهَارٌ مِنْ خَمْرٍ لَذَّةٍ لِلشَّارِبِينَ وَأَنْهَارٌ مِنْ عَسَلٍ مُصَفًّى وَلَهُمْ فِيهَا مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ وَمَغْفِرَةٌ مِنْ رَبِّهِمْ
তরজমা : ‘তাকওয়া অবলম্বনকারী বান্দাদের যেই জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, তার অবস্থা এই যে, তাতে আছে এমন পানির নহর, যা কখনো নষ্ট হওয়ার নয়, আছে এমন দুধের নহর, যার স্বাদ থাকবে অপরিবর্তনীয়, আছে এমন সুরার নহর, যা পানকারীদের জন্য অত্যন্ত সুস্বাদু, আছে এমন মধুর নহর যা থাকবে পরিশোধিত এবং তাতে তাদের জন্য থাকবে সব রকম ফলমূল ও তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে মাগফিরাত। (সূরা: মুহাম্মাদ, আয়াত: ১৫)।
(১০) পুরস্কার. তাকওয়া অবলম্বনকারী বান্দারা চিরকাল আল্লাহর সান্নিধ্যে থাকবে- إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَنَهَرٍ () فِي مَقْعَدِ صِدْقٍ عِنْدَ مَلِيكٍ مُقْتَدِرٍ
তরজমা : ‘যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে তারা থাকবে উদ্যানরাজি ও নহরে সত্যিকারের মর্যাদাপূর্ণ আসনে, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মহা সম্রাটের সান্নিধ্যে।’ (সূরা: কামার, আয়াত: ৫৪-৫৫)।
তাকওয়ার যাচাই কীভাবে হবে?
ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য কল্যাণকর কিছু শুনলে মনে প্রফুল্লতা আসে, অন্তরে শোকর গুজারির হালত সৃষ্টি হয়। যারা ওই কল্যাণে কাজে লিপ্ত তাদের জন্য অন্তর থেকে দোয়া আসে। যদি এরকম হয়; এগ্রুপ দেশের জন্য কাজ করে বিগ্রুপও দেশের জন্য কাজ করে। কিন্তু এগ্রুপ যখন শুনলো বিগ্রুপের কোনো সুসংবাদ খুশি হয়নি। আবার এগ্রুপ যখন কোনো বিপদে পড়তো তখন বিগ্রুপ খুশি হতো। এগুলো বুঝতে হবে তাকওয়া নেই। দুজনেই তাবলীগ করে কিন্তু কেউ কারো কাজে খুশি না। বুঝতে হবে তাকওয়া নেই।
অলসতা ব্যতিরে প্রতিদিন ভোরে ফজর নামাজ আদায় করা তাকওয়ার পরিচয়। কোনো অবস্থাতেই নামাজ কাযা না করা তাকওয়ার পরিচয়। নফল নামাজের ইতেমাম করা, কখনো ছুটে গেলে পুনরায় আদায় করে নেয়া তাকওয়ার পরিচয়। কোনো দায়িত্বে কখনো অবহেলা না করা তাকওয়ার পরিচয়।
*মিথ্যা ও প্রতিশ্রুতি থেকে নিজেকে হেফাযত করা তাকওয়ার পরিচয়। * মিথ্যা থেকে এমনভাবে বাঁচা যে, হাসি রসিক কৌতুকেও মিথ্যা না বলা তাকওয়ার পরিচয়। * কারো কথা-বার্তায় কষ্ট পেলে প্রতিশোধ না নেয়ার মানসিকতা তাকওয়ার পরিচয়। *হিংসা বিদ্বেষ অন্তরে স্থান না দেয়া তাকওয়ার পরিচয়।
*কবিরা গুনাহ থেকে বাঁচার সঙ্গে সঙ্গে সগিরা গুনাহ থেকেও নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা তাকওয়ার পরিচয়। *দ্বীনের প্রয়োজনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখা তাকওয়ার পরিচয়। *কীভাবে ইসলাম ও মুসলমানদের উন্নতি করা যায় সেই চিন্তা-ফিকিরে সদা সময় কাটানো তাকওয়ার পরিচয়।
*যারা অন্তরে এসবের বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা নেই তার ভেতরে তাকওয়া নেই। তাকওয়া সফল চরিত্রের ভূষণ। নবীজি (সা.) জীবনের আলোকিত পথই তাকওয়া অবলম্বন করা। *মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা সবাইকে তাকওয়ার পথ অবলম্বন করার তৌফিক দান করুক। আল্লাহুম্মা আমিন।