হাসিনা সরকারের অপরাধনামা-ফিরোজ মাহবুব কামাল
বিদ্রোহ আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে:
শেখ হাসিনা ও তার আওয়ামী সরকারের মুল অপরাধটি স্রেফ জনগণের বিরুদ্ধে নয়, বরং খোদ মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর কোরআনী আহকামের বিরুদ্ধে। এ গুরুতর অপরাধটি বিদ্রোহের। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা শুধু সিরাতুল মোস্তাকীমই বাতলিয়ে দেননি, বরং সে সিরাতুল মোস্তাকীমে চলার পথে মু’মিনের জীবনে কীরূপ কর্মকান্ড বা মিশন হবে সেটিও সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। মিশন তো তাই যা মিশনারি ব্যক্তিটি প্রতিদিন করে, এবং যা নিয়ে তার লাগাতর ভাবনা ও ত্যাগ-সাধনা। সে পথ বেয়েই সে তার স্বপ্নের ভূবনে পৌঁছে। আর সে স্বপ্ন বা ভিশনটি হলো,আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনের বিজয়। সে লক্ষ্যে আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত মিশনটি হলো “আ’মিরু বিল মারুফ ওয়া নেহি আনিল মুনকার”, অর্থাৎ “ন্যায়ের নির্দেশ দান ও অপরাধীদের নির্মূল”। তবে সে বিজয় জায়নামাযে আসে না। মসজিদ-মাদ্রাসায় বা সুফীর আখড়াতেও আসে না। সে মিশন নিয়ে বাঁচায় অনিবার্য হয়ে উঠে আল্লাহবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে লাগাতর জিহাদ। রাষ্ট্র থেকে নমরুদ-ফিরাউনের ন্যায় অপরাধীদের নির্মূল করাই যে মহান আল্লাহতায়ালার সূন্নত সেটি তিনি নিজে তাদের নির্মূল করে দেখিয়েছেন। তিনি চান, মানুষ একাজে তার আনসার বা সহকারি হোক। ঈমান নিয়ে বাঁচার এ এক গভীর দায়বদ্ধতা। দায়বদ্ধতাই তাকে বেঈমানদের থেকে পৃথক করে ফেলে।
পবিত্র কোরআনে বার বার বলা হয়েছে, ঈমানদারগণ জিহাদ করে ও জানমালের কোরবানী পেশ করে “ফি সাবিলিল্লাহ” তথা আল্লাহতায়ালার পথে। আর বেঈমানেরা লড়াই করে “ফি সাবিলিত তাগুত” তথা তাগুত বা শয়তানের পথে। বাংলাদেশে এ দুটি পক্ষের যুদ্ধই দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে। বার বার ওমরা করলে কি হবে, হাসিনা সরকারের লড়াই যে আল্লাহর পথে নয় তা নিয়ে কি সামান্যতম সন্দেহ আছে? কারণ সেটি হলে সে লড়াইয়ে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা আসে। সে লড়াইয়ে দেশী ও ভিন দেশী কাফের শক্তির বিরুদ্ধে অঙ্গিকারও তখন তীব্রতর হয়। “ফি সাবিলিল্লাহ”র পথে বাঁচার অর্থ স্রেফ নামায-রোযা নিয়ে বাঁচা নয়, বরং “ন্যায়ের নির্দেশ দান ও অপরাধীদের নির্মূল”এর মিশন নিয়ে বাঁচা।