কেন এতো ধর্ষণ বাংলাদেশে?
ফিরোজ মাহবুব কামাল: জ্বর কখনোই কোন সুস্থ্য দেহে আসে না। শরীরের উচ্চ তাপমাত্রাই বলে দেয় দেহে ম্যালেরিয়া, নিউমনিয়া, টাইফয়েড, কভিড বা অন্য কোন মারাত্মক ব্যাধি বাসা বেঁধেছে। জ্বর নিজেই কোন রোগ নয়, রোগের লক্ষণ মাত্র। তেমনি চুরি-ডাকাতি, ভোট-ডাকাতি, গুম-খুন, সন্ত্রাস ও ধর্ষণের ন্যায় অপরাধগুলোও কোন চরিত্রবান মানুষের জীবনে দেখা যায় না। এগুলো দেখা দিলে বুঝা যায়, আক্রান্ত ব্যক্তির নৈতিক ব্যাধিটি কতটা তীব্র।সে তীব্র নৈতিক ব্যাধি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার কারণেই বাংলাদেশ এ শতাব্দীর শুরুতে পর পর ৫ বার দুর্বৃত্তিতে বিশ্বে প্রথম হয়েছিল। এখন ইতিহাস গড়ছে চুরি-ডাকাতি, ভোট-ডাকাতি, গুম-খুন, সন্ত্রাস ও ধর্ষণের ন্যায় মারাত্মক অপরাধে। দেশেটির এ গভীর দুর্দশা যে কোন বিবেকমান ব্যক্তিকেই ভাবিয়ে তুলতে বাধ্য।
প্যারাসিটামল খাওয়ালে জ্বর কমে যায়, কিন্তু তাতে রোগ সারে না। রোগ সারাতে হলে সঠিক রোগনির্ণয় জরুরী এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা জরুরী। তাই দেশে ধর্ষণের ন্যায় অপরাধ দমাতে হলে প্রথম জানতে হয় ধর্ষণ কেন হয় এবং সে কারণগুলি জানার পর সেগুলির মূলোৎপাটন করতে হয়। ধর্ষণ একটি ভয়ানক নৈতিক ব্যাধি। দৈহিক ও নৈতিক সত্ত্বার যোগফলেই মানুষ। খাদ্য-পানীয়তে দেহ বল পায় বটে, কিন্তু নৈতিক বল বাড়াতে হলে চাই জ্ঞান। চাই পরকালের ভয়। সমাজ ও রাষ্ট্র জুড়ে যখন চুরি-ডাকাতি, ভোট-ডাকাতি, গুম-খুন, সন্ত্রাস ও ধর্ষণের ন্যায় অপরাধে প্লাবন আসে তখন বুঝা যায় সে সমাজে জ্ঞানদানের কাজটি যথাযত হয়নি। পরকালের ভয়ও তেমন স্থান পায়নি। শুধু স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় গড়লেই জ্ঞানদান হয় না এবং চরিত্রও গড়ে উঠে না। ডিগ্রিদান ও জ্ঞানদান এক কথা নয়। বরং দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কতজন অসভ্য মানুষকে সভ্য করলো, কতজনের চরিত্রে নৈতিক বল যোগ করলো এবং কতজনকে পাপাচার থেকে ফিরালো -তা দিয়েই বিচার হয় শিক্ষাব্যবস্থার সাফল্য। এক্ষেত্র বাংলাদেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ব্যর্থতা বিশাল। অতিশয় পরিতাপের বিষয় হলো, অসভ্য মানুষকে সভ্য করা, চরিত্রে নৈতিক বল জোগানো, ও পাপাচার থেকে ফিরানো বাংলাদেশের শিক্ষানীতির আদৌও কোন লক্ষ্য নয়।
