বাংলাদেশের সন্তান বাদলকে বিশেষ সম্মাননা দিলো নিউইয়র্ক স্টেট সিনেট
নিউইয়র্ক : করোনা মহামারির মধ্যেও প্রয়োজনীয় সামগ্রি হ্রাসকৃত মূল্যে বিক্রির মধ্যদিয়ে জনসাধারণকে করোনা থেকে সুরক্ষায় অপরিসীম ভূমিকা পালনের জন্য ‘আরএলবি গ্রুপ অব কর্পোরেশন’র কর্ণধার আকতার হোসেন বাদলকে নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটরের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। করোনাকালে বিশেষ অবদান রাখার জন্য নিউইয়র্ক স্টেট সিনেট ডিস্ট্রিক্ট ৯-এর সিনেটর টোড কামেনস্কাই আকতার হোসেন বাদলকে গত ৮ মে এ সম্মাননা প্রদান করেন।
জানা যায়, ‘আরএলবি গ্রুপ অব কর্পোরেশন’র কর্ণধার আকতার হোসেন বাদলের মালিকানাধীন ‘আরএলবি সেইফটি অ্যান্ড হার্ডওয়্যার স্টোর’ লং আইল্যান্ডের ওসেনসাইড এবং লিনব্রুকে করোনাকালে সপ্তাহের ৭দিনই সকাল-সন্ধ্যা খোলা রাখছে। দুটি স্টোরেই ন্যাশনাল সেইফটি স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী পণ্য আমদানি ও বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশী মালিকানাধীন এই স্টোর দুটিতে মাস্ক, সেনিটাইজার, গ্লাভস এবং চিকিৎসক-নার্স-পুলিশ-ফায়ার সার্ভিস-ইলেকট্রিসিয়ান-ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান ছাড়াও কন্সট্রাকশন কাজের সময়ে বিশেষভাবে জরুরী বুট, শার্ট, ব্লেজার, ক্যাপ ইতাদি হ্রাসকৃত মূল্যে বিক্রির মধ্যদিয়ে জনসাধারণকে করোনা থেকে সুরক্ষায় অপরিসীম ভূমিকা পালন করছে। এ সেবা প্রদানের মধ্যদিয়ে এলাকাবাসীর প্রশংসা কুড়ায় স্টোর দুটি। বিষয়টি নজর এড়ায়নি নিউইয়র্ক স্টেট সিনেট ডিস্ট্রিক্ট ৯-এর সিনেটর টোড কামেনস্কাইরও।
‘আরএলবি গ্রুপ অব কর্পোরেশন’র কর্ণধার আকতার হোসেন বাদল স্টেট সিনেটরের সম্মাননা প্রাপ্তির বিষয়ে বলেন, এ প্রাপ্তি আমার একার নয়, এ প্রাপ্তি গোটা বাংলাদেশী কমিউনিটির। তিনি বলেন, মানুষ মানুষের জন্য- সেবার এ মনোভাব নিয়েই কাজ করছি। নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে করোনা-ভীতির মধ্যেও নিয়মিত স্টোর খোলা রাখছি। চরম এই দু:সময়েও এলাকাবাসীর পাশে রয়েছি। বৃহত্তর কুমিল্লার চাঁদপুরের সন্তন বাদল বলেন, যাদের সাথে সারাবছর ব্যবসা করি, সেই কমিউনিটির এই দু:সময়ে পাশে থাকাকে আমি আমিার নৈতিক দায়িত্ব মনে করছি। সে তাগিদ থেকেই সকলকে যথাসাধ্য হেল্্প করার চেষ্টা করছি।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশী মানুষ আক্রান্ত এবং মারা গেছেন নিউইয়র্ক স্টেটের নিউইয়র্ক সিটি এবং লং আইল্যান্ডে। এরফলে অনেক স্টোরই বন্ধ হয়ে যায়। এমন সময়েও শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত ওসেনসাইড এবং লিনব্রুকে আকতার হোসেন বাদলের জরুরী এবং অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের স্টোর আরএলবি সেইফটি অ্যান্ড হার্ডওয়্যার স্টোর নিয়মিত খোলা রাখা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বাঙালী কমিউনিটিতে অত্যন্ত পরিচিত মুখ আকতার হোসেন বাদল। মূলধারায়ও ব্যাপক পরিচিতি ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন এই