আমার হাত দিয়ে বাবুর নাম কাটতে হবে? -ড: আসাদুজ্জামান রিপন এর হৃদয়স্পর্শী প্রতিবেদন!
প্রিয় অনুজ সফিউল বারী বাবু’র অকাল মৃত্যুতে স্বেচ্ছাসেবক দল আজ পার্টি অফিসের নীচে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছিল। মনের আকুতি থাকা স্বত্বেও যাইনি। সমবেত স্হানে স্বাস্হ্যঝুঁকির কাছে আবেগের পরাজয় ঘটেছে! কিন্তু ওর জন্য দোয়া ছিল অহর্নিশ… অন্তরের অন্তঃস্হল থেকে…। আল্লাহ তোমাকে কবুল করুন।
সাবেক ছাত্রদল সভাপতি – সাধারণ সম্পাদকগণের নামে আমরা মাঝে মধ্যে যৌথ সভা করি, যৌথ বিবৃতিও দেই। সফিউল বারী বাবুও তাতে সংশ্লিষ্ট থাকতো।
এবার ওর মৃত্যুতেও শোক প্রকাশ করে যখন বিবৃতি তৈরি করছিলাম, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ফোন করে জানালো, ‘ভাই, বাবু’র নামটা কিন্তু বাদ যাবে’! কথাটা শুনে বুকটা মোচর দিয়ে উঠলো! আমার হাত দিয়ে বাবুর নাম কাটতে হবে? আমি তখন আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলামনা।
বাবু’র জন্য দেয়া শোক বিবৃতিতে- সাবেক শীর্ষ ছাত্রনেতাদের তালিকা থেকে বাবু’র নাম বাদ পরলো! এভাবে একে একে অনেকেই হয়তো বাদ পরবে সময়ের পরিক্রমায়! কারণ মৃত্যুর স্বাদ যে সবাইকেই নিতে হবে, এযে কত সত্য কথা!
নেতৃত্বের বিচক্ষণতা, দৃঢ়তা ও আপসহীনতার প্রশ্নে বাবু এক অনন্য উচ্চতায় পৌছে গিয়েছিল তার সময়ে।
বাংলাদেশে গনতন্ত্রের সঙ্কটকালীন সময়ে বিশেষ করে তথাকথিত ১/১১’র সময়ে মাইনাস রাজনীতির বিরুদ্ধে তার কমিটমেন্টের জন্য ছাত্র রাজনীতির প্রাসঙ্গিকতায় বাবু’র নাম উল্লেখযোগ্যভাবেই উচ্চারিত হয়েছে ঐসময়।
আমি বিশ্বাস করতাম, বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতি থেকে জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার যোগ্যতা তার ছিলো। সে খুব সফলভাবেই ধানের শীষকে ধারন করতে পারতো। পার্লামেন্টে ছাত্রদলের সাবেক অন্যতম শীর্ষনেতা হিসেবেও সে আলো ছাড়াতে পারতো। অসময়ে তার মৃত্যুতে- এক অমিত সম্ভাবনাময় নেতৃত্ব থেকে জাতীয়তাবাদীরা বঞ্চিত হলেন।
সদালাপী, নিরহংকারী কিন্তু শানিত মেধার অধিকারী এই সাবেক ছাত্রনেতা বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্মাণে একজন প্রতিশ্রুতিশীল সংগঠক ছিলো নিঃসন্দেহে ।
রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে শত নির্যাতনের মুখেও তাঁর সাহসী কন্ঠ ছিল বরাবরই উচ্চকিত।
তাঁর মৃত্যুতে আমরা প্রকৃত পক্ষেই একজন ত্যাগী ও অাদর্শিক সংগঠক হারালাম। এ শুন্যতা অনুভুত হবে আমাদের কাছে দীর্ঘকাল।
তার অল্প সময়ের জীবনে এমন অনেক দৃষ্টান্ত সে রেখে গেছে যা আমাদের সংগঠনের লক্ষ নেতা- কর্মীর জন্য তা অনুপ্রেরণা হতে পারে।
শারীরিকভাবে সফিউল বারী বাবু’র উপস্হিতি ছিলো আমাদের সবার কাছে এতোদিন।
সফিউল বারী বাবু, তুমি কি জানো,
তুমি আসলেই আমাদের ছেড়ে চলে যাওনি?
তুমিতো আমাদের মাঝেই আছো…
সবসময় আমাদের ভাবনায় তুমি বেঁচে থাকবে।
কারণ তোমার এবং আমাদের সবার লক্ষ্য, ভাবনা যে এক- তা হলোঃ সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজব্যবস্হার সূচনার মাধ্যমে জনগনের ক্ষমতায়ণের মধ্য দিয়ে জনগনের সরকার প্রতিস্ঠা করার কাজকে এগিয়ে নেয়া এবং সে প্রচেস্টাকে সংহত করা। এটাও কিন্তু একটি আন্দোলন। এ চেস্টাটা আমাদের সবাইকে চালিয়ে যেতে হবে।
রাজনীতিতে, সমাজে একটা পরিবর্তন আনতেই হবে, পরিবর্তন আসতেই হবে। যেভাবে চলছে, এটাকে চলা বলেনা…এসব বিষয়ে অনেকবারই কথা হয়েছিলো তোমার সাথে। তুমিও একমত ছিলে।
পরম করুনাময় আল্লাহ তাঁর নিজ অনুগ্রহে আমাদের প্রিয় ভাইটিকে জান্নাতুল ফেরদৌসে স্হান দান করুন।
তােমার সন্তানদের ও তোমার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি। আল্লাহ তার পরম মমতায় ওদের নিরাপত্তা দান করুন, মঙ্গল দান করুন।