শিক্ষকগণ মনে করেন, প্রাথমিক স্তরে লিখতে, পড়তে ও হিসাব কষতে শেখানোই তাদের মূল দায়িত্ব।কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যায়ে দেয়া হয়, কারিগরি, চিকিৎসা, কৃষি, আইন শাস্ত্র ও ইঞ্জিনীয়ারিংয়ের ন্যায় নানা বিষয়ে জ্ঞান। কিন্তু কোথাও চরিত্রে নৈতিক বল জোগানো, ও পাপাচার থেকে ফিরানোর কোন আয়োজন নাই। ফলে ব্যর্থতাগুলিও বিশাল। দুর্নীতি, চুরি-ডাকাতি, ভোট-ডাকাতি, গুম-খুন, সন্ত্রাস ও ধর্ষণের ন্যায় অপরাধের সাথে যারা জড়িত তাদের কেউই মুর্খ বা নিরক্ষর নয়। তারা বনজঙ্গল বা ক্ষেত-খামার থেকেও উঠে আসেনি। তাদের সবাই স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তারা সার্টিফিকেট পেলেও বেড়ে উঠেছে মারাত্মক নৈতিক অপুষ্টি নিয়ে। তাদের মাঝে সৃষ্টি হয়নি পরকালের ভয়।
দৈহিক ভাবে বাঁচার জন্য নিয়মিত খাদ্য চাই। তেমনি খাদ্য চাই নৈতিক পুষ্টির জন্যও। নৈতিক পুষ্টির সে সেরা খাদ্যটি হলো ওহীর জ্ঞান তথা পবিত্র কোর’আনের জ্ঞান। তাই মানবকে মানব রূপে বেড়ে উঠার জন্য মহান আল্লাহতায়ালা স্রেফ নানারূপ খাদ্যই দেননি, দিয়েছেন লক্ষাধিক নবী-রাসূলের মাধ্যমে ওহীর জ্ঞান। কোর’আন হলো ওহীর জ্ঞানের সর্বশেষ গ্রন্থ। এ জ্ঞান যেমন জান্নাতের পথ দেখায়, তেমনি বাঁচায় জাহান্নামের আগুন থেকেও। সৃষ্টি করে পরকালে জবাবদিহিতার ভয়। এবং সামর্থ্য জোগায় মানবিক গুণে বেড়ে উঠাতেও। প্রতিটি নরনারীর উপর ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার বা বিজ্ঞানী হওয়া ফরজ নয়। ফরজ নয় এসব বিষয়ে জ্ঞান হাসিলও। কিন্তু প্রত্যেকের উপর নামায-রোযার ন্যায় যা ফরজ তা হলো পবিত্র কোর’আনের জ্ঞানার্জন। অক্সিজেন ছাড়া যেমন দেহ বাঁচে না, তেমনি কোর’আনের জ্ঞান ছাড়া ঈমানও বাঁচে না। তখন অসম্ভব হয় যেমন মুসলিম রূপে বেড়ে উঠা, এবং অসম্ভব হয় পাপাচার থেকে বাঁচা। সমাজ তখন পাপাচারি দুর্বৃত্তদের দিয়ে ভরে উঠে। বাংলাদেশে তো সেটিই হয়েছে। পুলিশ দিয়ে বা কিছু লোককে ফাঁসি দিয়ে এ নৈতিক ব্যাধি থেকে বাঁচা সম্ভব নয়। এ রোগের চিকিৎসায় আরো গভীরে যেতে হয়। বাঁচাতে হয় ব্যক্তির বিবেককে।
বাংলাদেশে স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি কাজ করছে বহু হাজার মাদ্রাসা। সেগুলিতে ছাত্রদের সংখ্যাও বহু লক্ষ। কিন্তু লক্ষণীয় হলো, ধর্ষণের অঙ্গণে মাদ্রাসার ছাত্রদের উপস্থিতটি বিরল। হেতু কি? কারণ, মাদ্রাসার ছাত্রদের রয়েছে কোর’আনের সাথে সংশ্রব। এ হলো কোর’আনী জ্ঞানের বিশাল সুফল। কোর’আনী জ্ঞান ব্যক্তির মনে ভ্যাকসিনের কাজ করে। দেয় পাপাচারের বিরুদ্ধে নৈতিক প্রতিরোধের ক্ষমতা। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ঘটছে উল্টোটি। স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষানীতিতে কোর’আনী জ্ঞানচর্চার কোন ব্যবস্থা নাই, বরং রয়েছে কোর’আন থেকে দূরে সরানোর আয়োজন। রয়েছে সেক্যুলারিজমের প্রবল আধিপত্য। ফলে এসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীগণ ছাত্রজীবন শেষ করছে পবিত্র কোর’আনের একটি আয়াত না বুঝেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি পরিণত হয়েছে শয়তানের হাতিয়ারে। এখানে ভ্যাকসিন দেয়া হয় ছাত্রছাত্রীদের মনে ইসলামের প্রবেশ ঠেকাতে। এর ফলে এসব ছাত্র-ছাত্রীরা বিপুল সংখ্যায় বেড়ে উঠছে শয়তানের এজেন্টরূপে। এরাই ১৯৭১’য়ে ভারতে কোলে গিয়ে উঠেছিল এবং ভারতের অস্ত্র নিয়ে মুসলিম বিরোধী ভারতীয় এজেন্ডা পূরণে যুদ্ধে নেমেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসলামের পক্ষে কথা বললে এসব এজেন্টদের হাতে তাই খুন হতে হয়। ইসলামপ্রম, দেশপ্রেম ও সত্য কথা বলার সাহস থাকাটিও তাদের কাছে হত্যাযোগ্য অপরাধ। নির্মম অত্যাচারে আবরার ফাহাদ লাশ হয়েছে তো এদের হাতেই। এরাই দেশে চুরি-ডাকাতি, ভোট-ডাকাতি, গুম-খুন, সন্ত্রাস ও ধর্ষণে বিপুল বিক্রম দেখাচ্ছে। তাই ধর্ষণে সেঞ্চুরির উৎসব এশিয়া ও আফ্রিকার কোন নিভৃত জঙ্গলে না হলেও সেটি হয় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে।যেমনটি শেখ হাসিনার প্রথমবার ক্ষমতায় আসাতে হয়েছিল জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নব্বইয়ের দশকে। বিস্ময়ের বিষয় হলো, ক্যাম্পাসে ঘোষণা দিয়ে সে বর্বর কান্ডটি ঘটালেও সরকারের পক্ষ থেকে সে ধর্ষককে কোন রূপ শাস্তি দেয়া দেয়া হয়নি।
মানব শিশুকে মানব রূপে বেড়ে উঠতে হলে সব সময় বাঁচতে হয় এক পরিশুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। এ পরিশুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়ার গুরুত্ব বুঝাতে মহান আল্লাহতায়ালা সুরা আশ শামসে ৭ বার কসম খেয়েছেন। পবিত্র কোর’আনের আর কোথাও মহান আল্লাহতায়ালা এভাবে একের পর এক সাতবার কসম খাননি। কসম শেষে ঘোষণা দিয়েছেন, “ক্বাদ আফলাহা মান যাক্কাহা।” অর্থঃ সে ব্যক্তিই নিশ্চিত কল্যাণ পেল যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করলো। এ পরিশুদ্ধিটি বস্তুতঃ ব্যক্তির আত্মিক, নৈতিক, চারিত্রিক ও কর্মের পরিশুদ্ধি। এ পরিশুদ্ধি করণ প্রক্রিয়াকে আরবীতে বলা হয় তাহজিব। তাহজিবকে সংস্কৃতি বললে তার পূর্ণ অর্থ প্রকাশ পায় না।