ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ১১০০ কোটি টাকার ক্ষতি: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে বিভিন্ন খাতে এক হাজার ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। আম্পান আঘাত হানার পর দিন বৃহস্পতিবার (২১ মে) সচিবালয়ে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, পানিসম্পদ, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক হিসাব দিয়েছে। প্রায় এক হাজার ১০০ কোটি টাকা ক্ষতির প্রাথমিক হিসাব আমরা পেয়েছি। অন্য যেসব মন্ত্রণালয় আছে তারাও রিপোর্ট দিয়েছেন, তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ তারা দেয়নি। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে উপকূলীয়সহ ২৬ জেলায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে, সারাদেশে মোট ক্ষয়ক্ষতির তথ্য জানতে অন্তত সাতদিন সময় লাগবে।
আম্পানের আঘাত হানার আগে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখায় আবহাওয়া অধিদপ্তর। মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আসায় ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের রিপোর্টের তথ্য উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের ২৬ জেলায় ১১০০ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ২০০টি ব্রিজ–কালভার্ট ও ২৩৩টি স্থানীয় সরকার কার্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো বেশিরভাগ বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, খুলনা এলাকায়। এছাড়া অনেকগুলো টিউবওয়েলের ক্ষতি হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য দিয়ে বলেন, বরিশাল ও খুলনা বিভাগে পাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া আম, লিচু, মুগডালের ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ১৫০ কোটি টাকার আমের ক্ষতি হয়েছে। সাতক্ষীরা, রাজশাহী ও চাপাইনবাবগঞ্জে আমের ক্ষতি হয়েছে। তবে, ধানের তেমন ক্ষতি হয়নি।
তিনি জানান, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে আমরা জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেবো যে আমগুলোর ক্ষতি হয়েছে সেগুলো ত্রাণের টাকায় কিনে যাদের খাদ্যসহায়তা দিচ্ছি তাদের মধ্যে বিতরণ করতে। এতে আম চাষিরা লাভবান হবেন, আমগুলোর সদ্ব্যবহার হবে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের ১৫০ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৮৪টি জায়গায় বাঁধের ফাটল ধরেছে বা ভেঙেছে। সেগুলোর জন্য তাদের ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা বাজেট ধরা হয়েছে। শুক্রবার থেকে বাঁধগুলোর সংস্কার কাজ শুরু হবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের তথ্য দিয়ে প্রতিমন্ত্রী জানান, বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় অনেক জায়গায় তাদের নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন আছে। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে এবার যেহেতু আমরা পশুদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যেতে পেরেছিলাম এজন্য গবাদিপশুর খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কিন্তু মৎস্য চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালীতে প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার ৫০০ চিংড়ি ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে ৩২৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রাণিসম্পদের ক্ষতি হয়েছে এক কোটি ৪০ লাখ টাকা।
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, শিক্ষাখাতের খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। পূর্ত মন্ত্রণালয়ের সামান্য ক্ষতি হয়েছে, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো ক্ষতি হয়নি।
ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি ঠিক করার জন্য ঘূর্ণিঝড় উপদ্রুত প্রতিটি জেলায় ৫০০ বান্ডেল করে টিন ও ১৫ লাখ করে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ত্রাণের জন্যও চাল ও নগদ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ত্রাণের মজুদ পর্যাপ্ত আছে।
শুক্রবার সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালীসহ ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলো তিনি পরিদর্শনে যাবেন বলে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।