১৭ই আগস্ট নেছারী হুজুরের মৃত্যু বার্ষিকী
বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর সিনিয়ার নায়েবে নাযেম ও সুবিদখালী দারুসুন্নাত ফাজিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা
জনাব আলহাজ্জ হযরত মাওঃ মুহাঃ আবদুল আযীয নেছারী সাহেব রহ: এর মৃত্যু বার্ষিকি ১৭ আগষ্ট।
আমার প্রাণপ্রিয় নানাজান – দক্ষিন বাংলার প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, ছারছীনা দরবার শরীফের বিশিষ্ট খলীফা, বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর সিনিয়ার নায়েবে নাযেম, প্রসিদ্ধ তাফসীর “তাফসীরে নেছারী” সহ বহু দ্বীনি গ্রহন্থের লেখক, ছারছীনা দারুস্সুন্নাত আলিয়া মাদ্রাসার সুযোগ্য মুদাররিস (শিক্ষক) জনাব আলহাজ্জ হযরত মাওঃ মুহাঃ আবদুল আযীয নেছারী সাহেব রহ: (সুবিদখালী হুজুর)।
মাওলানা আবদুল আযীয নেছারী ১৯২২ সালে পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার আমড়াগাছিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতার নাম আলহাজ্জ মাওঃ মোঃ হোসাইন আহমদ। তিনি ছিলেন পিতা মাতার একমাত্র সন্তান। ১৯৩৮ সালে ছারছীনা মাদ্রাসায় দ্বিতীয় শ্রেনীতে ভর্তি হন। সেখান থেকে সুনামের সহিত সব ক্লাশে প্রথম স্থান অধিকার করে ১৯৫১ সালে কামিল সমাপ্ত করেন। কামিল পাশের পর তিনি পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া ফাজিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন । সেখানে কিছুদিন সুনামের সহিত অবস্থান করেন এবং মরহুম হযরত পীর সাহেব হুজুরের নির্দেশে ও তার দিক নির্দেশনায় নিজ এলাকা সুবিদখালীতে ১৯৬৩ সালে “সুবিদখালী দারুসসুন্নাত ফাজিল মাদ্রাসা” প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তিতে হুজুর কেবলার নির্দেশে ১৯৭১ সালে ছারছীনা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। ছাত্র জীবন থেকে তিনি ইলমে মারেফাতের চর্চা শুরু করেন। তিঁনি ছিলেন কুতবুল আলম আল্লামা হযরত মাওঃ শাহ সূফী নেছারুদ্দীন আহমদ (রহঃ) এর হাতে গড়া যোগ্য উত্তর সূরী এবং মুজাদ্দিদে যামান আলহাজ্জ হযরত মাওঃ শাহ সূফী আবু জা‘ফর মুহাঃ ছালেহ ছাহেব (রহঃ) এর খলীফা। ইসলাম প্রচার ও প্রসার ছিল তাঁর দৈনন্দিন জীবনের ব্রত। ২০০৬ সালের ১৭ আগষ্ট বিকাল ৫.১৫ মিনিটের সময় ইন্তিকাল করেন। তার নামাজে জানাযার ইমামতি করেন ছারছীনা দরবার শরীফের পীর সাহেব হুজুরের পাঠানো প্রতিনিধি ছারছীনা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জনাব মাওলানা মোহাম্মদ আমজাদ হুসাইন খাঁন।
————-
নানা ভাই আমাকে ”মাঝাভাই” বলে ডাকতো, তাঁর ডাক আমার কাছে কতই না প্রিয় ছিল, আমি ২০০৬ সালে তখন পটুয়াখালী পলিটেকনিকে পড়াশুনা করতাম, মাঝে মাঝে নানা অনেক কিছু নিয়ে আমাকে দেখতে যেতেন। তাঁর ইন্তিকালের দিনও আমি পটুয়াখালীতে, নানা আমাকে খবর দিতে বললেন যে, ওকে আসতে বলো, আমি খুব ভোর বেলাই চলে আসলাম, এসেই নানা ভাইয়ের রুমে গেলাম,তিনি তখন শোয়া ছিলেন আমাকে দেখা মাত্রই আমাকে বুকে জড়িয়ে নিলেন এবং অনেক নছিয়ত করলেন, আর বললেন “ মাঝাভাই পড়াশুনা যেখানেই কর না কেন, আল্লাহ ও তার রাসুলের পথ ও আদর্শ , যেন পরিবর্তন না হয়, রাসুলের সুন্নত আকড়ে ধরবা, ছারছীনা দরবারের খেদমত করবা, পীর সাহের হুজুর যে নছিয়ত করবেন, তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবা” । অতঃপর আমি বাসায় গেলাম একটু পর পর তার কাছে আসতাম, তো এক সময় নানা ভাই্, আমাকে,আমার আব্বু, বড় ভাই এবং আরো অনেককে বললেন, আমার রুমে আল্লহর অনেক সম্মানিত মেহমান আসতেছেন আমি দেখতেছি, তোমরা এমন কিছু করবানা যাতে বেয়াদবি হয়, আমি কিছুই বুঝতাম না নানাভাই কি বলছে আসলে, আবার বলতো আমার কাছে এতলোক কারা আসা যাওয়া করছে। তো এভাবে চলতে থাকে, দুপুরে বাসা থেকে খাবার আমি তার রুমে নিয়ে আসলাম,প্রচন্ড অসুস্থ তাই তেমন কিছুই খাননি। বিকাল ৩.০০ টার দিকে আবার অসুস্থ হয়ে পড়লেন আমি একবারে কাছে গেলাম, মুখে জিকির চলছে..ডান হাতের শাহাদাৎ আঙ্গুল তুলে বার বার এক আল্লাহ তায়ালার সাক্ষ্য দিচ্ছিলেন অথচ তিঁনি বেহুশ। এভাবে চলতে থাকে। বিকাল ৫ টার দিকে সকলে আসরের নামাজে মসজিদে গেছে শুধুমাত্র আমি, আমার ছোটভাই মহিউদ্দিন, ভগ্নিপতি আঃ হাকিম পাশে বসা ছিলাম ঠিক ৫.১৫ সময় আমার অতি মহব্বতের নানাভাই একটু নড়াচড়া করলেন এবং ঐ সময়ই আল্লাহ তায়ালার ডাকে সারা দিয়ে ইহধাম ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমান।( ইন্নালিল্লাহহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।