ভারত প্রকাশ্যে বলুক বাংলাদেশ স্বাধীন নয়
মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন: ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে খবর আসে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব শ্রিংলা ১৮ আগষ্ট মোদির বিশেষ বার্তা নিয়ে তথাকথিত ঝটিকা সফরে যাচ্ছেন। কথিত এই তুফান সফর সম্পর্কে ভারত সরকার বাংলাদেশের সাথে কোন যোগাযোগ করেনি। পররষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সাথেও যোগাযোগ করা হয় নি। কিছু না বলেই শ্রিংলা বাংলাদেশে হাজির। এই ধরনের অনুপ্রবেশ বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করার শামিল।
ভারতের নেতৃত্বকে প্রকাশ্যে বলতে দিতে হবে-তারা বাংলাদেশকে কার্যকর স্বাধীন-সার্বভৌম পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য করে কী না? নাকি বাংলাদেশ ভারতের কোন রাজ্য কিংবা জমিদারীর অংশ যেখানে যখন তখন নিজেদের ইচ্ছা মতো ভারতীয়রা ঢুকে যাবে। ভারতীয় নেতৃত্বের হাবভাব দেখে মনে হয় তাদের মনস্তত্বে বাংলাদেশ তাদের ছায়ারাষ্ট্র। কুটনীতির সামান্যতম শিষ্ঠাচার এবং শরম থাকলে বিনা দাওয়াতে শ্রিংলা বাংলাদেশে ঢুকতো না। কট্টর সাম্প্রদায়িক ও মুসলিমবিদ্বেষী আরএএস ও ইসকনের গোঁড়া সদস্য হর্ষবর্ধন শিংলাকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়াই ঠিক হয় নি। এটাই ছিল তার এবং ভারতের জন্য উপযুক্ত প্রাপ্য ও শিক্ষা। রীভা গাঙ্গুলীকে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে ডেকে এনে শক্তভাবে বলে দেয়া দরকার: ভবিষ্যত কোন ভারতীয় অভ্যাগতকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হবে না।
একটি স্বাধীন দেশে অন্য দেশের কর্মকর্তা আসলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই দিন-ক্ষণ, এমনকি সফরের আলোচ্যসূচি ঠিক হয়, সেটা যতোই তুফান সফর হোক। এর আগেও ভারতের কেউ কেউ কথিত তুফান সফরে বাংলাদেশে এসেছেন। কোন দেশ গুরুত্বহীন কিংবা আজ্ঞাবহ হলে এই তুফান সফরের তকমা লাগানো হয়। প্রভুদেশের কর্মকর্তারা দু-চার ঘন্টার জন্য আসেন। এটা অনেকটা জমিদারী দেখার মতো পাইক-পেয়াদাদেরকে দমক ও কিংবা নির্দেশ দেয়ার জন্য। বলা হয়েছিল শ্রিংলা তেমন সফরেই মাত্র ক’ঘন্টা ঢাকায় অবস্থান করে ওই দিনই ফেরত যাবেন। কিন্তু বাস্তবতা তেমনটি ছিল না।
তাকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কেউ যাননি। ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ তাকে স্বাগত জানিয়েছেন। শেখ হাসিনার সাথে দেখা করার জন্য তাকে দীর্ঘ সময় হোটেলে কাটাতে হয়। বিকেলের বৈঠক হয় রাতে। বৈঠকে কাউকেই রাখা হয় নি। এমনকি কোন ফটো সাংবাদিককেও না। সংবাদ মাধ্যমে যে ছবি দেখানো হয়েছে, তা ছিল পুরানো। ওটা ছিল গত মার্চ মাসের ছবি। ওই সময়েও শেখা হাসিনার সাথে শ্রিংলার বৈঠক হয়েছিল।
বৈঠকে কী কথা হয়েছিল তা কেউ জানে না। এমনকি মোদির কথিত বার্তা হস্তান্তরের খবরও নেই। ঢাকার দৈনিক ‘মানবজমিন’এর অনলাইন সংস্করণে বলা হয়েছে মোদির কথিত বার্তা ছিল মৌখিক। তথ্যাভিজ্ঞমহল মনে করেন আসলে বার্তা ছিল একটি অজুহাত। আসল উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাকে শাসানো, বলা দেয়া চীনের সাথে হাত মিলালে ‘তক্তা’ থাকবে না।