তাহজিব শব্দটির উৎপত্তি হাজ্জাবা ক্রিয়াপদ থেকে। হাজ্জাবা শব্দের অর্থ হলো পরিশুদ্ধ করা। ব্যক্তির জীবনে এ পরিশুদ্ধি খাদ্য,পানীয় বা সম্পদে আসে না, আসে কোর’আনী জ্ঞানে। যান্ত্রিক পরিশুদ্ধির মাধ্যমে ক্ষেতের আঁখ চিনিতে পরিণত হয়; তেমন কোর’আনী জ্ঞানের মধ্য দিয়ে যে পরিশুদ্ধি আসে তাতে একজন জাহেল ব্যক্তিও ফেরেশতাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হতে পারে। এরই উদাহরণ হলো, হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ)। তিনি নবীজী (সাঃ)কে খুন করার জন্য তরবারি নিয়ে বের হয়েছিলেন। কিন্তু সদ্য মুসলিম হওয়া নিজ বোনের গৃহের দরজায় দাঁড়িয়ে পবিত্র কোর’আনের কয়েকটি আয়াতের তেলাওয়াত শুনে মুসলিম হয়ে গিয়েছিলেন। তার জীবনে সে বিপ্লবটি এতোই গভীর ছিল যে, তিনি যখন খলিফা হন তখন চাকরকে উঠের পিঠে চড়িয়ে নিজে রশি ধরে টেনেছেন। প্রজারা খাদ্যের অভাবে আছে জানলে নিজেও পেট ভরে আহার করতেন না। মাঝ রাতে না ঘুমিয়ে খাদ্যের বস্তা নিজ কাঁধে চাপিয়ে গরীবের ঘরে পৌছিয়ে দিয়েছেন। এরূপ বিপ্লব এসেছে বহু হাজার সাহাবীর জীবনে। এবং সেটি আত্মীক পরিশুদ্ধির ফলে। ফলে জন্ম নিয়েছে মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা। নবীজী (সাঃ)র আগমনে আরবের আলোবাতাস বা খাদ্য-পানীয়ে কোন পরিবর্তন আসেনি। বরং মহাপ্লাবন এসেছিল কোর’আনী জ্ঞানে। এবং তাতে বিলুপ্ত হয়েছিল জাহেলিয়াতের অন্ধকার। সভ্য সমাজের নির্মাণে এটিই হলো মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত পথ।
কিন্তু বাংলাদেশে সে তাহজিব বা বিশুদ্ধকরণ প্রক্তিয়াটি বিকল। বরং শিক্ষা ও সংস্কৃতির নামে আয়োজন বেড়েছে ভয়ানক ভাবে চেতনা ও চরিত্রের দূষিতকরণের। শিক্ষাঙ্গণে যেমন নাই কোর’আনী জ্ঞানের অনুশীলন, তেমনি সাহিত্যের অঙ্গণে নাই কোর’আনী জ্ঞান-সমৃদ্ধ বই-পুস্তক। বরং বাংলা সাহিত্যের ময়দানটি দখলে গেছে পৌত্তলিক কাফের ও সেক্যুলারিস্টদের হাতে। ফলে এ সাহিত্যে রয়েছে বিনোদনের সামগ্রী। রয়েছে যৌনতায় উস্কানী দেয়ার সামগ্রীও। কিন্তু নাই চেতনায় পুষ্টি বা পরিশুদ্ধি জোগানোর সামগ্রী। ফলে বাঙালীর জীবনে মানব রূপে বেড়ে উঠায় রয়ে গেছে বিশাল ব্যর্থতা। এ ব্যর্থতা নিয়ে রবিন্দ্রনাথের বেদনাও ছিল গভীর। তাই লিখেছেন, “হে বিধাতা, ৭ কোটি প্রাণীরে রেখেছো বাঙালী করে, মানুষ করোনি।” তবে রবিন্দ্রনাথও সাহিত্যের খাতিরে সাহিত্য রচনা করেছেন। ফলে তার সাহিত্যেও পরিশুদ্ধি তথা মানব রূপে বেড়ে উঠতে পুষ্টি জোগানোর উপকরণ সামান্যই। রবিন্দ্র সাহিত্যের প্রসার বাড়িয়েও কাজের কাজ তেমন হয়নি। মানব রূপে বেড়ে উঠার এ ব্যর্থতার কারণে এ শতাব্দীর শুরুতে দুর্বৃত্তিতে বিশ্বে ৫ বার প্রথম হওয়া বাংলাদেশের জন্য এতটা সহজ হয়েছে। এবং এখন সম্ভব হচ্ছে চুরি-ডাকাতি, ভোটডাকাতি, খুন-গুম ও ধর্ষণে রেকর্ড গড়াও।
