সাংবাদিক হাবিবুর রহমানের নৈতিক মানদণ্ড, সত্যনিষ্ঠা আমাদের প্রেরণা
আবু দারদা যোবায়ের: রবিবার ৪ অক্টোবর ২০২০,আমার আব্বা সাংবাদিক মরহুম মুহাম্ম্দ হাবীবুর রহমান ভূইয়ার ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী। দুই হাজার আট সালের এই দিনে ঈদুল ফিতরের একদিন পর তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নেন।মৃত্যুবার্ষিকীর এইদিনে নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করে দোয়া করার পরিবর্তে সারা বছরই মৃত ব্যক্তির জন্য আল্লাহ কাছে গুনাহ মাফের জন্য দোয়া কামনা ও জান্নাত কামনার শিক্ষা জীবিতকালে তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন।
বৃটিশ ভারতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত একজন সাধারণ সহজ সরল মানুষ হয়েও কোরআন ও হাদিসের মৌলিক শিক্ষা সততা,ন্যায় নিষ্ঠা ও হালাল হারাম বেছে চলার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন আপোষহীন। আমি এবং আমার ভাইবোনেরা স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি থেকে অনেক কিছু শিখেছি । কিন্তু পরিবারের কর্তা আব্বার কাছ থেকে পারিবারিক যে শিক্ষা আমরা পেয়েছি তা বর্তমান জমানায় মেনে চলা অনেকটাই কঠিন।
বর্তমান নারায়ণঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়নের পাঁচবাড়িয়া গ্রামে ১৯২২ সালে এক সভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন আমাদের আব্বা মুহাম্ম্দ হাবীবুর রহমান ভূইয়া। শিশুকালে গ্রামের মক্তবে পড়াশুনা শেষে আব্বার চাচা ওনাকে তৃতীয় শ্রেনীতে আড়াইহাজার স্কুলে ভর্তি করে দেন। সেই আমলে পাঁচবাড়িয়া গ্রামের বাড়ি থেকে পায়ে হেটে,নৌকায় চড়ে প্রতিদিন সাড়ে তিন মাইল হেঁটে স্কুলে যেতেন। বৃটিশ ভারতে ১৯৩৯ সালে আড়াইহাজার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে আব্বা ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর থেকে স্টিমারে চড়ে ফরিদপুরের গোয়ালন্দ যান। সেখান থেকে ট্রেনে কলকাতা। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় পাস করে নেন কলকাতায় খাদ্য বিভাগে সরকারী চাকুরী।
বর্তমান কলকাতার ফ্রি স্কুল ষ্ট্রিটের কাছেই দমকল অর্থাৎ ফায়ার সার্ভিস অফিস।তার পাশেই খাদ্য বিভাগ। মারা যাবার কয়েকবছর আগেও আব্বা কলকাতায় চিকিৎসার জন্য যান। আমার বড় বোন ও ছোট ভাই তালহা ওনার সাথে ছিলেন। কলকাতার রাস্তায় হেঁটে হেঁটে অনেক স্মৃতি তিনি তাদের সাথে শেয়ার করেছেন। কলকাতায় দিনে সরকারী চাকুরী করার পাশাপাশি ১৯৪৩ সাল থেকে রাতে সংবাদ পত্রে তিনি কাজ করেছেন। কলকাতায় মাওলানা আকরাম খাঁ সম্পাদিত আজাদ পত্রিকা এবং আবুল মনসুর আহম্মদ সম্পাদিত ইত্তেহাদ পত্রিকায় কাজ করেছেন তিনি। ১৯৪৭ সালে বৃটিশ ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান সৃষ্টি হলে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। অন্যদের মত তিনি বদলী চাকুরী হিসেবে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রকাশনা বিভাগে যোগ দেন। চাকুরিরত অবস্থায় তিনি তৎকালীন সেন্ট গ্রেগরি কলেজ থেকে ১৯৫৪ সালে এইচএসসি পাশ করেন।পরবর্তীতে রাতের শিফটে কলেজে ভর্তি ও ক্লাশ করে ১৯৬৩ সালে বিএ এবং সর্বশেষ ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম ডিগ্রি লাভ করেন। সরকারি চাকুরিতে ঘুষের দৌরাত্ম পূর্ব পাকিস্তান আমলেও ছিল।এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে আমার আম্মাকে না জানিয়ে তিনি ১৯৬৯ সালে হঠাৎ চাকুরী ছেড়ে দেন। আম্মার কাছে শুনেছি, তিনি ব্যবসা করার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে নানা কারনে তা সম্ভব হয়নি। যা হোক,পরে সাংবাদিকতাকেই তিনি বেছে নিয়েছিলেন পেশা হিসাবে।
স্বাধীন বাংলাদেশে আব্বা সাপ্তাহিক আরাফাত,দৈনিক আখবার, দৈনিক আজাদ এবং প্রতিষ্ঠাকালীন সময় ১৯৮৬ সাল থেকে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় প্রথমে মফস্বল বার্তা সম্পাদক ও পরে সিনিয়র সাব এডিটর হিসেবে আন্তর্জাতিক পাতায় কাজ করেছেন। ইনকিলাব থেকে অবসর নেয়ার কয়েক বছর পর তিনি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আমার মেজবোনের কাছে ২০০৪ সালে ইমিগ্রেশন ভিসায় আম্মা সহ নিউইয়র্কে যান। এক বছর পর আবার ফিরে এসে কয়েকমাস পর নিউইয়র্কে আবার গেছেন।
পেশাগত কারণে এটিএন বাংলার প্রতিনিধি হিসেবে জাতিসংঘের অধিবেশন কভার করতে আমি ২০০৫ সালে সেপ্টেম্বর মাসে দুই সপ্তাহের জন্য নিউইয়র্ক যাই। পরবর্তীতে আরো দুই তিন বার জাতিসংঘের সংবাদ কভার করতে গিয়েছি। সেখানে থাকার সময় সকালে আব্বার সাথে সকালে হাঁটতাম। বাসার সামনে আপেল গাছ আঙ্গুর গাছ। হাসপাতালে গেছি।কত স্মৃতি কত কথা। বেশী অসুস্থ বোধ করলে ২০০৭ সালের জানুয়ারী মাসে অনেকটা জোর করে আম্মাকে সহ আব্বাকে নিয়ে দেশে ফিরি। দেশে উনার চিকিৎসা হয়েছে। ২০০৮ সালে অক্টোবর মাসের চার তারিখ সকাল আটটার কিছু পরে তিনি আমাদের নিজ বাসা কমলাপুরে ইন্তেকাল করেন।
ইনকিলাব পত্রিকার সাংবাদিক শামসুল ইসলাম ভাইয়ের মাধ্যমে আব্বার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে আমাদের বাসায় আসেন মাসিক মদিনার সম্পাদক মরহুম মাওলানা মুহিউদ্দিন খান,মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী সহ আরো অনেকে। প্রথম নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন মাওলানা মুহিউদ্দিন খান। আব্বার কাছে মাওলানা মুহিউদ্দিন খানের কথা শুনেছি। উনার পত্রিকার ডিক্লারেশনের সময় আব্বা সহযোগিতা করেছিলেন।