পবিত্র কোরআনে সে তাগিদ বার বার এসেছে এবং সেটিরই বাস্তব প্রয়োগ করে গেছেন সাহাবায়ে কেরাম। প্রতি যুগে বান্দাহর দায়িত্ব হলো মহান আল্লাহর সে সূন্নতকেই অনুসরণ করা। মু’মিনের জীবনে এরূপ বাঁচার মধ্যেই তার রাজনীতি ও জিহাদ। মহান আল্লাহতায়ালার সে সূন্নতের পথ বেয়েই নবীজী (সাঃ) ও তাঁর সাহাবাগণ রাষ্ট্রের বুক থেকে আবুলাহাব, আবুজেহেল ও তার অনুসারিদের নির্মূল করেছিলেন। তাদের নির্মূলের পর দুর্বৃত্ত শাসনের নির্মূলে নেমেছিলেন পারস্য ও রোমান সাম্রাজ্যভূক্ত বিশাল ভূ-ভাগেও। শয়তানি শক্তির নির্মূলের সে ধারা অব্যাহত রাখতেই একদল মুসলমান ইখতিয়ার মহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির নেতৃত্বে ত্রয়দশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বাংলাদেশে পৌঁছেছিলেন। আর মুসলিম বাহিনীর বিজয়ই তো বিজিত দেশের নাগরিকদের জীবনে বিশাল নেয়ামত বয়ে আনে। ইখতিয়ার মহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির সে বিজয়ের বরকতেই বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ আজ মুসলমান। নইলে তাদের আজ মুর্তি পুঁজা, শাপশকুন ও গরুছাগলকে পুঁজা করতে হতো। আল্লাহর শত্রু নির্মূলে ঈমানদারগণ ময়দানে নামলে তাদের মদদে মহান আল্লাহতায়ালা ফিরাশতা নামিয়ে দেন।সেটিও মহান আল্লাহর সূন্নত।
ন্যায়ের হুকুম ও অপরাধীদের নির্মূলের কঠিন কাজটি জায়নামাজ থেকে অসম্ভব। সে কাজে শক্তি চাই। সে জন্য তো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে নেয়াটি জরুরী। তাই নবীজী (সাঃ) ও তাঁর সাহাবীগণ নামায-রোযা, হজযাকাত পালনের মধ্যে তাদের ইবাদতকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। শত্রুশক্তিকে পরাজিত করে সে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ তারা নিজ হাতে নিয়েছেন এবং ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাই ইসলামের শত্রুপক্ষের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দিয়ে জায়নামাজে ধর্মকর্ম সীমিত রাখাটি ইসলাম নয়। নবীজী (সাঃ)র সূন্নতও নয়। সেটি হলে অবাধ্যতা হয় মহান আল্লাহর নির্দেশের। সে অবাধ্যতায় খুশি হয় শয়তান ও তার অনুসারিগণ। তারা চায়, মুসলমানগণ রাজপথ শূণ্য করে মসজিদে গিয়ে আশ্রয় নিক। আর রাষ্ট্রের উপর পুরা দখলদারিটা তাদের হাতে চলে আসুক। বাংলাদেশের আওয়ামী সেক্যুলার পক্ষটির খায়েশ কি তা থেকে আদৌ ভিন্নতর? দেশে শরিয়তের প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে কাউকে রাজপথে নামতে দিতে তারা রাজী নয়।কারণ, তাতে তাদের নিজেদের রাজনীতি বিপদে পড়ে। তাদের জিহাদশূণ্য ইসলামে সেটির স্থান নাই। নিজেদের সে বিকৃত ইসলামের দোহাই দিয়েই তারা শরিয়তের প্রতিষ্ঠাকামীদের রাজনীতিকে বলছে সন্ত্রাস। প্রশ্ন হলো, মক্কার কাফেরগণ ইসলামের বিরুদ্ধে যে অবস্থান নিয়েছিল তাদের এ অবস্থান কি তা থেকে ভিন্নতর?
