পরিচয় জেনে নিশ্চিত হয়েই মেজর রাশেদ সিনহার বুকে পর পর তিন রাউন্ড গুলি করে লিয়াকত!
নিউইয়র্ক ডেস্ক: : কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন সেনাবাহিনীর মেজর (অব:) সিনহা মোঃ রাশেদ খান। গত ৩১ জুলাই রাতে এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকায় ডকুমেন্টারি ফিল্মের শ্যুটিং শেষে ফেরার পথে টেকনাফের শামলাপুর চেকপোষ্টে সেনাবাহিনীর মেজর (অব:) সিনহা মোঃ রাশেদ খানকে গুলি করে হত্যা করেন বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) লিয়াকত।
সেনাবাহিনীর `এএসইউ`র সার্জেন্ট আইয়ুব আলী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে গুলিবিদ্ধ মেজর সিনহার ছবি তুলতে চাইলে তার পরিচয়পত্রসহ মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় পুলিশ। সরকারের একটি সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য। অন্যদিকে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাজাহান আলীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইউটিউব চ্যানেলের জন্য নির্মিতব্য ভ্রমণ সহায়ক একটি ডকুমেন্টারির শ্যুটিংয়ের কাজ করছিলেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা। গত ৩ জুলাই ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের `ফিল্ম এন্ড মিডিয়া` বিভাগের তিনজন শিক্ষার্থীকে সাথে নিয়ে শ্যুটিংয়ের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার জেলার টেকনাফের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় যান তিনি।
প্রায় ১ মাস যাবত বিভিন্ন এলাকায় চিত্র ধারণ শেষে গত ৩১ জুলাই রাত আনুমানিক সাড়ে আটটার দিকে এক শিক্ষার্থীকে সাথে নিয়ে পাহাড় থেকে ফেরার পথে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি তাদের `ডাকাত` সন্দেহ করে পুলিশকে অবহিত করে। পাহাড় থেকে নেমে মেজর সিনহা এবং তার সাথে থাকা সিফাত নামের শিক্ষার্থী নিজস্ব প্রাইভেট কার নিয়ে মেরিন ড্রাইভ হয়ে কক্সবাজার জেলা শহরের উদ্দেশ্যে রওনা করেন।
পথে শামলাপুর বিজিবি চেকপোষ্টে তাদের তল্লাশী করা হয় এবং পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু রাত ৯ টায় শামলাপুর পুলিশ চেকপোষ্টে পৌঁছার সাথে সাথে এসআই লিয়াকত তাদেরকে থামান। এসময় মেজর সিনহা তার পরিচয় দিলে প্রথমে চলে যাওয়ার ইঙ্গিত দেন লিয়াকত। কিন্তু পুনরায় গাড়িটি থামিয়ে মেজর সিনহা এবং সিফাতের দিকে পিস্তল তাক করে গাড়ি থেকে নামতে বলেন। গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথে কোন কথাবার্তা বলার সুযোগ না দিয়েই সিনহার বুকে পর পর তিন রাউন্ড গুলি করেন লিয়াকত।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, গুলি করার পর রাত আনুমানিক ৯ টা ৪০ মিনিটে স্থানীয় লোকজন এবং সেনাবাহিনীর `এএসইউ`র একজন সার্জেন্ট ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মেজর সিনহাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এএসইউ` র ওই সদস্য নিজের পরিচয় দিয়ে সিনহার গুলিবিদ্ধ অবস্থার একটি ছবি তুলতে চাইলে তার পরিচয়পত্রসহ মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় পুলিশ। পরবর্তীতে পুলিশের একটি মিনি ট্রাকে করে রাত ১ টা ৪৫ মিনিটে মেজর সিনহাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে, মেজর সিনহার সাথে থাকা শিক্ষার্থী সিফাতকে আটক করে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশের ভাষ্যমতে, তাদের গাড়ি থেকে ইয়াবা এবং গাঁজা উদ্ধার করা হয়ে। এছাড়া তাদের হোটেলের কেবিনেও দেশি-বিদেশি মদ ও গাঁজা পাওয়া গেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, রাজনৈতিক অধিশাখা-২ থেকে মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শাহজাহান আলীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিটি তাদের প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খান ২০১৮ সালে সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। তার বাবা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপসচিব মোঃ এরশাদ খান একজন মুক্তিযোদ্ধা। অবসর গ্রহণের পর থেকে মেজর সিনহা `জাস্ট গো` নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য বিভিন্ন ডকুমেন্টারি ভিডিও তৈরি করতেন।