মহামারীর রূপ নিল করোনাভাইরাস, চীনে ৪১ জনের মৃত্যু
চীনে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা এক ধাক্কায় ২৬ থেকে বেড়ে হল ৪১। আক্রান্ত অন্তত ১২৮৭ জন। ৪১ জনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে চীনের হুবেই প্রদেশে। এখান থেকেই প্রথম ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস।
এই ভাইরাসে আক্রান্ত ১২৮৭ জনের মধ্যে ২৩৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। জ্বর-কাশি ও শ্বাসকষ্টের সংক্রমণ নিয়ে ভর্তি হওয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য যুদ্ধকালীন তৎপরতায় একটি হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে। ১০০০ শয্যার এই হাসপাতালে শুধুমাত্র করোনাভাইরসে আক্রান্তদের চিকিৎসা করা হবে। করোনাভাইরাস যাতে গোটা দেশে ছড়িয়ে না পড়ে, তার জন্য ইউহান-সহ চীনের আক্রান্ত ১৪টি শহরকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
এদিকে শনিবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রথম ঘটনার কথা ঘোষণা করল অস্ট্রেলিয়া। বছর ৫০-এর এক চীনা নাগরিক, যিনি গত সপ্তাহে চীন থেকে অস্ট্রেলিয়া পৌঁছন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ফ্রান্সে এই ভাইরাসে ইতোমধ্যেই আক্রান্ত তিন জন। আমেরিকায় দু-জনের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে।
চীনের হুবেই প্রদেশে করোনা ভাইরাসে আরও ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ওই প্রদেশেই প্রথম এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল।
এমন এক সময় এই ভাইরাসটি দেখা দিল যখন চীন নববর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নববর্ষের ছুটিতে চীনের কোটি কোটি মানুষ দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ঘুরতে যায়। সারাদেশেই উৎসবের পরিস্থিতি বিরাজ করে।
এমন অবস্থায় এই ভাইরাস আরও বেশি ছড়িয়ে পরতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সে কারণে নববর্ষের অনেক অনুষ্ঠান বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে হুবেই প্রদেশের উহান শহরে একটি নতুন হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে।
গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে হুবেই প্রদেশের রাজধানী শহর উহানে প্রথম ফ্লু টাইপের এই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করায় চীনা কর্তৃপক্ষ উহান থেকে চলাচলকারী সকল যানবহন বন্ধ ঘোষণা করেছে। হুবেই প্রদেশে ভ্রমণে কড়া সতর্কতা জারি করেছে দেশটির সরকার।
প্রদেশের উহান শহরে সব বাস, মেট্রো এবং ফেরি চলাচল বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই শহর থেকে ছাড়া সব বিমানের ফ্লাইট ও রেল সেবাও বাতিল হয়েছে। ইঝু শহরে রেল স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে ইনসি শহরে সব বাস সেবা বাতিল করা হয়েছে।
যারা উহান শহর থেকে ফিরেছেন তাদের অন্তত ১৪ দিন বাড়িতে থাকার নির্দেশ দিয়েছে বেইজিং ও সাংহাই কর্তৃপক্ষ। এই ভাইরাস যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্যই এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
উহান শহরে প্রায় ৮৯ লাখ মানুষের বসবাস। মূলত ওই শহরে প্রাদুর্ভাব ঘটার পর ভাইরাসটি রাজধানী বেইজিংসহ অন্যান্য প্রদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া প্রতিবেশী জাপান, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, ম্যাকাও এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াতেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
এখন ইউরোপেও ছড়িয়ে পড়ছে এই ভাইরাস। ফ্রান্সে তিনজনের এই ভাইরাসে আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। শুক্রবার রাতে ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বোরডেক্সে প্রথম একজন এবং প্যারিসে দু’জনের এই ভাইরাসে আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো হলো জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট। সেভার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) ঘরানার এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়।