বাংলাদেশে সেক্যুলারিস্টদের কাজ হয়েছে, রাষ্ট্রের চিহ্নিত অপরাধীদের পরিচর্যা দেয়া। সে সাথে পুরস্কৃত করাও। অপরাধ নির্মূল করতে তো অপরাধকে অপরাধ রূপে গণ্য করার মত মানসিকতা থাকতে হয়। শাস্তি দেয়ার জন্য উপযোগী আইনও থাকতে হয়। ইসলামের সে আইন হলো শরিয়ত। কিন্তু বাংলাদেশের সেক্যুলার দলগুলির অপরাধ, তারা অপরাধের সংজ্ঞাই পাল্টে দিয়েছে। দেশটির কুফরি আইনে ব্যাভিচার,জ্বেনা বা পতিতাবৃত্তি কোন অপরাধ নয়। অপরাধ নয় সূদ ও ঘুষ খাওয়া।অপরাধ নয় মিথ্যা কথা বলা বা মিথ্যা বলে কাউকে প্রতারিত করা। বরং সে প্রতারণার কাজটি সবচেয়ে বেশী করে রাজনৈতিক নেতাগণ। নির্বাচন কালে প্রতারণা করাটি একটি শিল্পে পরিণত হয়। আট আনা সের চাউল খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে মুজিব তাই দুর্ভিক্ষ উপহার দিয়েছিলেন। সে ব্যর্থতার জন্য মুজিবের বিবেকে কোন দংশন হয়নি, কোনরূপ শরমও হয়নি। আওয়ামী লীগের আজকের নেতারাও মুজিবের সে সীমাহীন ব্যর্থতা নিয়ে লজ্জিত নয়। বরং মুজিবের এরূপ ধোকাবাজি তাদের কাছে গণ্য হয় সেক্যুলার রাজনীতির অনিবার্য কালচার রূপে। একই অবস্থা মুজিবকন্যা শেখ হাসিনার। ২০০৮ সালে ভোট নিয়েছেন ঘরে ঘরে চাকুরি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি পূরণ নিয়ে কোন ভাবনার লেশ মাত্রও কি তো মধ্যে দেখা গেছে। হাসিনার কাছে অপরাধ নয় নিরপরাধ মানুষকে নির্যাতন করা এবং তাদের খুন করা। বরং এরূপ নৃশংস বর্বরতাগুলো তার কাছে গণ্য হয়েছে রাজনীতির কালচার রূপে। তাই শাপলা চত্বরে শত শত মানুষকে খুন, গুম ও আহত করা হলেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণে সেঞ্চুরি করার উৎসব হলেও সে ঘৃণ্য অপরাধীকে হাসিনা গ্রেফতার করেনি। অপরাধীগণ নিজ দলের হলে তাদের শাস্তি দেয়া দূরে থাক পরিচর্যা দেয়াই হয় তখন সরকারের নীতি। সে নীতির প্রয়োগ করতে গিয়ে হাসিনার সরকার তার দলীয় দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে আনীত হাজার হাজার ফৌজদারি মামলা তুলে নিয়েছেন। দলীয় প্রেসিডেন্টকে দিয়ে শাস্তি মাফ করে দিয়েছেন আদালতে শাস্তিপ্রাপ্ত বহু খুনিকে। “আ’মিরু বিল মা’রুফ ওয়া নেহী আনিল মুনকার’ অর্থাৎ “ন্যায়ের নির্দেশ দান এবং অপরাধীর নির্মূল” এ কোরআনী নির্দেশের বিরুদ্ধে এর চেয়ে বড় অবাধ্যতা আর কি হতে পারে?
অপরিহার্য হলো অপরাধীদের নির্মূল:
কোন দেশের স্বাধীনতা ও সভ্যতার মূল শত্রু সে দেশের চোর-ডাকাত নয়। চোর-ডাকাতদের লোভটি মানুষের অর্থের দিকে, দেশের স্বাধীনতা ও সংহতির বিরুদ্ধে নয়। ফলে তাদের কারণে কোন দেশ পরাধীন হয় না। খন্ডিতও হয় না। ১৭৫৭ সালে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশদের হাতে যখন বাংলা অধিকৃত হয় সেটি চোরডাকাদতের কারণে হয়নি, হয়েছে মীর জাফরদের ন্যায় অপরাধী রাজনীতিবিদদের কারণে। রাজনৈতিক অপরাধীগণই সুযোগ পেলে দেশের মানচিত্রে ও স্বাধীনতায় হাত দেয়। অথচ আজ এরূপ ভয়ংকর অপরাধীদের হাতেই বাংলাদেশ অধিকৃত। আর দেশ অপরাধীদের হাতে অধিকৃত হলে তখন নৃশংস হামলা শুধু জনগণের জানমালের উপরই হয় না। তখন বিপন্ন হয় দেশের স্বাধীনতা, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও অর্থনীতিও। রাষ্ট্রীয় কোষাগার, ব্যাংক, শেয়ার মার্কেট ও রাষ্ট্রমালিকানাধীন কলকারখানা লুন্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি তখন জনগণও পথে ঘাটে লাশ হতে ও গুম হতে শুরু করে। পুলিশ, আর্মি, আাদালত ও প্রশাসনের কর্মচারিগণ তখন অত্যাচারের হাতিয়ারে পরিণত হয়। বাংলাদেশে তো আজ সেটাই সর্বস্তরে হচ্ছে। তাই ঢাকার শাপলা চত্বরে শত শত মানুষ যাদের হাতে লাশ হলো ও আহত হলো তারা আন্ডার ওয়ার্ল্ডের খুনি নয়। তারা জনগণের রাজস্বের অর্থে প্রতিপালিত পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্য। এবং তারাই নিরীহ জনগণের উপর গুলি চালানোর কাজে সরকারের পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত।যখন সে দায়িত্বটি নৃশংস ভাবে পালিত হয়, তখন শাসকশ্রেণী প্রচন্ড খুশি হয় এদের উপর এবং ভাবনা শুরু হয় কিভাবে তাদেরকে পুরস্কৃত করা যায় -তা নিয়ে।
নিজ দলের ডাকাতদের হাতে মানুষ খুন হলে ডাকাত সর্দার তার বিচার করে না। কারণ সে কাজের জন্যই সর্দারের পক্ষ থেকে সে নির্দেশপ্রাপ্ত। একই নীতি হয়েছে হাসিনা সরকারের। ফলে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাতে হাজার হাজার মানুষ লাশ হলেও সরকার সে হ্ত্যাকান্ডের অভিযোগে কোন অপরাধী খুনিকে হাজতে তোলেনি। আদালতে তুলে তাদের বিচারও করেনি। পুলিশের হাতে যখন দুয়েকজন মানুষ খুন হয় তখন সে খুনে সরকারের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে কিছুটা সন্দেহ থাকে। সেটি পুলিশের বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। কিন্তু তাদের হাতে যখন শত শত মানুষ খুন ও ঘুম হয় এবং সে খুন ও গুম নিয়ে যখন বিচার বসে না, তখন তাতে সরকারের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে কি সন্দেহ থাকে? বাংলাদেশে এরূপ সরকারি খুনিরা শত শত বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। কিন্তু সে অপরাধে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। বরং সরকারের কাজ হয়েছে, সবচেয়ে নৃশংস হত্যাকারিকে ও নির্যাতনকারিদের বেছে বেছে প্রমোশন দেয়া। মুজিব আমলে ৩০ থেকে ৪০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু সে অপরাধে কাউকে শাস্তি দেয়া দূরে থাক, ডেকে জিজ্ঞেসও করা হয়নি কেন নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করলো?
স্বৈরাচারি সরকারের এজেন্ডা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া নয়, বরং সেটি নিজের নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করা। সেটি করতে গিয়ে নিজের নিরপত্তায় নিয়োজিত বাহিনীকে হত্যা ও নির্যাতনের লাইসেন্স দেয়। দুর্বৃত্ত সরকার বেঁচে থাকে সেরূপ হত্যা ও নির্যাতনের উপর ভর করেই। কোন সভ্যদেশ এমন অপরাধী চক্র দ্বারা অধিকৃত হলে সে দেশের নাগরিকগণ মুক্তির লক্ষ্যে লড়াই করে। ইসলামে সে লড়াইটি নিছক রাজনীতি নয়, সেটি জিহাদ। ধর্মীয় ভাবে সেটি ফরজ। দেশের মানুষ কতটা সভ্য, কতটা আত্মসম্মানী ও কতটা ঈমানদার -সে বিচারটি হয় সে অপরাধী শাসকচক্রের বিরুদ্ধে নির্মূলের আয়োজন দেখে। অথচ সে ভাবনা গরুছাগলের থাকে না। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে তাদের মাঝে প্রতিবাদও উঠে না। গরুছাগলের এজেন্ডাটি তো ঘাসপাতা খেয়ে বাঁচা। কিন্তু সভ্য মানুষ শুধু পানাহার, ঘর-সংসার নিয়ে বাঁচে না। তারা দেশকে সভ্যতরও করতে চায়। আর ফেরাউন-নমরুদ, আবু লাহাব-আবু জেহেলদের মত দুর্বৃত্তদের শাসনক্ষমতায় বসিয়ে কি দেশকে সভ্য করা সম্ভব? দেশ তখন দূর্নীতি, অসভ্যতা ও ভিক্ষাবৃত্তিতে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে। যেমনটি মুজিব আমলে ও হাসিনার আমলে বাংলাদেশের ললাটে জুটেছে। তাই এমন দুর্বৃত্ত শাসকদের থেকে মুক্তিলাভ সমাজের সভ্য মানুষদের এক বড় দায়বদ্ধতা। স্রেফ নামাজ-কালাম ও হজ-যাকাত পালনে সে সভ্যতা নির্মিত হয় না বলেই আল্লাহতায়ালা জিহাদকেও ফরজ করেছেন।
স্বৈরাচারি শাসকদের নির্মুলকর্মটি তাই নিছক মানবাধিকার নয়। স্রেফ রাজনৈতিক ইস্যুও নয়। বরং প্রতিটি সভ্য নাগরিকের এক গভীর দায়বদ্ধতা। এমন একটি অধিকারের প্রতিধ্বনি করে বলিষ্ঠ বক্তব্য রেখেছেন ফ্রান্সের প্রখ্যাত লেখক Guy de Maupassant। মোপাসাঁ লিখেছেন, “Since governments take the right of death over their people, it is not astonishing if the people should sometimes take the right of death over governments.”। অর্থঃ “সরকার যখন তার নিজদেশের নাগরিকদের হত্যা করার অধিকারকে নিজ হাতে নেয়, তখন এটিও অবাক হওয়ার বিষয় নয় যে, জনগণেরও উচিত সে সরকারের হত্যার অধিকারটিও নিজ হাতে তুলে নেয়া”।১৭৮৯ সালে বিখ্যাত ফরাসী বিপ্লব ঘটেছিল তো তেমন এক দায়বদ্ধতা থেকেই। সে দায়বদ্ধতা থেকে বিপ্লব এসেছে ইরানেও। একের পর এক বিপ্লব আসছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে। ইংরেজরাও সে চেতনা নিয়ে তাদের রাজা চার্লসের গর্দান কর্তন করেছিল।
অপরিহার্য হলো মুরতাদের শাস্তি:
প্রশ্ন হলো, আবু জেহেল ও আবু লাহাবদের বাস কি বাংলাদেশে কম? দেশটিতে যারা আল্লাহর শরিয়তি নিজামের প্রতিষ্ঠাকে অসম্ভব করে রেখেছে তারা কি কম নৃশংস? এ রাষ্ট্রীয় অপরাধীদের হাতে যে শুধু আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হচ্ছে তা নয়, তাদের হাতে লাশ হচ্ছে ইসলামের পক্ষের শক্তির নেতাকর্মীরাও। লাশ হচ্ছে রাজপথে ধর্না দেয়া নিরস্ত্র মুসল্লিরা। তাদের লাশগুলোকে ময়লার গাড়িতে ফেলা হচ্ছে ও সে সাথে বহু লাশকে গায়েবও করা হয়েছে। যেমনটি গত ৬ই মে ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে হলো। প্রশ্ন হলো, নবীজীর আমলে আল্লাহর শরিয়তী আইনের বিরুদ্ধে কেউ বিদ্রোহ ও অবাধ্যতার আওয়াজ তুললে তার মাথাটিকে কি দেহের উপর থাকতে দেয়া হতো? অথচ দেশের আওয়ামী সেক্যুলারিস্টদের রাজনীতির ভিত্তি হলো শরিয়তের বিরোধীতা করা। প্রশ্ন হলো, শরিয়তের এমন বিরোধীরা হাজার বার হজ-ওমরাহ করলে বা সারা জীবন নামাজ পড়লেও কি মুসলমান থাকে? মুরতাদ হওয়ার জন্য আল্লাহর শরিয়তের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হওয়াই কি যথেষ্ট নয়? হযরত আবু বকরের সময় কিছু লোকেরা রাষ্ট্রীয় ভান্ডারে যাকাত দিতে অস্বীকার করেছিল। সে অপরাধের কারণে তারা মুরতাদ রূপে ঘোষিত হয়েছিল এবং তাদের বিরুদ্ধে হযরত আবু বকর (রাঃ) যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। আর যুদ্ধ তো শত্রুর কপালে চুমু দেয়ার জন্য হয় না। আবর্জনাকে ক্ষণিকের জন্যও ঘরে স্থান দেয়া ভদ্রতা নয়, স্বাস্থের জন্য সহায়কও নয়। তেমনি ভদ্রতা নয় আল্লাহর অবাধ্য অপরাধীদের রাষ্ট্রে স্থান দেয়া। কারণ তাতে রাষ্ট্রে পচন ধরে। অথচ বাংলাদেশ আজ এ অপরাধীদের রমরমা ভাব, রাষ্ট্র বরং তাদের হাতেই অধিকৃত।
সভ্যতার পরিমাপে নবী(সাঃ) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের যুগই হলো সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ। তাদের সে শ্রেষ্ঠতার কারণ এ নয় যে, সে আমলে পিরামিড, তাজমহল বা চীনের প্রাচীর নির্মিত হয়েছিল। বা বিস্ময়কর বৈজ্ঞানিক আবিস্কার ঘটেছিল। বরং সে শ্রেষ্ঠত্ব বিপুল সংখ্যক মানুষের অতি উচ্চতর মানবিক পরিচয় নিয়ে বেড়ে উঠায়। পিরামিড বা তাজমহল নির্মিত না হলেও সে সময় অতি উচ্চমানের অসংখ্য মানুষ নির্মিত হয়েছিল। মানব জাতি আর কখনোই এতবড় সভ্যতার জন্ম দিতে পারিনি। বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় ৫০ গুণ বৃহৎ রাষ্ট্রের খলিফা তখন ভৃত্যকে উঠের পিঠে চড়িয়ে নিজে রশি ধরে টেনেছেন। মানুষে মানুষে সমতা ও মানবাধিকারের নীতিকথা নিয়ে বড় বড় বই লেখা হয়েছে। কিন্তু মানব ইতিহাসের কোন কালে একটি মুহুর্তের জন্যও কি এরূপ ঘটনা ঘটেছে? এ বিপ্লব একমাত্র ইসলামের। তখন প্রতি জনপদে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল “আ’মিরু বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার” এর কোরআনী নির্দেশ। তখন মানুষ পেয়েছিল সিরাতুল মোস্তাকীমের সন্ধান এবং নিয়োজিত হয়েছিল সে পথ বেয়ে জান্নাতের পথে বিরামহীন পথচলায়। জান্নাতের পবিত্র মানুষদের তখন দেখা যেত শুধু মসজিদ মাদ্রাসায় নয়, বরং পথেঘাটে, লোকালয়ে, হাটে-বাজারে, প্রশাসনে, রাজনীতি ও যুদ্ধবিগ্রহে। পাপাচারিদের দ্বারা দেশ অধিকৃত হলে কি সেটি আশা করা যায়? তখন