জিয়াউর রহমানঃ ছড়ানো ফুলে মালা গাঁথার কারিগর
ফজলে এলাহী: সুনামগঞ্জের মনির নামের এক যুবক অনেক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় গিয়েছিলো। যুবকটি সদ্য মাত্র গ্রাজুয়েশন শেষ করেছে। কিন্তু সে ঢাকায় গেছে গানের টানে। তার শখ অনেক বড় গীতিকার হওয়ার। ঢাকায় গিয়ে পরিচয় হয় সঙ্গীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলীর সাথে। আলাউদ্দীন আলী স্বাধীনতা দিবসের জন্য রেডিওর একটি অনুষ্ঠানের জন্য ছেলেটির লিখা একটা দেশাত্নবোধক গান নিলেন ।
শাহনাজ রহমত উল্লাহর কন্ঠে ”প্রথম বাংলাদেশ / আমার শেষ বাংলাদেশ/ জীবন বাংলাদেশ / মরন বাংলাদেশ” গানটি প্রচারিত হওয়ার পর প্রেসিডেন্টের মনে গানটি গেঁথে যায়। প্রেসিডেন্ট গানটির গীতিকার কে বঙ্গভবনে ডেকে পাঠালেন। সুনামগঞ্জের সেই মনির ছেলেটি খুব ঘাবড়ে গেলো। ভয়ে ভয়ে প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাৎ করতে বঙ্গভবনে গেলো। প্রেসিডেন্ট ছেলেটির গানটি খুব প্রশংসা করে তার বিস্তারিত জানতে চাইলেন। প্রেসিডেন্ট জানলেন ছেলেটি বেকার ,গান লিখা ছাড়া আর কিছু করেনা। ছেলেটিকে প্রেসিডেন্ট বাংলা একাডেমিতে অফিস সহকারী পোস্টে চাকরী দিলেন। এরপর ছেলেটিকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ছেলেটি হয়ে উঠলো বাংলা আধুনিক, দেশাত্নবোধক ও চলচ্চিত্রের গানের এক অবিস্মরণীয় গীতিকার যার নাম সবাই জানে মনিরুজ্জামান মনির।
হ্যাঁ, বলছিলাম কিংবদন্তী গীতিকার মনিরুজ্জামান মনিরের জীবনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার কথা। উল্লেখিত প্রেসিডেন্ট মহোদয় আর কেউ নয় তিনি হলেন স্বাধীনতার ঘোষক , বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম । যিনি এভাবেই সব হীরা মানিক মনি মুক্তো তাঁর ভান্ডারে ,দেশের ভান্ডারে যুক্ত করতেন। মেধাবী সে যেই হোক না কেন তাঁকে পাওয়া মাত্রই কাজে লাগানোর চেষ্টা করতেন । মনিরুজ্জামান মনিরের লিখা সেই দেশাত্নবোধক গানটিকে জিয়াউর রহমান বিএনপির দলীয় সঙ্গীত হিসেবে ব্যবহার করলেন যা আজও প্রতিটি দিবসে বেজে উঠে ও আগামীতেও বাজবে। বাংলা গান সম্পর্কে যারা গবেষণা করেন তাদের কাছে মনিরুজ্জামান মনির নামটি অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ও প্রিয় একটি নাম যার জনপ্রিয় গানের সংখ্যা কত শত /হাজার সেটা বলা মুশকিল। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের পর যে গীতিকারের গান ধরা হয় সর্বাধিক সংখ্যক তিনি মনিরুজ্জামান মনির। গানের জন্য পেয়েছেন একাধিকবার জাতীয় পুরস্কার তা নিয়ে আমার পুর্বের একটা লিখাতে বিস্তারিত আলাপ করেছিলাম ।
ফিরে আসি মূল প্রসঙ্গে। রাস্ট্রপতি জিয়ার কাছে মেধাবী ও যোগ্যতাই ছিলো মূল বিষয়। গীতিকার মনিরুজ্জামান মনিরের মতো ঘটনা আরও অনেক আছে আমি সেসব উল্লেখ করতে গেলে পুরো একটি বই প্রকাশ করা যাবে । আওয়ামীলিগের রাজনীতির আদর্শে উজ্জীবিত সাংবাদিক এ বি এম মুসাকেও তিনি সকলের আপত্তি সত্ত্বেও তিনি যোগ্য জায়গায় দায়িত্ব দিয়েছিলেন যা মুসা নিজের লিখা বইতে সে স্মৃতি স্মরণ করেছিলেন।
