অসুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসা জরুরি
আবু দারদা যোবায়ের: করোনাকালে চিকিৎসা সেবা নিয়ে ব্যাপক কেলেঙ্কারি ধরা পড়ার পর দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভঙ্গুর অবস্থা নিয়ে সবাই সরব। করোনা সংক্রমণের এই সময়ে মানুষের স্বাস্থ্য সেবার অধিকার নিয়ে গুরুতর প্রতারণার শিকার অনেকেই । এ কারণে অনেক হাসপাতাল মালিক এখন কারাগারে।
বেসরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নিয়েও নানা অভিযোগ রয়েছে ।করোনার ভাল দিক হলো মানুষ স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হয়েছে। করোনা দেখিয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার অধিকার কতটা করুণ। আছে দূর্নীতি আর অব্যবস্থাপনার অভিযোগ । এত দিন দেশের মানুষ এ খাতটি নিয়ে নানা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন । কিন্তু করোনা চিকিৎসার প্রস্তুতি ও সেবার মান নিয়ে মানুষজন চরম অস্বস্তিতে পড়েছে । চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন এই সেবা খাতটি কিভাবে চরম মুনাফা লাভের খাতে পরিনত হয়েছে । এখন সরকার ও নড়েচড়ে বসেছে । কিভাবে স্বাস্থ্য সেবাকে জনগনের কাছে গ্রহণযোগ্য করা যায়। এনিয়ে নানা মহল এখন সরব। কেউ কেউ এ খাতকে ঢেলে সাজাতে স্বাধীন ও দলনিরপেক্ষ কমিশন গঠনের কথা বলছেন । কেননা গত বারের বাজেটে এ খাতে অপর্যাপ্ত বিনিয়োগের পর যতটুকু বিনিয়োগ হয়েছে সেটাও এক শ্রেণীর মানুষ নিজেদের সম্পদ বাড়ানোর সুযোগ হিসেবে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে ।
দেশে তৃণমূল পর্যায়ে প্রায় ষোল হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক বা হাসপাতাল রয়েছে । এগুলোর কোন কোনটির অবস্থা করুণ । অবকাঠামো থাকলেও আবার নিয়মিত চিকিৎসক থাকে না । আবার কোন কোনটিতে চিকিৎসক থাকলেও ঔষধ ও অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রী অপ্রতুল । এসব কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনা জন্য আইন নেই । গ্রামের মানুষের দোড় গোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে হলে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে আগে রোগমুক্ত করতে হবে । দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ থাকা কিংবা খোলা থাকলেও প্রয়োজনীয় ঔষধ ও ডাক্তারবিহীন এই চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রগুলোকে আগে অসুস্থতা থেকে সুস্থ করে তুলতে হবে । তারপর রোগীর চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে এই সেবা কেন্দ্রগুলোকে উপজেলা স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র বা হাসপাতালের অধীনে মনিটরিং করা যেতে পারে ।
করোনাকালের দেশের স্বাস্থ্য পরিস্থিতির বাস্তব চিত্র রোগী চিকিৎসক ছাড়াও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীসবাইকেই নতুন করে কিছু করার তাগিদ অনুভব করেছেন। দেশের পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর কোন বিকল্প নেই বলে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সবাই একমত । শুধু মাত্র চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মী ও কিছু প্রয়োজনীয় ঔষধ দিলেই সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে- এটা ভাবা উচিত নয়। চুরি বন্ধ করতে না পারলে সব অর্জন অর্থহীন হয়ে পড়বে ।
আমাদের একশ্রেনীর স্বাস্থ্য সামগ্রীর কারবারী রাতারাতি নিজেদের ভাগ্য বদল করে কোটিপতি হতে চান । তাই তারা মিতালি করেন স্বাস্থ্য দফতরের বিভিন্ন পর্যায়ের অসৎ কর্মকর্তাদের সাথে ।উভয়ের মধ্যে লেনদেনের ভাগাভাগির বলি হন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা। সরকারি হাসপাতালের কেনাকাটায় বড় ধরনের কেলেংকারি সাম্প্রতিক সময়ে সবাই কে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কি কি অনিয়ম আর দূর্নীতি হয়েছে। বিবেক বুদ্ধি বিবেচনা মানবিকতা কতটা তলানিতে চলে গেছে তা বলে শেষ করা যাবে না ।
তবে সুখের বিষয়, এসব দিকে ইদানিং মনে হয় নজরদারি কিছুটা বাড়ানো হয়েছে । আরো বাড়ানো দরকার । বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক আর ডায়গোনেষটিক সেন্টারগুলোতে প্রতি মাসে অন্তত একবার করে হলেও অভিযান চালানো দরকার । তা না হলে এদের মুনাফালোভী মানসিকতার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে না । আশার কথা ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকা শহরের বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগ নির্ণয় পরীক্ষা কেন্দ্রে অভিযান সরকারি ভাবে অভিযান চালানো হয়েছে । জরিমানাও করা হয়েছে। আমি আর আমার স্বজনদের অনেকেই অভিযানে অভিযুক্ত ও আর্থিক দন্ড পাওয়া ঐ স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ না করে পারছি না । ভবিষ্যতে ঐ হাসপাতাল আর রোগ নির্নয় কেন্দ্রে যাবো কিনা সেটা ভাবনার খোরাক পেলাম ।
আমি মনে করি দল, মত ও যে কোন ধরনের সম্পর্কের উর্ধ্বে উঠে অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে । এক্ষেত্রে কোন ধরনের ছাড় দেয়া হলে তা সরকারের বিরুদ্ধে যাবে ।
পরিশেষে বলবো ইতোমধ্যে মাস্ক কেলেঙ্কারি ঔষধ কেনাকাটায় পুকুর চুরি নয়, সাগরচুরি সহ নানা চুরি আর দূর্নীতির অভিযোগে যাদের আটক করা হয়েছে তাদের বিচার সঠিক ভাবে স্বচ্ছতার সাথে করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে । তা হলে ভবিষ্যতে রাতারাতি ধনী হবার প্রবনতা কিছুটা হলেও কমবে । অন্য অনেকেই সাবধান হয়ে যাবেন । এমনটা আশা করতেই পারি ।
লেখক- সাংবাদিক।