বাংলাদেশেী-আমেরিকান। জানা যায়, চাঁদপুরের সন্তান আকতার হোসেন বাদল স্টুডেন্ট ভিসায় আসেন যুক্তরাষ্ট্রে। লেখা-পড়া শেষ করে নেমে পড়েন কঠিন জীবন সংগ্রামে। সেল্সম্যান’র কাজ নেন নিউইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কসের একটি জুতার দোকানে। সেই দোকানেই পরিচয় ঘটে স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধির সঙ্গে। পরিচয় থেকে সান্নিধ্য। ওই জনপ্রতিনিধির পরামর্শেই শুরু করেন কন্সট্রাক্শন ঠিকাদারি। গড়ে তোলেন ‘আরএলবি জেনারেল কন্সট্রাকশন’ নামে একটি কন্সট্রাক্শন প্রতিষ্ঠান। নিরলস শ্রম, সততা ও নিষ্ঠার গুণে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি কর্মপাগল আকতার হোসেন বাদলকে। যেখানেই হাত দিয়েছেন সেখানেই ফলেছে সোনা। নিউইয়র্ক সিটি এবং স্টেটের কন্ট্রাক্টর হিসেবে অতি অল্প সময়েই খ্যাতি অর্জন করে তার মালিকানাধীন ‘আরএলবি জেনারেল কন্সট্রাকশন’। বাড়তে থাকে তার ব্যবসায় পরিধি। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ‘আরএলবি জেনারেল কন্সট্রাকশন’ রূপ নেয় ‘আরএলবি গ্রুপ অব কর্পোরেশন’ এ।
‘আরএলবি গ্রুপ অব কর্পোরেশন’র কর্ণধার আকতার হোসেন বাদল নিজেই তুলে ধরেন আমেরিকান বহুজাতিক সমাজে তার উত্থানের সেই গল্প। তিলে তিলে গড়ে ওঠা ২১ বছরের সাফল্য গাঁথা। ব্যবসায় পথ-পরিক্রমায় নানা ঘটনা তুলে ধরে বাদল জানান, নিজের ‘আরএলবি জেনারেল কন্সট্রাকশন’ কাজের জন্যে বিভিন্ন স্টোর থেকে প্রয়োজনীয় সব কাঁচামাল ক্রয় করতে হতো উচ্চমূল্যে। সেই বিষয়টি গভীরভাবে অনুধাবন করেই অতি সম্প্রতি নিউইয়র্ক সিটি সংলগ্ন লং আইল্যান্ডে সানরাইজ হাইওয়েতে গড়ে তোলেন ‘সেইফটি হার্ডওয়্যার’ নামে একটি স্টোর। এর পর থেকে কন্সট্রাকশন’ কাজের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের যোগান হয় নিজ স্টোর থেকেই। ব্যাপক সাশ্রয় হয় পণ্য মূল্য। বাড়ে প্রফিটও।
মূলধারার ব্যবসায়ী আকতার হোসেন বাদল জানান, এর আগে কন্সট্রাকশন কাজের সূত্রে পানামা, ডমিনিকান রিপাবলিক এবং ব্রাজিল থেকেও প্রয়োজনীয় দ্রব্য-সামগ্রি আমদানি শুরু করে আরএলবি গ্রুপ। চীনের সাথেও রয়েছে তার ব্যবসা। ব্যবসার পরিধি বেড়ে চলেছে অন্যান্য দেশেও।
গত বছরের ৭ নভেম্বর আমেরিকান স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে চলার ২১ বছর পূর্তি উৎসব করে ‘আরএলবি গ্রুপ অব কর্পোরেশন’। নিউইয়র্কের কুইন্সে নর্দার্ণ বুলেভার্ডে বিলাসবহুল একটি পার্টি হলে বর্ণাঢ্য আয়োজনে গ্রুপটি উদযাপন করে ২১ বছর পূর্তি উৎসব। অনুষ্ঠানে ‘আরএলবি গ্রুপ অব কর্পোরেশন’র কর্ণধার আকতার হোসেন বাদলকে বিশেষ সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করে আমেরিকার কন্সট্রাকশন সেক্টরের খ্যাতনামা কয়েকটি কোম্পানি। এসময় ‘আরএলবি গ্রুপ অব কর্পোরেশন’ এবং এর কর্ণধার আকতার হোসেন বাদলকে নিয়ে নানা অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেন এসব খ্যাতনামা ব্যবসা-কন্সট্রাকশন কোম্পানী এবং এমটিএ’র শীর্ষ কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানে আমেরিকায় মহাসড়ক, সেতু এবং এয়ারপোর্ট নির্মাণে খ্যাতনামা ‘টুলি গ্রুপ কোম্পানী’র কর্ণধার টম টুলি ‘আরএলবি গ্রুপ অব কোম্পানী’কে ক্রেস্ট প্রদানকালে বলেন, ‘সততা, নিষ্ঠা আর একাগ্রতার মাধ্যমে ভাগ্য বদলে আকতার হোসেন বাদল অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। ব্যবসায়ী আকতার হোসেন বাদলের মাধ্যমে বাংলাদেশী-আমেরিকানদের সম্পর্কে তাদের কোম্পানির চমৎকার একটি ধারণা জন্মেছে।