একদিন জিয়া বঙ্গভবনে ডেকে পাঠালেন তৎকালীন সময়ের জনপ্রিয় ও ব্যস্ত নায়ক উজ্জ্বলকে। উজ্জ্বল ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করা মেধাবী ছাত্রও। উজ্জ্বলকে জিজ্ঞেস করলেন ইন্ডাস্ত্রির নানা প্রসঙ্গে। কিভাবে পাশের দেশের রঙ্গিন বাণিজ্যিক সিনেমাগুলোকে টেক্কা দিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে পারি সেসব বিষয়ে নানা কথাবার্তা বললেন। চলচ্চিত্রের জন্য উজ্জ্বলকে একদিন ৬০ লক্ষ টাকার অনুদান দিলেন। পরিচালক আজিজুর রহমানের ”ছুটির ঘন্টা” সিনেমার পেছনেও আছে জিয়াউর রহমানের অবদান । চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য জিয়ার আমলে যে কয়টি অত্যাধুনিক ক্যামেরা কেনা হয়েছিলো সেগুলো দিয়ে ইন্ডাস্ট্রি চলেছে দুই দশক ধরে। জিয়াই এফডিসিতে ”জহির রায়হান কালার ল্যাব” প্রতিষ্ঠিত করে রঙ্গিন সিনেমা বানানোর জন্য দেশেই সব ব্যবস্থা করে দিলেন। এফডিসির বেঙ্গল স্টুডিওকে করলেন আধুনিক যেখানে অসংখ্য অসংখ্য সিনেমার শুটিং হয়েছিলো। মিস্টি প্রেমের রোমান্টিক ও পারিবারিক সিনেমার ইমেজ ছেড়ে উজ্জ্বল বেরিয়ে এসে নির্মান করলেন ”নালিশ” সিনেমাটি যার পরের ইতিহাসটা সবারই জানা। বরেণ্য পরিচালক খান আতাউর রহমান এর জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত চলচ্চিত্র ” ডানপিটে ছেলে” নির্মাণের পেছনেও আর্থিক অনুদান সহ যাবতীয় সহযোগিতা করেছিলেন জিয়াউর রহমান। শিল্প সংস্কৃতিতে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ও শিশু কিশোরদের মেধা বিকাশে জিয়াউর রহমান প্রবর্তন করেছিলেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে ”নতুন কুঁড়ি” নামের জাতীয় প্রতিযোগিতা যার দেখাদেখি আজকাল আমরা অনেক রিয়েলিটি শো দেখি ।
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র “কলমিলতা” এর গল্পটা জিয়াউর রহমানেরই বলা যা নির্মাণের জন্য রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আর্থিক অনুদান সহ সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিলেন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেয়ার জন্য জিয়াউর রহমান গঠন করেছিলেন ” বাংলা জাশিস” নামের একটা প্রযোজনা সংস্থা যে সংস্থাটির ১ম ও শেষ চলচ্চিত্র ছিলো ” কলমিলতা”।
জিয়াউর রহমান মনে প্রানে বিশ্বাস করতেন মেধাবী প্রজন্ম ছাড়া কোন দেশ এগিয়ে যেতে পারেনা। তাই তো তিনি সবসময় মেধা ও যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিতেন । দলীয় সংকীর্ণতার উর্ধে উঠে জিয়াউর রহমান তাঁর শাসনকালে রাস্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় তিনি যোগ্য লোকদের দায়িত্ব দিতেন , যোগ্য লোকদের তুলে আনতেন যে গুণটি আর কারও মাঝে দেখা যায়নি। জিয়ার কাছে সবসময় ”ব্যক্তির চেয়ে দল বড় ,দলের চেয়ে দেশ বড় ” এই নীতিটি ছিল প্রধান কথা। এই নীতি অনুসরণ করেই তিনি দেশের সকল জ্ঞানী গুনী মানুষ ও মেধাবী তরুণদের নিয়ে একই সুতোয় বেঁধে মালা গেঁথেছিলেন যার সুফল ধীরে ধীরে পেতে যাচ্ছিলো এই রাষ্ট্র। তাই তিনি সবসময় সুযোগ পেলেই যোগ্য লোকদের খুঁজে বের করে বিভিন্ন দায়িত্ব দিতেন যে কারনে জিয়ার রাস্ট্র পরিচালনা ছিলো সবচেয়ে সফল।