শুধু পথঘাট নয়, রাষ্ট্রের প্রশাসন, আদালত, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও রাজনীতির প্রতিটি অঙ্গণ ভরে উঠে আল্লাহর অবাধ্য জাহান্নামীদের দিয়ে। এরূপ আল্লাহদ্রোহী জাহান্নামীদের বৈশিষ্ঠ হলো, তারা সামর্থ হারায় সৎকর্মের। এবং সামর্থ পায় বীভৎস কুকর্মের। বাংলাদেশ তো তাদের কুকর্মের কারণেই দুই শতাধিক রাষ্টকে হারিয়ে ৫বার দুর্নীতিতে বিশ্বে প্রথম হয়েছে।
অপরাধ মানব-উন্নয়নকে অসম্ভব করার:
সভ্যতার গুণাগুণ বিচারে মূল বিচার্য বিষয়টি হলো, মানবিকতায় মানুষ কতটা এগুলো সেটি। যান্ত্রিক বা কারিগরি উন্নয়ন নয়। কৃষি বা স্থাপত্যে উন্নয়নও নয়। অপরাধীদের হাতে রাষ্ট্র বা সমাজ অধিকৃত হলে সে মানব-উন্নয়নের কাজটি পুরাপুরি অসম্ভব হয়ে পড়ে। সেটি যেমন ফিরাউন-নমরুদ ও আবু-জেহেল-আবু-লাহাবদেরর আমলে অসম্ভব হয়েছিল, তেমনি আজ অসম্ভব হয়ে পড়েছে বাংলাদেশে। সংক্রামক রোগের ন্যায় পাপকর্মও ছোঁয়াচে। পাপীরা ক্ষমতায় গেলে সে রোগ তখন বেশী বেশী ছড়ায়। দুর্বৃত্তিতে দেশটির বিশ্বরেকর্ড গড়ার কারণ এ নয় যে, দেশটির গ্রামগঞ্জ ও বস্তিগুলি চোর-ডাকাতের দখলে গেছে। বরং এজন্য যে, ভয়ানক অপরাধীদের দখলে গেছে দেশের রাজনীতি, প্রশাসন, শিক্ষাসংস্কৃতি, পুলিশ ও আদালত। মুসলমানদের আজকের অধঃপতনের কারণ, মুসলিম সমাজ থেকে ক্ষতিকর আবর্জনা সরানোর কাজটি বন্ধ হয়ে গেছে। বরং বেড়েছে তাদের প্রতিপালনের কাজ। এবং সেটি রাজস্বের অর্থে।
মুর্তিপুজারিদের ধর্ম হলো মন্দিরের সবচেয়ে বড় মুর্তিটাকে বেশী বেশী পুজা দেয়া। বাংলাদেশের সেক্যুলারিস্টদের রাজনীতির মূল নীতিটি হলো দেশের অপরাধমূলক রাজনীতির সবচেয়ে বড় নায়ককে জাতির পিতার আসনে বসানো।প্রশ্ন হলো, সেক্যুলারিস্ট পুজারীগণ সেটি মেনে নিতে পারলেও কোন ঈমানদার কি এমন ব্যক্তিকে সামান্য ক্ষণের জন্যও সন্মান দেখায়? আর তাতে কি তার ঈমান বাঁচে? পথভ্রষ্ট বেঈমান ব্যক্তিগণ যে শুধু সিরাতুল মুস্তাকীম চিনতে ব্যর্থ হয় তা নয়। তারা ব্যর্থ হয় সৎ নেতা চিনতেও। তাদের পথভ্রষ্টতা পদে পদে। বাংলাদেশের মানুষের সে ব্যর্থতাটা ধরা পড়ে শুধু শরিয়তের অনুসরণে নয়, যোগ্য নেতা চেনার ক্ষেত্রেও। নইলে মুজিবের নয় গণতন্ত্র-দুষমন ও বিদেশের সেবাদাস ব্যক্তিটি এত জনপ্রিয়তা পায় কি করে? হাসিনা ও তার দুর্বৃত্ত দোসরগণই বা নির্বাচনে ভোট পায় কি করে? আর সে ভ্রষ্টতাটি এসেছে কোরআনী জ্ঞানের অজ্ঞতা থেকে। চোরডাকাতের দিনের আলোর ভয় পায়। ইসলামের শত্রুপক্ষ তেমনি ভয় পায় কোরআনী জ্ঞানের। ইসলামের শত্রুপক্ষ রাজনীতিতে নিজেদের প্রতিপত্তি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে অজ্ঞতাকেই টিকিয়ে রাখতে চায়। এজন্যই গ্রামগঞ্জে পুলিশ, র্যাব ও দলীয় ক্যাডারদের নামানো হয়েছে ইসলামি পুস্তক বাজেয়াপ্ত করার কাজে। ইসলামের বিরুদ্ধে আওয়ামী সরকারেরও এটিও কি কম শাস্তিযোগ্য অপরাধ?
