মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে এতো দ্রুত চলে গেলেন আনিসুজ্জামান!
আবুল বায়ান হেলালী:
স্বয়ং আদালতেই দাঁড়িয়ে মিথ্যা স্বাক্ষী দিতে আসা আনিসুজ্জামানকে সাকা চৌধুরী বলেছিলেন “উনি এক জনমে দুইবার শরণার্থী”।
সাকার কথা বাঁকা হলেই ইতিহাসের চরম তীক্ত সত্য কথা গলগল করেই যেন বলতে পারতেন তিনি,আনিসুজ্জামান এমন এক লোক,যে দুটো জন্মস্থানের পরিচয় দিয়ে বেড়াতো,আর ট্রাইবুনালে এসে ও তার জন্মস্থান কলকাতা হিসেবে পরিচয় দেয়,এরপর পাকিস্তান সরকারের কাছে রিফুজি হিসেবে পরিচয় দিয়ে ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানে আশ্রয় গ্রহণ করে,এরপর থেকে সুবিধামতো কোথাও কোথাও বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতে খুলনায় জন্মস্থান বলে প্রচার করতো।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহণের সুযোগ থাকা সত্বেও মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন নি আনিসুজ্জামান, চট্টগ্রামের রামগড়ে পালিয়ে এসে তার ভাইয়ের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করেন আনিসুজ্জামান,কারণ রামগড় সীমান্তটি তখন ভারতে পলায়নের অন্যতম পথ,সময় খারাপ দেখলে যাতে সেই সুযোগটিই নিতে পারেন,তাই মুক্তিযুদ্ধের কিছুই দেখেন নি আনিসুজ্জামান, শুধুই শুনেছেন,আর শুনা কথার উপর ভিত্তি করেই ট্রাইবুনালে সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে স্বাক্ষ দিতে চলে এসে ছিলেন আনিসুজ্জামান।
আমি জবানবন্দিতে আনিসুজ্জামান শুধু এটুকুই স্বাক্ষ দিয়েছেন,”আমি নূতন চন্দ্র সিংহের ছেলে প্রফুল্ল সিংহের কাছে শুনেছি।প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ আমাকে বলেছেন-সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ইঙ্গিতে পাকিস্তানি সেনারা তার বাবা নূতন চন্দ্র সিংহকে গুলি করে হত্যা করে”।ব্যাস,শুধু এইটুকু স্বাক্ষ দিয়েই আনিসুজ্জামান হয়ে যান সাকার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার প্রথমও প্রধান স্বাক্ষী।
এই স্বাক্ষী প্রদানের পর ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম আনিসুজ্জামানকে জেরা করেন।
জেরার বিবরণ নিম্নরূপ :
প্রশ্ন : আপনি সুস্থ আছেন?
উত্তর : জি।
প্রশ্ন : আপনি বলেছেন ভারতের কলকাতায় আপনার জন্ম।
উত্তর : জি।
প্রশ্ন কোন জেলায় আপনার জন্ম?
উত্তর : কলকাতা শহরে।
প্রশ্ন : আপনার প্রয়োজন অনুসারে আপনি আপনার জন্ম তারিখ ও স্থান বিভিন্ন সময় একেক জায়গায় একেক রকম লিখেছেন।
উত্তর : আমার জন্মস্থান খুলনার বলে একটি জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছিল। পরে আইনগতভাবে তা সংশোধন করা হয়েছে।
প্রশ্ন : আইনগতভাবে কখন আপনি জন্মস্থান খুলনা পরিবর্তন করে কলকাতা করেন?
উত্তর : ১৯৯৬ সালে।
প্রশ্ন : কিভাবে সংশোধন করেন?
উত্তর : ১৯৫৫ সালে পাসপোর্ট করার সময় যা ছিল তার পরিবর্তে ১৯৯৬ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করি জন্মস্থান সংশোধনের জন্য। মন্ত্রণালয় পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় জন্মস্থান সংশোধন করে খুলনার পরিবর্তে কলকাতা লেখার জন্য।
প্রশ্ন : ১৯৫৫ সালে আপনি যখন পাসপোর্টের জন্য দরখাস্ত করেন তখন আপনি নিজেই দরখাস্ত করে বলেছিলেন আপনার জন্মস্থান খুলনা।
উত্তর : জি।
প্রশ্ন : আপনি আপনার সুবিধা অনুসারে আপনার সন্তান ও স্ত্রী একেক সময় একেক মন্তব্য করেছেন।
উত্তর : যখন প্রয়োজন রয়েছে dependent হিসেবে সেখানেই বলেছি খুলনার কথা। অন্যত্র বলি নাই।
প্রশ্ন : ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় আপনিসহ আপনার পরিবার ভারত থেকে পাকিস্তানে চলে আসেন।
উত্তর : জি।
প্রশ্ন : তদন্ত কর্মকর্তার কাছে প্রদত্ত জবানবন্দীতে কি আপনি বলেছিলেন যে, দেশ বিভাগের পর আপনি ভারত থেকে পাকিস্তানে চলে আসেন। এ প্রশ্ন এবং উত্তর যাবে না বলে জানান ট্রাইব্যুনাল।
প্রশ্ন : ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর আপনার পরিবার ধর্মনিপেক্ষ ভারত ছেড়ে সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানে কেন এলেন?
এই প্রশ্নও যাবে না বলে রুলিং দেন আদালত।
প্রশ্ন : আপরনারা ঋফুজি হিসেবে পাকিস্তানে এসেছিলেন?
উত্তর : হ্যাঁ, তবে ঋফুজি হিসেবে পাকিস্তান সরকারের কোন সাহায্য-সহযোগিতা দাবি করি নাই।
প্রশ্ন : আপনার কি জানা আছে কত মুসলমান ভারত থেকে বাংলাদেশে শরণার্থী হয়ে এসেছিল?
উত্তর : সংখ্যা বলতে পারব না। তবে অনেক।
এমন মিথ্যা স্বাক্ষ দিয়ে হাস্যকর স্বাক্ষীদাতা হয়ে কেবলই সাকা চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকরের জন্য সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হন আনিসুজ্জামান, যেই পরিবারটির জন্ম ভারতের কলকাতায় হয়েও বাংলাদেশের রিফুজি থেকে নানাবিধ সুবিধা নিয়ে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন,বাংলাদেশের স্বার্থ হিসেব করতে গেলে জাতীয় অধ্যাপক নয়,ভারতীয় অধ্যাপক হিসেবেই অসাম্প্রদায়িকার নামে বাংলাদেশে ইসলামের চরম সর্বনাশ করে গেছেন আনিসুজ্জামান।
আনিসুজ্জামানের ছেলে আনন্দ জানায় তার পিতা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।ভারতীয় কোনো ডাক্তার বা ভারতীয় কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা পেলো না!
এদের জানাজা পড়ানো হারাম,তারপরেও হুজুর ভাড়া করে জানাজার জন্য এদের লাশ ফেলে রাখা হয়,যেই লোক আজীবন ইসলামের বিরোধীতা করে আবার ইসলামী নিয়ম মতে জানাজার সম্মান ও পেতে চায়,এদের লাশ তো বিনা জানাজায় পুতে ফেলাই উচিত।
মহান আল্লাহ আনিসুজ্জামানের মতো এই দেশের নাস্তিক মুরতাদদের কপালে হেদায়েত না থাকলে ধ্বংস করে দিক,সাকা চৌধুরীর জীবনের সকল গুনাহ্ মাফ করে তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুক,আমীন।