অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত হাকালুকি হাওর
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ মিঠাপানির হাওর হাকালুকি এখন অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত। আর এসব অতিথি পাখি দেখতে পাখিপ্রেমীরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে প্রতিদিন ভিড় করছেন হাকালুকি হাওরে। অতিথি পাখিরা কখনও জলকেলি, কখনও খাদ্যের সন্ধানে এক বিল থেকে অন্য বিলে ওড়াউড়ি করছে। আর তাদের কলকাকলিতে অদ্ভুত এক মোহনীয় পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে। এখনও প্রতি রাতে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি হাকালুকি হাওরে আসছে।
হাকালুকি হাওরের আয়তন ১৮ হাজার ১১৫ হেক্টর। মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার পাঁচটি উপজেলাজুড়ে এর বিস্তৃতি। হাওরের বেশিরভাগ অংশই পড়েছে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায়। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকায় পড়েছে হাওরের ১৫ শতাংশ। এ হাওরে সব মিলিয়ে ২৩৮টি বিল রয়েছে, যেগুলো বালিহাঁস, চিতিহাঁস, সরালি, চখাচকি, নীল শিরসহ নানা প্রজাতির অতিথি পাখির বিচরণক্ষেত্র। তবে হাওরের বাইয়া, হাওরখাল, গজুয়া, রঞ্চি ও কালাপানি জলাশয়েই বেশি দেখা মেলে এসব অতিথি পাখির।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব সূত্রে জানা যায়, গত বছর হাকালুকির ৪০টি বিলে পাখিশুমারিতে ৫০ প্রজাতির ৫৮ হাজার ২৮৯টি পাখির দেখা মিলেছে। ৩৭ হাজার ৩৩৮টি বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস ও এক হাজার ৪৭৩টি সৈকত পাখি পাওয়া যায়।
হাওর পারের গ্রামগুলোর মানুষের এখন ঘুম ভাঙে অতিথি পাখির কলতানে। সেই সঙ্গে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শত শত পর্যটক হাকালুকি হাওরে এসে প্রকৃতির এ নয়নাভিরাম দৃশ্যে মুগ্ধ হচ্ছেন।
হাকালুকি হাওর রক্ষণাবেক্ষণে উন্নয়ন সংস্থা সিএনআরএসের আশিঘর গ্রাম সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, শীতের শুরু থেকেই নানা প্রজাতির অতিথি পাখি হাকালুকি হাওরে আসছে। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সভাপতি ড. ইনাম আল হক বলেন, কয়েক বছর ধরে পাখির আগমন কমে গেছে। গত বছর পাখিশুমারিতে বিলুপ্ত প্রজাতির কোনো পাখি পাওয়া যায়নি।
ফেঞ্চুগঞ্জের ইউএনও এএসএম জাহিদুর রহমান বলেন, পাখির খাবার কমে যাওয়া, ফাঁদ পেতে পাখি শিকার, মানুষের উপদ্রবের কারণে কয়েক বছর ধরে অতিথি পাখির সংখ্যা কমছে। অতিথি পাখি সংরক্ষণে হাওর এলাকার জনসাধারণকে আরও সচেতন হতে হবে।