শ্রিংলার বাংলাদেশে আসার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশের শহর-গ্রামের মানুষের নানা ধরণের ধারণা তৈরি হয়। এগুলোর মধ্যে প্রাধান্য পায়: খুনি প্রদীপকে বাঁচানোর জন্য শ্রিংলাকে শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়েছে। দ্বিতীয় ধারণা ছিল: শেখ হাসিনা যেন চীন থেকে সরে আসেন, সেটা না করলে ভারতীয় সমর্থন থেকে তিনি যে বঞ্চিত হবেন তেমন ধমক দেয়া ।
তেমন ধমক দেয়ার সংক্ষিপ্ত কারণগুলো ঢাকার মানবজমিন পত্রিকা কিছুটা খোলাসা করেছে। এগুলো হলো: ১. বাংলাদেশে চীনের উপস্থিতি নিয়েই বেশি উদ্বিগ্ন ভারত। ২. বিশেষ করে তিস্তা প্রকল্পে চীনের ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার খবর ভারতকে বিচলিত করেছে। ৩. চীনা ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা বাংলাদেশে চালানোর ছাড়পত্র দেয়ায় ভারতের উদ্বেগের মাত্রা আরও বেড়েছে। ৪. সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর প্রকল্পে চীনা অর্থায়নকেও ভারত সন্দেহের চোখে দেখছে। ৫. পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে ভারত উদ্বিগ্ন। ৬. লাদাখে ২০ জন ভারতীয় সৈন্য মারা যাবার পর বাংলাদেশ নিন্দা না করায় ভারত উদ্বিগ্ন।
ভারতের এই ধরনের উদ্বিগ্নতার, মূলত আপত্তি তথা বিরোধিতার দিকে তাকালে মনে হয় ভারত বাংলাদেশকে একটি পৃথক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে মনে করে না। ভারতীয়রা মনে করে ভারত কিংবা ভারতের পছন্দসই দেশ ছাড়া অন্যকোন দেশের সাথে কোন ধরনের সম্পর্ক করার অধিকার বাংলাদেশের নেই। ভারতের শক্তি থাকুক, কিংবা না-ই থাকুক, বাংলাদেশের সব কাছ ভারতকে দিয়েই করাতে হবে। ভারতকে তোয়াক্কা করে না, এমন কোন দেশের সাথে বাংলাদেশের গভীর সম্পর্কের ব্যাপারে ভারতের কড়া আপত্তি আছে। কথাটা প্রকাশ্যে বলতে পারছে না যে চীনের উপস্থিতি বাংলাদেশের উন্নয়নে চীনকে বিদায় করতে হবে। তাই ঘুরিয়ে বলছে তারা ‘উদ্বিগ্ন’।
অথচ এই চীনই ভারতের বিভিন্ন ভৌত কাঠামো নির্মাণে সরাসরি জড়িত। ভারত চীনের কাছ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। আনন্দবাজার ভারতের প্রথম শ্রেণীর সব সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে মোদিসহ ভারতের বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দ চীনের কাছ থেকে গোপনে টাকা-পয়সা গ্রহণ করেছেন। গুজরাটে প্যাটেলের মূর্তি চীনারাই তৈরি করে দিচ্ছে। ভারতের সব প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে মোদিই সর্বাধিকবার চীন সফর করেন। নেহেরু, রাজীব গান্ধী, নরসীমা রাও, বাজপেয়ী একবার করে চীন সফর করেছেন। মনমোহন চীনে গিয়েছেন দুইবার। আর মোদি গিয়েছেন পাঁচবার। ইন্দিরা গান্ধী একবারও চীনে যান নি।
