নওগাঁ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ভোগান্তি বেড়েছে
কিউ, এম, সাঈদ টিটো, নওগাঁ : নওগাঁর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে বেড়েছে ভোগান্তি। দুই মাসেও মিলছে না জরুরি ভিত্তিতে আবেদন করা পাসপোর্ট। অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভূলের খেসারত দিতে হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের। ভূলের কারণ জানতে চাইলে উল্টো হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। চাহিদা মতো টাকা না দিলে হয়রানির শেষ নেই। একই সঙ্গে বেড়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য। হয়রানি বন্ধে ও প্রয়োজনীয় পদপে গ্রহণসহ ঊর্ধতন কর্তৃপরে সুদৃষ্টি কামনা করেছেন সেবাগ্রহীতারা।
নওগাঁ শহরের খাস-নওগাঁ মৃধাপাড়া মহল্লার বাসিন্দা আব্দুল হান্নানের ১২ বছরের মেয়ে মালিহা তাবাসসুম। হঠাৎ মেরুদন্ড বাঁকা হয়ে যায় তার। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দেশের বাইরে নিয়ে যেতে হবে। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে মেয়ে ও নিজের পাসপোর্টের জন্য ২৬ আগস্ট ছয় হাজার ৯০০ টাকা ব্যাংকে জমা দেন আব্দুল হান্নান। এরপর ¯িøপ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ নওগাঁ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করেন তিনি।
জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট সরবরাহের কথা থাকলেও এক মাস ২৪ দিনেও হাতে পাননি। সঠিক সময়ে পাসপোর্ট না পেয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য মেয়েকে নিয়ে দেশের বাইরে যেতে পারছেন না তিনি। দিন দিন মেয়ের শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে যাচ্ছে।
অনুসন্ধ্যানে জানা যায়, পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করার পর থেকে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয় সেবাপ্রত্যাশীদের। অফিসের কর্মচারীদের যোগসাজশে দালালরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। দালাল ছাড়া কেউ অফিসে সেবা নিতে গেলে শুরু হয় নানা টালবাহানা ও হয়রানি। এসব দালালের মাধ্যমে কেউ অফিসে গেলে অফিসের কর্মচারীরা আবেদন ফরমে একটি সাংকেতিক চিহ্ন দিয়ে রাখেন। সাংকেতিক চিহ্ন দেখে চলে কমিশন বাণিজ্য।
আব্দুল হান্নানের বড় মেয়ে শাহানা হাবীবা মিম বলেন, অফিসে আবেদন করার পর মেশিন নষ্ট হয়ে আছে মর্মে কয়েকদিন আমাদের ঘোরানো হয়। ছবি উঠানোর পর অফিস থেকে যে ¯িøপ সরবরাহ করা হয়েছিল বাসায় গিয়ে দেখি সেখানে বাবার ও ছোট বোনের ¯িøপে মায়ের নামের অর ভূল।
কর্মকর্তাকে ফোন করে বিষয়টি জানালে পরদিন অফিসে যেতে বলা হয়। অফিসে যাওয়ার পর ভূল সংশোধন করা হয়েছে বলে জানানো হয়। এরই মধ্যে কেটে গেছে দেড় মাস। দেড় মাস পর যখন বোনের পাসপোর্ট সরবরাহ করা হয় সেখানে ভূলই ছিল। অথচ অফিস থেকে বলা হয়েছিল সংশোধন করে দেয়া হয়েছে। এখন আবার বলা হচ্ছে নতুন করে টাকা জমা দিয়ে আবেদন করতে। বাবার পাসপোর্ট এখনও হাতে পাইনি। প্রতিদিন অফিসে গিয়ে খোঁজ নিতে বলেছেন অফিসের কর্মকর্তা মো. শওকত কামাল।
হাবীবা মিম বলেন, আবেদন পূরণ করতে কত টাকা লেগেছিল কর্মকর্তা জানতে চেয়েছিলেন। বলেছিলাম ১০০ টাকা করে বাইর থেকে পূরণ করে নিয়েছি। তিনি তখন বলেন তারা ফরম পূরণে যদি টাকা নেয় আমরা অফিসের লোক হয়ে টাকা নেব না কেন? আর পাসপোর্ট নিয়ে বাড়াবাড়ি না করাই ভালো।
শহরের কালীতলা মহল্লার বাসিন্দা জয় বলেন, তিন মাস আগে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে পাসপোর্টের আবেদন করেছিলাম। আবেদন জমা দেয়ার সময় অফিসের লোকজন ৫০০ টাকা দাবি করেন। বাধ্য হয়ে ৫০০ টাকা দিয়েছি।
রাণীনগর উপজেলার রাতোয়াল গ্রামের রাফিল মন্ডল বলেন, ফেব্রæয়ারি মাসে পাসপোর্ট করার সময় অফিসের এক দালালের খপ্পড়ে পড়েছি। জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট করার জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। কিন্তু আবেদন ফরমে লেখা ছিল সাধারণ। এরপরই শুরু হয় লকডাউন। এখনও পাসপোর্ট হাতে পাইনি।
নওগাঁ পাসপোর্ট অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শওকত কামাল বলেন, আগস্ট মাসে ক্যামেরার একটু সমস্যা ছিল। ক্যামেরা ঠিক করার পরে আব্দুল হান্নানকে ফোন করে ডেকে এনে ছবি উঠানো হয়েছিল। এছাড়া ভূল সংশোধন করার একটা সময় থাকে। ওই সময়ের মধ্যে শিশুর আবেদনটি সংশোধন করা সম্ভব হয়নি। তবে শিশুর বাবা আব্দুল হান্নানের আবেদনটি সংশোধন করায় পাসপোর্ট আসতে দেরি হচ্ছে।
তিনি বলেন, জরুরি পাসপোর্ট ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সরবরাহের কথা থাকলেও অনেক েেত্র দেয়া সম্ভব হয় না। তবে তাদের হয়রানি বা হুমকি দেয়ার অভিযোগটি ভিত্তিহীন। যদি কেউ হয়রানির শিকার হয় অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অফিসে কোনো ধরনের টাকা নেয়ার সুযোগ নেই। আমরা জনসেবার জন্য বসে আছি। তবে অফিসের বাইরে দালাল আছে। কয়েকজন দালালকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।