নিজের পিতার সাথে সন্তানদের স্মৃতি কতো মধুর। বলে শেষ করা যাবে না। ছোটবেলায় আব্বার সাথে বাজারে যেতাম। ফকিরেরপুল বাজারে দুইটাকা চল্লিশ পয়সার কেরোসিন তেল কিনে দশ পয়সা আমাকে দিতেন। দশ পয়সায় আমি আইসক্রিম খেতে খেতে বাসায় আসতাম। বিকেলে মাঠে ফুটবল ক্রিকেট খেলে মাগরিবের আজানের পর বাসায় ফিরতেই হতো আমাদের। আর রাত এগারটার আগে ঘুমানোর সুযোগ ছিল না। আইডিয়াল স্কুলের নৈশ প্রহরীর এগারটার ঘন্টার বাজলেই আমরা বিছানায় ঘুমাতে যেতে পারতাম। ঝড়ের দিনে আম কুড়িয়ে ও বৃষ্টিতে ফুটবল খেলে বাসায় ফিরে কত বকা শুনেছি মারও খেয়েছি । কখনও কখনও তিনি আমাকে বলতেন তুই সবচেয়ে খারাপ।আবার বাবা যোবায়ের বলেও ডেকেছেন। দেশে বিদেশে আব্বার সাথে আমার স্মৃতি বলে শেষ করা যাবেনা। আবার ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে ঢাকা বিম্ববিদ্যালয় মাঠে নামাজ পড়ে আব্বা আমাদের পাঁচ ভাইকে তিন নেতার মাজার, কার্জন হল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখিয়েছেন। হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত হয়ে যেতাম। ইতিহাস ঐতিহ্য আর নীতি নৈতিকতা,সততা-ন্যায় নিষ্ঠা, হালাল হারাম, ভালো-মন্দ বেছে চলার চর্চা সেই শিশু কাল থেকে সন্তানদের শিখিয়েছেন আমাদের পিতা। নীতি নৈতিকতার প্রশ্নে তিনি কখনোই আপোষ করেননি। আশির দশকে তিনি সাপ্তাহিক আরাফাত, দৈনিক আজাদ ও পরে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় সাংবাদিকতা করার সময় অফিস থেকে রেডলিফ বলপেন কলম দেয়া হতো। সেই কলম তিনি বাসার ব্যক্তিগত লেখা লেখি কিংবা দৈনন্দিন বাজারের হিসাব লেখার কাজে ব্যবহার করতেন না। কেন জানতে চাইলে তিনি বলতেন এটা অফিসের কলম। অফিস-অফিসের কাজে আমাকে দিয়েছে। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজে এই কলম ব্যবহার করা যাবে না। অন্য কলম দিয়ে প্রতিদিনের বাজার সদাইয়ের হিসাব ও অন্য ব্যক্তিগত লেখালেখি করতেন।
নব্বই সালের শেষে দিকে আমার সাংবাদিকতার ক, খ,গ শেখা শুরু । বিভিন্ন সাপ্তাহিক পত্রিকায় প্রদায়ক প্রতিবেদক হিসেবে কাজ শুরু করি। সাংবাদিকতার বিষয়ে তিনি শুধু বলতেন ”পাথর ঘসতে ঘসতে যেমন ক্ষয় হয়” তেমনি সাংবাদিকতায় লিখতে লিখেতে হাত পাকা হয়।
আমাদের পারিবারিক কালচার হচ্ছে,ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে,অন্তত এক আয়াত কোরআন শরীফ পাঠ করার নিয়ম করে লেখাপড়া শুরু করতে হতো।কখনো দেরিতে ঘুম থেকে উঠলেও এই নিয়মের ব্যতয় ঘটালে আম্মাকে আমাদের নাস্তা দিতে নিষেধ করতেন তিনি।এই রীতির চর্চাটা আমাদের অনেক দূর শিখিয়েছে। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে পুরোদস্তুর রিপোর্টার হিসেবে এখানে সেখানে দাঁপিয়ে বেড়ানো আমি নামাজ কালাম প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম।মাস শেষে বেতন পেয়ে বাসায় মাছ তরকারি বাজার নিয়ে গেছি। আম্মা রান্না করার পর দুপুরে কিংবা রাতে আব্বা জিজ্ঞেস করতেন এটা ওটা কে এনেছে। আম্মা বলতেন যোবায়ের। আব্বা বলতেন না, ও নামাজ পড়ে না, ওরটা খাওয়া যাবে না। যা হোক, আব্বার কড়া শাসনে শয়তানের ধোঁকায় আর তারুন্যের উচ্ছাসে ধর্ম চর্চা না করার বদঅভ্যাস আমায় দীর্ঘদিন আটকে রাখতে পারেনি। আব্বার কড়া কড়িতে জীবনে কিছুটা হলেও আমি লাইন ফিরে পেয়েছি।
আমাদের আব্বা মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন ও বলতেন পিটিয়ে বা গায়ে হাত তুলে সন্তানদের মানুষ করা যায় না। তিনি বলতেন লাউ জাতীয় গাছের আগা বা সামনের অংশ যেমন আলোর দিকে যায় আমার সন্তানরাও সেভাবে আলোর দিকে যাবে। মিথ্যা কথা বলা এবং শোনা তিনি একেবারেই পছন্দ করতেন না। মিথ্যাবাদী সে তার প্রিয় সন্তান হোক কিংবা ভাতিজা- ভাগ্নে যে-ই হোক তাকে তিনি ঘৃণা করতেন।
উনিশ’শ তিরানব্বই সালে আমি তখন দৈনিক সকালের খবর পত্রিকার রিপোর্টার। ফরিদপুরের আটরশির পীর সাহেবের দৈনিক পত্রিকা আল মুজাদ্দেদ পত্রিকা প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে। সাংবাদিক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান।পীরের মুরিদ আড়াইহাজার উপজেলার বাসিন্দা জাকির ইন্ডাষ্ট্রিজ এর অন্যতম কর্ণধার আমাদের পাশের পাশের গ্রামের জাকির ভাই । ঢাকার মালিবাগে ওনাদের বাসা । তিনি আমাকে মুজাদ্দেদ পত্রিকায় কাজ করতে অনুরোধ করেন। তেজগাঁও এফডিসি গেটের কাছে মুজাদ্দেদ অফিসে একদিন চাকুরীর সাক্ষাৎকার দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন তিনি।
সকালে বাসা থেকে বের হবার আগে আব্বা আমাকে বলেছেন তুমি কোন মিথ্যা কথা বলবে না। চাকুরী হলে হবে, না হলেও সমস্যা নেই। আটরশির মুরিদ কিনা জানতে চাইলে- না বলবে। সিনিয়র সাংবাদিক কবির সাহেব আমার সাক্ষাৎকার নিলেন। যথারীতি ঐ প্রশ্ন অর্থাৎ পরিবার আটরশির মুরিদ কিনা জানতে চাইলেন। আমি বিনয়ের সাথে জবাব দিয়েছি, না আমাদের পরিবার আটরশির মুরিদ না। পরে আমার আর চাকুরী হয়নি। আব্বা বিশ্বাস করতের এক মিথ্যা কথা দশ মিথ্যা কথাকে ডেকে আনে। দিন যত ফুরাচ্ছে, আধুনিকতার ছোয়ায় আমরা একদিকে যত এগুচ্ছি, অন্যদিকে ততোই আমাদের সমাজে মিথ্যার জোয়ার বইছে।