অনুষ্ঠানে বাদলকে ক্রেস্ট প্রদান করেন কন্সট্রাকশন সেক্টরে খ্যাতনামা আরেকটি কোম্পানি ‘এইচএইচজেআর’র কর্ণধার হেনরী হিন্টন জুনিয়রও। এ সময় তিনি বলেন, ল্যান্ড অব অপচুনিটির দেশ হচ্ছে আমেরিকা। সারাবিশ্বের উদ্যমী মানুষেরা এখানে আসেন নিজের ভাগ্য গড়তে। তবে ভাগ্য হাতের মুঠোয় আসে কঠোর শ্রমে। বাদল তেমনই একজন ব্যবসায়ী-যিনি প্রতিটি কাজই পরম নিষ্ঠার সাথে সম্পন্ন করেন।
ডিকিজ ম্যানুফেক্টচারিং কোম্পানীর নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক কারটেনও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন আরএলবি গ্রুপ অব কর্পোরেশনের সিইও বাদলের। ক্রেস্ট প্রদানের পর তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়িক লেন-দেনের মাধ্যমে বাদলের সাথে আমাদের সম্পর্ক এতটাই আস্থার জায়গায় যে, আরএলবির উপর আমাদের কোম্পানীর নির্ভরতা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
খ্যাতনামা টিম্বারল্যান্ড কোম্পানীর নির্বাহী কর্মকর্তা ডেভ মারটিন বলেন, আমেরিকান স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে বাদলের ভূমিকা নবাগতদের জন্যে অনুকরনীয়।
মার্কিন এটর্নী পেরী ডি সিলভার বাদলের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা-যোগ্যতা ও সামাজিক কর্মকান্ডের প্রশংসা করে বলেন, বাদলের মত কর্মঠ লোকজনের কারণে বাংলাদেশীরা দ্রুত মূলধারায় সম্পৃক্ত হতে সক্ষম হচ্ছে।
নিউইয়র্ক স্টেটের এমটিএ’র ডেপুটি চীফ ডেনি কামাচো বলেন, কন্সট্রাকশন কাজে অনেক সুযোগ রয়েছে। নিষ্ঠার সাথে কজ করে সে সুযোগ ভোগ করছে আরএলবি।
ওইসময় ‘আরএলবি গ্রুপ অব কর্পোরেশন’র সিইও আকতার হোসেন বাদল বলেন, ‘গত ২১ বছর আমি এসব মানুষের যে আন্তরিক সহযোগিতা পেয়েছি তা ভাষায় ব্যক্ত করার মতো নয়। তারা নিজ পরিবারের সদস্যের মতই আপন করে নিয়েছে আমাকে। এতে অনেক বড় কাজও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পাদন করা কঠিন বলে মনে হয়নি। আশা করি ভবিষ্যতেও তাদের সান্নিধ্যে স্বপ্নের পথ পাড়ি দিতে সক্ষম হবো।’
ওই অনুষ্ঠানে ইকুইপমেন্ট রেন্টাল এ্যাবল’র ভাইস প্রেসিডেন্ট পেরী রোসেন, নিউইয়র্ক টার্প কোম্পানীর কর্ণধার ক্রিস্টফার এরাপিস, স্মার্ট কোসনের আঞ্চলিক ম্যানেজার জিওফ গুইজ, টিডি ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট রেমন্ড অং, করেণ ঝেং, খ্যাতনামা ব্যবসায়ী ডিন ডেভ, মোহাম্মদ ইফরান, গ্রেবিয়েল সিনাগ্রা, মাজালি পেরু, ক্লাউডিয়া কুইন্টারো, স্যান্ড্রা ইয়োনানা পুলিডো, থমাস এন্দানেসমোরা, চ্যান জুয়ান কুইন, ফ্র্যাঙ্ক ফুয়াদ, মারলন কোল, সাংবাদিক সহ অর্ধ শতাধিক ব্যবসায়ী-এক্সিকিউটিভ উপস্থিত ছিলেন।