জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির সপ্তাহব্যাপী ‘ফুড ডিষ্ট্রিবিউশন’ কার্যক্রম, তিন শতাধিক পরিবার পেলো ‘ঈদ উপহার’
জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটি করোনাভাইরাসের ফলে আক্রান্ত বা ক্ষতিগ্রস্তসহ আনডকুমেনেটেড প্রবাসী বাংলাদেশী সহ দলমত নির্বিশেষে অন্যান্য কমিউনিটির মানুষদের মাঝে সপ্তাহব্যাপী ‘ফুড ডিষ্ট্রিবিউশন’ কার্যক্রম করেছে। পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখে এই কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এতে তিন শতাধিক পরিবার পেলো ‘ঈদ উপহার’ সামগ্রী। এছাড়াও অর্ধ শতাধিক পরিবারের বাসা-বাড়িতে গিয়ে হোম ডেলিভারীর মাধ্যমে ‘ঈদ উপহার’ পৌছে দেয়া হয়।
ফ্রেন্ডস সোসাইটি সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ মে মঙ্গলবার ‘ইফতারী বক্স’ বিতরণের মধ্য দিয়ে সংগঠনের ‘ফুড ডিষ্ট্রিবিউশন’ কার্যক্রম শুরু হয়। জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউর ফাতেমা গ্রোসারী আর জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার (জেএমসি) এর সামনে থেকে সভাপতি মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোস্তফা আল আমীন রাসেলের নেতৃত্বে কর্মকর্তারা উল্লেখিত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেন। কর্মসূচীর শেষ দিনে গত ১২ মে মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ১৬৮ স্ট্রীট ও হিলসাইড এভিনিউতে এই কার্যক্রম চলে। এসময় সর্বস্তরের শত শত লোক হিলসাইড এভিনিউ থেকে হাইল্যান্ড এভিনিউ পর্যন্ত ১৬৮ স্ট্রীটে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ‘ফুড ও ইফতারী বক্স’ গ্রহণ করেন। এসময় তিন শতাধিক ‘ফুড বক্স’ ও ইফতারী বক্স বিলি করা হয়। এর মধ্যে ১০০ বক্স খাদ্য সামগ্রী ছিলো যা কুইন্স বরো অফিস থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া যায়। ফ্রেন্ডস সোসাইটির এই ফুড বক্স বিতরণে বাংলাদেশী-আমেরিকান পুলিশ এসোসিয়েশন (বাপা)-এর কয়েকজন কর্মকর্তা সহযোগিতা করেন। উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে বৃষ্টির কারণে একদিন ইফতারী বক্স বিতরণ কর্মসূচী বন্ধ রাখা হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে ‘ফুড ডিষ্ট্রিবিউশন’ কর্মসূচীর শুরুতে বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন করেন ফ্রেন্ডস সোসাইটির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। এসময় ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোস্তফা আল আমীন রাসেল ছাড়াও উল্লেখযোগ্য কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা এবিএম ওসমান গণি, উপদেষ্টা ও সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, উপদেষ্টা ও জেএমসি’র সেক্রেটারী মনজুর আহমেদ চৌধুরী, সাবেক সভাপতি শেখ হায়দার আলী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে মিসবাহ উজ্জামান, রেজাউল আজাদ ভুইয়া, সেবুল মিয়া, ইফজাল আহমেদ চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট কামরুজ্জামান বাবু সহ সৈয়দ আতিকুর রহমান, মন্নাফ তালুকদার, আনোয়ার হোসেন, সুমন খান, হামিদুর রহমান, বাবুল হাওলাদার, আখতার বাবুল, মুরাদ খন্দকার, মাহিন রহমান, রিজু মোহাম্মদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও বাপা সভাপতি ক্যাপেটন কারাম চৌধুরী ও কোষাধ্যক্ষ রাশেক মালিকের নেতৃত্ব ৫/৬ জন বাপা কর্মকর্তা ফ্রেন্ডস সোসাইটির ‘ফুড ডিষ্ট্রিবিউশন’ কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতি ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার ইউএনএ প্রতিনিধি-কে জানান, কোভিড-১৯ শুরুর সময় থেকেই ফ্রেন্ডস সোসাইটির পক্ষ থেকে জ্যামাইকাবাসী বাংলাদেশীদের সেবায় সহযোগিতার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এবং এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে জ্যামাইকায় বসবাসকারী বাংলাদেশী সহ অন্যান্য কমিউনিটির আনডকুমেনটেডদের জন্যই ব্যাপকারে ‘ফুড ডিষ্ট্রিবিউশন’ কর্মসূচী গ্রহণ করা হয় এবং সবার সহযোগিতায় এই কর্মসূচী সফল হয়েছে। তিনি বলেন, যেহেতে পবিত্র ঈদুল ফিতর সমাগত তাই বাংলাদেশী মুসলমানদের ঈদের দিনের বিশেষ খাবার সেমাই সহ অন্যান্য ঈদ সামগ্রীও ছিলো ‘ফুড বক্স’ এর অন্তর্গত।
