করোনা রিলিফ ফান্ডের ১৭.৭ মিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ; টেক্সাসে ভারতীয় বংশদ্ভুত দীনেশ শাহ গ্রেফতার
পিবিসি নিউজ: পিপিপি লোনের ১৭.৭ মিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ মামলায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত টেক্সাস নিবাসী দীনেশ সাহকে গ্রেফতার করেছে আমেরিকান পুলিশ।
গত ৯ই অক্টোবর, শুক্রবার , ২০২০ তারিখের দেয়া বিচার বিভাগের বিবৃতিতে বলা হয়, গ্রেফতার হওয়া দীনেশের ১৫টি কোম্পানির একটিরও কোন অস্তিত্ব নেই। এই সকল ভুয়া কাগুজে কোম্পানি তৈরী করা হয়েছে করোনা রিলিফ বিল পাশের পরে। সাহায্য প্রাপ্তির জন্য কোম্পানির সমর্থনে যত কাগজ ব্যাংকে সরবরাহ করা হয়েছে সেগুলোও ছিল ভুয়া। এমনকি ট্যাক্স প্রদানের কাগজও জাল করেছে ভারতীয় প্রতারক দীনেশ সাহ।
বিচার বিভাগের পক্ষে ইউএস এটর্নি ইরিন নীলি কক্স ৯ অক্টোবর আরও জানান, দীনেশকে গ্রেফতারের পর সাড়ে ৬ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। অবশিষ্ট অর্থের বড় একটি অংশ নিজ দেশ ভারতে পাচার করেছে। আর কিছু অর্থে সে বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয় করেছে।
করোনা মহামারীর কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা দেয়ার জন্য জরুরি ভিত্তিতে আমেরিকান সরকার এই সাহায্যের অনুমোদন দিয়েছিলেন। দিনেশ নামক এই ভারতীয় প্রতারক নিজের নামের ১৫টি কোম্পানীর ভুয়া কাগজ দাখিল করে ২৪.৮ মিলিয়ন ডলারের আবেদন করেছিলেন। লোকবলের অভাবে মহামারীর মধ্যে সাহায্য সংস্থা জরুরি ভিত্তিতে তার সাহায্য অনুমোদন দিয়েছিলেন, ভারতীয় প্রতারক দীনেশ ইতোমধ্যে ব্যাংক থেকে ১৭.৭ মিলিয়ন ডলার উত্তোলন করেছে।
মামলার বিবরণে প্রকাশ, ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রশাসনে যেসব ব্যবসার বিপরীতে ঋণের আবেদন করা হয় সেগুলোতে নাকি শতশত কর্মচারি কাজ করতেন। করোনার কারণে সকলেই বেকার হয়ে পড়েছেন। এসব কর্মচারিকে নিয়মিত বেতন প্রদানের সমর্থনে দীনেশ ট্যাক্স রিটার্নের ডক্যুমেন্ট সাবমিট করেছেন, যার সবকটিই ভুয়া। অথাৎ দীনেশ সাহ কখনোই কোন ব্যবসা করেননি। তদন্ত কর্মকর্তারা বিস্মৃত হয়েছেন হঠাৎ করে দিনেশকে দামী গাড়ি হাকিয়ে চলাচল করতে দেখে। বেশ কটি বাড়িও ক্রয় করেছেন মে-জুন মাসে।
আইআরএস এজেন্ট টামিরা সান্টু এ মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে গণমাধ্যমকে বলেছেন, করোনায় বিপর্যস্ত ব্যবসাকে ঘুরে দাঁড়ানোর অভিপ্রায়ে সরকার বিশেষ এই ব্যবস্থা চালু করেছে। কর্মচারিরা বকেয়া বেতনসহ সামনের দু’বছর পর্যন্ত কাজ করতে সক্ষম হবেন অর্থাৎ সকলেই খেয়ে-পরে বাঁচবেন-এজন্যেই পিপিপি কর্মসূচির প্রবর্তণ করা হয়েছে। অথচ দীনেশের মত দুষ্ট লোকেরা সেই সুযোগের অপব্যবহার করেছেন। এজন্যে তাকে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলে। এর আগে ওয়াশিংটন ডিসি এলাকার আরেক বাংলাদেশি দম্পতি একইভাবে দেড় মিলিয়ন ডলার উঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের প্রাক্কালে জেএফকে এয়ারপোর্ট থেকে গত জুনে গ্রেফতার হন।
যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি স্টেটে দুই হাজারের অধিক মানুষ পিপিপি কর্মসূচিতে ভুয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে মোটা অংকের ঋণ উত্তোলন করেছেন এমন অভিযোগে কর্তৃপক্ষ তদন্ত চালাচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়, ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট এবং এফবিআই চালাচ্ছে এসব তদন্ত। এছাড়া প্রায় সাত লাখ মানুষ বেকার ভাতা নিচ্ছেন-যারা প্রকৃত অর্থে বেকার নন-এমন অভিযোগেরও তদন্ত চালাচ্ছে আইআরএস এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট। বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে সর্বসাধারণের আন্তরিক সহায়তা চাওয়া হয়েছে এসব তদন্তে। কাউকে সন্দেহ হলে নির্ধারিত ফোন নম্বরে ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজেস্টার ফ্রড হটলাইনে জানানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ভারতীয় প্রতারক দীনেশের মামলার ব্যাপারে বিচার বিভাগের দেয়া বিবৃতি নিম্নে প্রকাশ করা হলো