প্রধানমন্ত্রী পদ পাবার আগেও ( গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন) এই মোদি শুধু টাকা সংগ্রহের জন্য চীনে বেসরকারী সফরে চারবার গিয়েছেন। (আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৪ জুন, ২০২০) । চীনা সৈন্যদের লাঠিপিটায় ভারতের ২০ ভেড়া অক্কা পাবার পর, এমনকি ভারতের দাবিকৃত ভূখন্ড চীনের দখলে চলে যাবার পরেও মোদি একবারের জন্যও চীনের নাম মুখে উচ্চারণ করেন নি। চীন থেকে টাকা খাওয়ার গোপন রহস্য ফাঁস হবার ভয়ে মোদি ভারতীয়দেরকে জানিয়েছেন: ’না আমাদের ভূখন্ডে কেউ প্রবেশ করেছে, না কেউ দখল করেছে।’ যদিও এই প্রবন্ধ লেখার সময়ও (২৪ আগষ্ট, ২০২০) চীনা বাহিনী ভারতের দাবিকৃত এলাকাতে অবস্থান করছে এবং ভারতকে বলে দিয়েছে চীন কোনভাবেই ওই জায়গা থেকে সরে যাবে না। সেই মোদি এখন বাংলাদেশ হতে চীনকে তাড়াতে চায়। আমাদের স্বার্থেই চীন আমাদের কাছে রাখতে হবে। চীন হয়তো আর্থিকভাবে লাভবান হবে, কিন্তু আমাদের দেশ দখল করবে না।
আমাদের ভৌত-কাঠামো গড়ে তুলতে চীন সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সহায়ক। বাংলাদেশে এমন কোন বড় প্রকল্প নেই যেখানে চীনের সহযোগিতা নেই। এই ক্ষেত্রে চীনের সাথে ভারতের কোন তুলনাই হয় না। ভারতের অবদান ৫ শতাংশের নিচে। আমরা তো চীনের দিকে যেতে চাই নি, ভারতই আমাদেরকে চীনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ভারত বাংলাদেশকে শুধু শোষণ করছে না, শাসন করছে আমাদের দেশটাকে ভারতের ভূখন্ডের চেয়েও জঘন্যভাবে ব্যবহার করছে। আমরা রাস্তাঘাট তৈরি করছি, নদী খনন করছি, বন্দর বানাচ্ছি, অবকাঠামো তৈরি করছি। আর ভারত সেগুলোতে অহেতুক ভাগ বসাচ্ছে। সেগুলো অবাধে ব্যবহার করছে। আমাদের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। এমনকি আমাদের প্রশাসনের সব জায়গায় ভারতীয়দেরকে বাংলাদেশী সাজিয়ে ঢুকিয়ে দিচ্ছে।
উপরে উল্লেখিত ভারতের উদ্বিগ্নতা বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণে রাখার এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে দখলের বহির্প্রকাশ। আমরা তা হতে দিতে দেবনা। ভারত যে অধিকার বলে চীনকে মোকাবিলা করার জন্য আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের কাছে ধর্ণা দিচ্ছে, একই অধিকার বলে বাংলাদেশও ভারতের মাস্তানী ও খবরদারি, সর্বোপরি দখলদারিত্ব বন্ধে একই অধিকারে চীনসহ বিশ্বের যেকোন দেশ থেকে যেকোন ধরনের সহযোগিতা চাওয়ার ক্ষমতা রাখে, সেটা ভারতের সহ্য হোক কিংবা না-ই হোক। বর্তমানে ভারত তার প্রভুদের কাছে সামরিক সহযোগিতা চাইছে আর আমরা চীনের কাছে চাচ্ছি অর্থনৈতিক সহযোগিতা, যা একেবারেই শান্তিপূর্ণ, যা কারো বিরুদ্ধে নয়।
তিস্তা প্রকল্পের জন্য চীনের কাছ থেকে একবিলিয়ন ডলার নিতে হতো না, যদি ভারত তিস্তার পানি হতে আমাদেরকে বঞ্চিত না করতো। আমাদের তিস্তা প্রকল্পকে বাঁচানোর জন্য চীনা সহযোগিতা চাইলে তাতে ভারতের কম্পন ওঠে কেন? এটা কেমন জঘন্য নীতি। আমরা যা-ই করি, তাতেই ভারতের আপত্তি আছে। ভারত আন্তর্জাতিক নদী পদ্মায়/গঙ্গায় ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে শীতকালে বাংলাদেশকে পানিশূর্ণ করে, আর বর্ষাকালে ডুবিয়ে দেয়। এর মুকাবিলায় বাংলাদেশ নিজের ভূখন্ডে ফারাক্কার নিচে গঙ্গাবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিলে ভারত তাতেও বাধা দেয়। ভারত আমাদেরকে পানিও দেবে না, আর পানিশূন্যতা মুকাবিলা করার জন্য চীনা সাহায্যেও আপত্তি করবে।
আমাদের বিমান বন্দর সম্প্রসারণ ও সংস্কারে চীনা কোম্পানীকে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই কাজেও ভারতের আপত্তি। চীনের তৈরি করোনা ভাইরাস টিকা বাংলাদেশে পরীক্ষাতেও ভারতের আপত্তি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোন সংলাপেও ভারত ক্ষুব্ধ। কিন্তু কেন? বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকারকে ভারত কোন লজ্জায় বাধা দিতে চায়? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তো নয়মাস পাকিস্তানে ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিনিই প্রথম ভারতের সাথে কোন কথা না বলে সরাসরি পাকিস্তান গিয়েছিলেন। ওটা ছিল তার তথা আমাদের অধিকার। এই অধিকার চিরন্ত্রন। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীদের ফোনালাপ নিয়ে কোন কথা বলার অধিকার ভারতের কোন মহলের নেই। ভারত কোন দেশের সাথে সম্পর্ক করে সেই ব্যাপারে আমরা কী কখনো জানতে চেয়েছি? বাংলাদেশ ইসরাইলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় নি। ভারত ইসরাইলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার সময় কী আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছিল? না কী আমরা ভারতের কাছে কৈফিয়ত চেয়েছি কেন ইসরাইলকে স্বীকৃতি হয়েছে, কেন ইসরাইলের সাাহয্য নিচ্ছে? পাকিস্তান কোন অবৈধ রাষ্ট্র নয়। পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, তেমনি ভারতেরও রয়েছে। মোদি বিনা দাওয়াতে পাকিস্তানে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন। মোদিরা যদি পাকিস্তানে যেতে পারেন, তবে শেখ হাসিনা কেন পাকিস্তানে যেতে পারবেন না? পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বললে ভারত উদ্বিগ্ন হবে তথা মানা করবে? আমরাও কেন ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়াকে পাত্তা দেব? ভারত যা মনে করে করুক আমরা আমাদের স্বার্থে যেকোন দেশের সাথেই গভীর সম্পর্ক করার সার্বভৌম অধিকার রাখি । আমরা তো ভারতের বা কোন বিশেষ দেশের গোলাম কিংবা ছায়ারাষ্ট্র নই।
ভারত যদি বাংলাদেশকে স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে মেনে নেয়, তাহলে আমাদের বিদেশনীতিতে ভারত আপত্তি তুলতে পারে না। সেই ক্ষেত্রে আমরাই ভারতের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করবো। জাতীয় স্বার্থে যেকোন দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলবে, কোন দেশ থেকে কী ধরনের সুবিধা নেবে সেটা আমাদের নিজস্ব ব্যাপার।
ভারতীয় ভেড়ারা চীনাদের হাতে পিটা খাবার পর আমরা ভারতের পক্ষে কথা বলি নি, এটাও নাকি ভারতের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। আমরা ভারতের পাশে কেন দাঁড়াবো? গত ৫০ বছর ধরে আমাদের সীমান্তে ভারতীয় দস্যু বিএসএফ আমাদেরকে বিনা কারণে খুন করছে। বিনা বিচারে এই ধরনের হত্যা বন্ধে ভারত কী সামান্যতম উদ্যোগ নিয়েছে, নাকি দুঃখ প্রকাশ করেছে? খুনের অপরাধে বিএসএফ’এর কোন খুনির বিচার করেছে? ভারত আমাদের মেয়েকে মেরে কাঁটাতারের ওপর ঝুলিয়ে রেখেছে। তা হলে আমরা কোন দুঃখে ভারতের জন্য কাঁদবো। ভারত আমাদের সাথে কখনোই বন্ধুসুলভ আচরণ করেনি। ভারতের ভূমিকা সব সময়ই ছিল দুষমণের মতো । ১৯৭১ সালে সহযোগিতার আড়ালে ছিল নির্মম দুষমণি, যা আমরা ১৯৭১ থেকেই দেখে আসছি।
ভারতের মতো কট্টর সাম্প্রদায়িক ও আগ্রাসী দেশ বাংলাদেশসহ ভারতের সব প্রতিবেশির জন্যই ভীষণ উদ্বেগের ব্যাপার। ভারতের মতো একটি ফকির দেশ প্রতিবেশিদের ওপর ছড়ি ঘুরানো, এমনকি দখলের জন্য, পারমাণবিক বোমাসহ সারা দুনিয়া থেকে সমরাস্ত্র কিনে ভারতকে অস্ত্রের গুদামে পরিণত করেছে। তাই সব প্রতিবেশিই ভারতের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। ভারতের আগ্রাসী থাবা প্রতিহত করতেই মূলত বাংলাদেশসহ সব প্রতিবেশিই চীনের দিকে ঝুঁকছে। কোন দেশকেই ভারত তার কাছে আনতে পারবে না। ক্ষুদ্রদেশ সিকিমকে যে ভারত দখল করতে পারে -যার পৃথক অস্তিত্ব, স্বাধীনতা রক্ষায় ভারত লিখিতভাবে ওয়াদাবদ্ধ (১৯৫০ সিকিম-ভারত চুক্তি দেখুন) সেই ভারতকে কোন দেশই নিরাপদ মনে করে না। বিশ্বাস করে না।
এমনকি বহু ভারতীয় তাদের স্বদেশকে বিশ্বাস করে না। ভারতের ভেতরেই এমন বহু জাতিগোষ্ঠী রয়েছে যাদের বিরুদ্ধে ভারত যুদ্ধ করছে, যারা অপেক্ষায় আছে ভারত কখন কতো ভাগে ভাগ হবে । ভারতের বিভক্তিই হবে নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তোলার একমাত্র উপায়। ভারত নামক এই আপদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই অঞ্চলের ছোট দেশগুলোর অস্তিত্ব হুমকির মুখে থাকবে। তাই এই দেশগুলো চীনের দিকেই ঝুঁকবে। ভারতের কারণে চীন এখন এইসব দেশের ‘ন্যাচারাল/সহজাত’ মিত্রে পরিণত হয়েছে। এখন স্রোত চীনের দিকে। ভারত এখনই আগ্রাসী নীতি এবং প্রতিবেশী দেশ দখলের চক্রান্ত হতে সরে না আসলে ভারতের বিপদে প্রতিবেশিদেশগুলো তার সাথে থাকবে না । এর প্রমাণ হিন্দুরাষ্ট্র নেপাল, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, এমনকি ভুটান ও বাংলাদেশ।
মালদ্বীপ ও বাংলাদেশের সরকার ভারতপন্থী হিসেবে পরিচিত। কিন্তু বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ ভারতের আচরণে ক্ষুব্ধ। ভারতপন্থীরাও তাদের অস্তিত্ব, জাতীয় অস্তিত্ব, জাতীয় পতাকা, জাতির পিতা রক্ষার জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ে ভারতকে প্রতিহত করতে এগিয়ে আসবেন। বাংলাদেশের কিছু লোককে হাতের মুঠায় রাখার মানেই বাংলাদেশ দখল হয়ে গেছে, ভারত এমন দুঃস্বপ্নে বিভোর থাকতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা অবশ্যই তার বিপরীত, ভয়াবহ ও বিপদজনক। কাশ্মীরের হরিসিং’এর নাটক বাংলাদেশে প্রয়োগ করলে হীতে বিপরীত হবে। শেখ আবদুল্লাহ’র মতো দালালের হাত ধরে কাশ্মীরের ৮০ লাখ মানুষের আগুন ৭৩ বছরেও ভারত নেভাতে পারে নি। একটি দক্ষ পেশাদার প্রতিরক্ষা বাহিনীর গর্বিত জাতি ১৮ কোটি বাংলাদেশীদের আগুনে ভারত নিজেই পুড়ে যাবে।
লেখক: নিউইয়র্ক-কেন্দ্রিক সাংবাদিক ও গবেষক ২৪ আগস্ট, ২০২০