সর্বপ্রকার অপরাধ রোধ ও গণজীবনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মূল দায়িত্বটি সরকারের। সশস্ত্র ডাকাত, খুনি বা ধর্ষক দলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সামর্থ্য কোন ব্যক্তিরই থাকে না। এ কাজটি বিশাল। এরূপ অপরাধীদের দমনে প্রতিটি সভ্য দেশেই বিশাল পুলিশ বাহিনী থাকে। থাকে প্রশাসন। থাকে আদালত। অথচ বাংলাদেশে সঠিক ভাবে কাজ করছে না এর কোনটিই। অথচ তাদের পালতে বিপুল অর্থের রাজস্ব দেয় জনগণ। বাস্তবতা হলো, কোন সভ্য দেশও অপরাধ মুক্ত নয়। এমন কি নবীজী (সাঃ)র আমলে অপরাধ হয়েছে। কিন্তু পার্থক্য হলো, প্রতিটি সভ্য দেশে সে অপরাধের শাস্তিও হয়েছে। কিন্তু অসভ্য দেশে সেটি ঘটে না। এজন্যই পবিত্র কোর’আন শুধু নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাতের বিধানই দেয় না, দেয় চোরদের হাত কাটা এবং খুনি ও ধর্ষকদের হত্যারও নির্দেশও।
অপরাধীরা কখনোই নীতি কথায় বিশ্বাস করে না। পরকালের ভয়ও তাদের মাঝে কাজ করেন। তারা ভয় পায় একমাত্র পুলিশ ও আদালতকে। সে ভয়ই তাদের অপরাধ থেকে দূরে রাখে। তাই পুলিশ ও আদালত বিকল হলে তাদের ভয় করার কিছুই থাকে না। তখন সৃষ্টি হয় অপরাধ কর্মের জোয়ার। ফলে কোন দেশের রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যখন অপরাধী চক্রের হাতে অধিকৃত হয় তখন সে দেশে অনিবার্য হয়ে উঠে অপরাধ কর্মের একটি ভয়ানক জোয়ার। কারণ অপরাধীদের দমন ও শাস্তিদান তখন সরকারের প্রায়োরিটিতে স্থান পায় না। বরং অপরাধীগণ স্থান পায় সরকারের শরিকদার রূপে। কারণ, এরাই তো সরকারের নিকটতম আদর্শিক আত্মীয়। বাংলাদেশে তো সেটিই ঘটেছে। দেশটিতে জনগণের রাজস্বের অর্থে প্রতিপালিত হচ্ছে একটি ভোটডাকাত সরকার। এ সরকারের মূল কাজ হলো, নিজের গদির নিরাপত্তা দেয়া। এবং লেশমাত্র ভাবনা নাই জনগণের জান-মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা নিয়ে। প্রশাসন দখল করতে তারা পুলিশকে লাগাচ্ছে ভোটডাকাতিতে। এবং বিরোধীদের গুম ও খুন করতে ময়দানে নামিয়েছে দলীয় চোর-ডাকাত, ভোটডাকাত, খুন-গুমের সিদ্ধ নায়কদের। অথচ ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা পেলে ভোটডাকাতির অভিযোগে হাতকাটা বা প্রাণদন্ড হতো শেখ হাসিনা ও তার সাথীদের। ফলে এমন অপরাধী হাসিনা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ও দুর্বৃত্ত দমনে সচেষ্ট হবে সেটি ভাবা যায়? ফলে হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে যারা গুম, খুন, সন্ত্রাস ও ধর্ষণমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে তাদেরকে বেওকুফ বললেও কম বলা হয়।
—