যা হোক আব্বার কথা লিখে -বলে শেষ করা যাবে না। তিনি যে সব শিক্ষা দিয়ে গেছেন তা আমাদের চলার পথে পাথেয় হয়ে থাকবে। যে জমানায় আমরা বেড়ে উঠেছি এবং আমাদের সন্তানরা বেড়ে উঠছে সেই সময় কাল কত কঠিন ও কপটতায় পরিপূর্ণ তা বিবেকবান মানুষ মাত্রই জানেন। আম্মা,আমরা পাঁচ ভাই,ছয় বোন সহ পরিবারের সবাই আমাদের আব্বাকে নৈতিক শিক্ষার মানদন্ডে একজন সফল মানুষ হিসেবে দেখি। সততা ও ন্যায় নিষ্ঠা আর আল্লাহ ওপর ভরসা রেখে দৈনন্দিন কাজ শুরু ও শেষ করার শিক্ষা তিনি আমাদের দিয়েছেন। তা ছিটে ফোটাও যদি আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম সন্তানদের শিক্ষা দিতে পারি তা হলেই আব্বা আপনাকে স্মরণ করা আমাদের সার্থক হবে। অন্যথায় বছর ঘুরে শুধু মাত্র আনুষ্ঠানিক মৃত্যুবার্ষিকী পালন করে দুনিয়া ও আখেরাতে আমরা লাভবান হতে পারবো না।
গ্রাম থেকে বৃটিশ ভারতের কলকাতা তারপর রাজধানী ঢাকায় চাকুরী করলের নিজের শিকড়ের প্রতি অর্থাৎ গ্রামের মানুষের প্রতি আব্বার আলাদা দরদ ও ভালবাসা ছিল। সরকারি চাকুরি করার সময় সেই পূর্ব পাকিস্তান আমলে পুরিন্দা থেকে পাঁচগাও হয়ে আড়াই হাজার যাবার রাস্তার জন্য তিনি তৎকালীন ঢাকা জেলা প্রশাসনের কাছে ইংরেজিতে চিঠি লিখেছেন। আমাদের পাঁচবাড়িয়া গ্রাম থেকে পশ্চিম দিকে পাঁচরুখি পর্যন্ত রাস্তার নির্মানের জন্য তিনি নিজে অনেক জমি কিনেছেন। অন্যদেরও সহযোগিতা চেয়েছিলেন। অনেকেই আব্বার এই উদ্যোগকে ভালো ভাবে নিয়েছিলেন। আমাদের গ্রাম থেকে পশ্চিম দিকে ধানক্ষেতের মধ্য দিয়ে রাস্তাও হয়েছে । কিন্তু আব্বা দেখে যেতে পারেননি। গ্রামের প্রবীনরা যারা আব্বার সাথে চলাফেরা করেছেন তারা এর স্বীকৃতি দিয়েছেন।
গ্রামে জমি কেনা ও বছরের পর বছর জমি ফেলে রাখা নিয়ে আমরা অনেক সময় আব্বার সাথে ঝগড়া করতাম। বলতাম গ্রামের জমি বিক্রি করেন। ঢাকায় কিছু করেন। জবাবে আব্বা বলতেন একদিন আমার গ্রামে ঢাকা শহর এসে ঠেকবে। সত্যি এখন তাই হচ্ছে। আশপাশে হাউজিং কোম্পানী গড়ে উঠেছে। গ্রামের আরো অধিবাসীর জমির সাথে আমাদের পিতার কেনা জমিতে এখন গড়ে উঠছে জাপানীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। আব্বা বেঁচে থাকলে সবচেয়ে বেশী খুশি হতেন। উনার স্বপ্নের অনেকটাই দেখতে পারতেন।
যাহোক আব্বাকে নিয়ে আমাদের অনেক স্মৃতি । ঢাকায় জানাজা শেষে আমরা আমাদের প্রিয় পিতার লাশ তার জন্মস্থান পাঁচবাড়িয়া গ্রামে নিয়ে যাই। গ্রামের বাড়িতে দ্বিতীয় দফা জানাজায় দল মত নির্বিশেষ বিভিন্ন স্তরের মানুষ শরীক হন। পরে বাড়ির পাশে পারিবারিক গোরস্তান আব্বাকে কবর দেয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে যখনই গ্রামের বাড়িতে যাই। আব্বার কবরের পাশে যেয়ে প্রিয় আব্বা, চাচা সহ আতœীয় স্বজন যারা কবরে শায়িত আছেন তাদের সবার জন্য দোয়া করি। পরিশেষে বলবো- রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি ছাগিরা। আল্লাহ আমার আব্বাকে জান্নাতের মর্যাদা দিন। আমিন।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক