মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যে চারটি আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক আদালত
রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে চারটি অন্তবর্তী আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত। আইসিজে’র ১৭ জন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত বিচারিক দলের পক্ষে অন্তবর্তী আদেশ ঘোষণা করেন আদালতের প্রেসিডেন্ট বিচারক আব্দুলকোয়াই আহমেদ ইউসুফ।
রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা চালানোর দায়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গত নভেম্বরে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করে গাম্বিয়া। ডিসেম্বরে এর শুনানিতে রাখাইনের পরিস্থিতি যাতে আরও খারাপ না হয় সেজন্য আদালতের কাছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অন্তবর্তী ৪টি আদেশ চায় দেশটি। আজ সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিলেন আদালত।
আদেশগুলো হল-
১. গণহত্যাসহ সব ধরনের নিপীড়ন থেকে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দেয়া।
২. রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কোন ধরণের সামরিক আধা সামরিক অথবা এই জাতীয় কোন সংস্থা এমন কোন ব্যবস্থা বা কাজ করবে না যাতে মিয়ানমারে চলমান পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে।
৩. গণহত্যার কোনো আলামত নষ্ট না করা।
৪. মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কি কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সেই সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে পেশ করতে হবে।
রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা চালানো এবং গণহত্যা সনদ লঙ্ঘনের অভিযোগে গত বছরের নভেম্বরে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত আইসিজে’তে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করে গাম্বিয়া। গত নভেম্বরে এই মামলার শুনানিতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চ উপস্থিত থাকলেও আজ আদালতে হাজির ছিলেন না তিনি। তার বদলে উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন মন্ত্রী চ টিন্ট সোয়ে।
মিয়ানমার ও গাম্বিয়া উভয়েই ১৯৪৯ সালে গৃহীত গণহত্যা সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ। এই সনদের বাধ্যবাধকতা পূরণে মিয়ানমারকে বাধ্য করার লক্ষ্যেই এই মামলা। তিনদিনের ওই শুনানিতে অংশ নেন অং সান সু’চির নেতৃত্বে মিয়ানমারের একটি আইনজীবী দল। রাখাইনে কোনো অপরাধ ঘটে থাকলে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে মিয়ানমার সেগুলোর বিচার করবে বলে জানানো হয় শুনানিতে। পাশাপাশি এই বিচারপ্রক্রিয়ার আন্তর্জাতিকীকরণের বিরোধিতা করে মিয়ানমার।
শুনানিতে অন্তবর্তী আদেশ জারির বিরোধিতা করে সু চি অজুহাত দেন, অন্তর্বর্তী আদেশ পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া উদ্বাস্তুদের সম্ভাব্য পুনর্বাসনে বাধা তৈরি করবে। পাশাপাশি এ মামলা করার এখতিয়ার নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযান শুরু হলে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের জারি করা যেকোনো আদেশ জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক। তবে রায় না মানারও নজিরও রয়েছে বেশ কিছু। এ অবস্থায় যদি মিয়ানমার এ রায় মানতে রাজি না হয় তাহলে, গাম্বিয়ার মামলাটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাঠানো হতে পারে।
আইসিজেতে করা গাম্বিয়ার এ মামলায় রায় পেতে কয়েক বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। তবে ‘অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ’কে এই আইনি প্রক্রিয়ার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।