ফ্রেন্ডস সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোস্তফা আল আমীন রাসেল জানান, মূলত: কভিড-১৯ এ ক্ষতিগ্রস্ত এবং যেসকল আনডকুমেন্টেড পরিবার সিটি বা ফেডারেল (সরকারী) সাহায্য-সহযোগিতা পাননি তাদের জন্যই এই বিশেষ কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়। আর এই কর্মসূচীর আওতায় এমন ৩০০ টি পরিবারের মাঝে ফ্রেন্ডস সোসাইটির উপহার সামগ্রী (চাল-ডাল সহ নিত্য প্রয়োজনীয় গ্রোসারী) এবং ইফতারী বক্স বিতরণ করা হয়। এছাড়াও যারা অসুস্থতার কারণে বাসার বাইরে বেরুতে পারেননি এমন আরো প্রায় ৭৫ টি পরিবারের মাঝে বাসায় উপহার বাক্স পৌঁছে দেয়া হয়।
এদিকে ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার এক বিবৃতিতে মহান রাব্বুল আলামীনের প্রতি অশেষ শুকরিয়া আদায় করে বলেছেন, সফলভাবে শেষ হলো জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির সপ্তাহব্যাপী কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত পরিবার এবং জ্যামাইকায় বসবাসরত আনডকুমেন্টেড বাংলাদেশী পরিবারের সহযোগিতায় ‘ইফতার ও ফুড ডিষ্ট্রিবিউশন’ কার্যক্রম।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, সপ্তাহব্যাপী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রথম দিন প্রায় ১০০ পরিবারের মধ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য বিতরণ ছাড়া গত এক সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিন ২০০ মানুষের ইফতারের আয়োজন এবং গত ১২ মে মঙ্গলবার ৩৫০ টি পরিবারের মধ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এছাড়াও স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, ইএমটি কর্মকর্তা এবং পুলিশ পিসেঙ্কট ও ফায়ার হাউসে খাবার ও স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
বিবৃতিতে ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার বলেন, প্রবাসের অন্যতম প্রাচীন সামাজিক সংগঠন, জ্যামাইকাবাসীর আস্থা এবং ভরসার স্থল জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির সম্মানিত উপদেষ্টামন্ডলী, কার্যকরী পরিষদের সদস্যবৃন্দ ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহযোগিতায় পুরো কার্যক্রম সম্ভব হয়েছে। এজন্য সবার প্রতি অন্তরের অন্তস্থল থেকে কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ। আর যারা মানব সভ্যতার সবচেয়ে বিপর্যস্ত এই সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য যে সকল হৃদয়বান ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে সংগঠনের পাশে দাঁড়িয়েছেন সংগঠন এবং আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে তাদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি এবং তাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা। এছাড়াও তিনি জ্যামাইকা এলাকাসহ নিউইয়র্ক তাথা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে যে সকল ব্যক্তি, সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠান সময়ের কাছে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন তাদেরকেও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি এবং ধন্যবাদ জানাচ্ছি
বিবৃতিতে তিনি অলো বলেন, সকলের অবগতির জন্য একটি বিষয় বলতে চাই যে, আমি ব্যক্তিগতভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর যে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি সেটা একান্ত গোপনে করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আমি জানি আমার মত অনেকেই ব্যক্তিগত সহযোগিতাটুকু নীরবে-নিভৃতে করছেন। তবে সংগঠনের একজন দায়িত্বশীল হিসেবে সংগঠনের অনুদান যেহেতু অনেক মানুষের কাছ থেকে আসে. তাই স্বচ্ছতার জন্য সেটা তুলে ধরা প্রয়োজন বলে মনে করি।
তিনি বলেন, ফ্রেন্ডস সোসাইটির সপ্তাহব্যাপী ‘ফুড ডিষ্ট্রিবিউশন’ কার্যক্রম হয়তো কিছু সংখ্যক মানুষের উপকারে আসতে পেরেছি, সেজন্য ভালো লাগছে। তবে আমি জানি এখনো অনেক মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন। আগামী দিনে আমরা চেষ্টা করবো আরো বড় পরিসরে আরো বেশি মানুষের উপকারে আসা যায় সে উদ্যোগ নেয়ার।