যে অপরাধ মিথ্যাচারে:
ইসলামে শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ শুধু খুন-ব্যাভিচার ও চুরিডাকাতি নয়। শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলো মিথ্যাচার। জাহান্নামে পৌছার জন্য মানুষ খুন বা ব্যাভিচার জরুরী নয়। মিথ্যাচারই সে জন্য যথেষ্ঠ।মিথ্যা কথা বলাকে নবীজী (সাঃ)সকল পাপের মা বলেছেন। তাই মিথ্যাচারিকে শাস্তি না দিলে রাষ্ট্র বা সমাজ থেকে পাপাচার বন্ধ হয় না। বাংলাদেশের মাটিতে বহু অপরাধির জন্ম। এদের কেউ খুনি, কেউ ব্যাভিচারি, কেউ মদ্যপায়ী, কেউ বা সন্ত্রাসী। কিন্তু মিথ্যাচারে তাদের কেউ কি শেখ হাসিনা ও আওয়ামী নেতা-কর্মীদের হারিয়ে দেয়ার সামর্থ রাখে? হাসিনার মিথ্যাচারের কিছু নমুনা দেয়া যায়। শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের বহু শত মানুষের নিহত, আহত ও গুম হওয়ার খবর বহু সাংবাদিক লিখেছেন। সরকারি মুখপাত্রগণও নিহত হবার খবর দিয়েছেন। কিন্তু হাসিনার বলেছেন “সেই (৫ মে) দিন কোনো গোলাগুলি বা সেরকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তারা সেখানে গায়ে লাল রঙ মেখে পড়ে ছিল। পরে পুলিশ যখন তাদের ধরে টান দেয়,দেখা গেল উঠে দৌড়াচ্ছে।দেখা গেল লাশ দৌড় মারল।” হাসিনার এ বক্তব্যটি বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো পত্রিকাতেই প্রকাশ পেয়েছে। এ বক্তব্যটি তার মিথ্যাচারের দলীল। যে কোন সভ্য দেশের আইনে এরূপ মিথ্যা সাক্ষি দেয়া ফৌজদারি অপরাধ। সে রাতের প্রকৃত সত্যটি হলো, সেদিন প্রচন্ড গোলাগোলি হয়েছিল। গোলাগোলিতে বহু শত মানুষ হতাহত হয়েছে। শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের লাশগুলো সেদিন হাসিনার কথা মত দৌড় মারেনি, বরং সেখানেই রক্তাত্ব নিথর দেহ নিয়ে পড়ে ছিল। সরকারি প্রেসনোট দাতারাও সে লাশগুলো দেখেছে। অনেক দেখেছে সে লাশগুলোকে ময়লার গাড়িতে তুলতে। অতএব এরূপ উদ্ভট মিথ্যা তথ্য দেয়ার জন্য শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তির আইনে বিচার ও সে বিচারে সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত। ১২ই মে তারিখে দৈনিক যুগান্তর রিপোর্ট করে, “পুলিশ, র্যাব ও বিজিবীর ৭ হাজার ৫ শত ৮৮ জন এ হামলায় অংশ নিয়েছিল। হামলাকারিদের মধ্যে ১৩০০ জন এসেছিল র্যাব থেকে। ৫,৭১২ জন এসেছিল পুলিশ বাহিনী থেকে এবং ৫৭৬ জন এসেছিল বিজিবী থেকে। হামলা শুরু হয় রাত আড়াইটার সময় এবং তিন দিক দিয়ে। দৈনিক যুগান্তর লিখেছে, সমগ্র এলাকাটি সে সময় বন্দুকের গুলি, টিয়ারগ্যাসের শেল ও ধোয়াতে পূর্ণ হয়ে যায়। পত্রিকাটি বিবরণ দিয়েছে, সেপাইদের পাশে হামলাতে অংশ নেয় ৫ জন কমান্ডো অফিসার।
হাসিনার দাবী, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে তার শাসনামলটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণযুগ। এ কথা বলে তিনি ভুলিয়ে দিতে চান যে, তার আমলে দূর্নীতি বাংলাদেশের প্রথম হওয়ার অপমান। হাসিনার কাছে বাংলাদেশের সেরা শাসক হলেন তার পিতা। অথচ তার বাকিশালী পিতার শাসনামলে কবরস্থ হয়েছিল গণতন্ত্র। নেমে এসেছিল ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ যাতে নিহত হয়েছিল বহু লক্ষ মানুষ। বন্ধ হয়ে যায় শত শত কলকারখানা।তার পিতাকে তিনি বলেন স্বাধীনতার জনক। এটিও কি কম মিথ্যাচার? তবে কি ১৯৪৭ সালে ১৯৭১ সাল অবধি কি বাংলাদেশ কি তবে পরাধীন গোলাম দেশ ছিল? আর গোলাম দেশে হলে কায়েদে আযমের মৃত্যুর পর ঢাকার খাজা নাজিমুদ্দীন রাষ্ট্রপ্রধান হন কি করে? বগুড়ার মুহম্মদ আলী ও আওয়ামী লীগ নেতা সহরোয়ার্দী সে দেশের প্রধানমন্ত্রী হন কি করে? ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে যেসব হাজার হাজার বাঙালী সৈন্য ভারতের বিরুদ্ধে লড়লো এবং অনেকে প্রাণও দিল -সেটি কি পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শাসনকে প্রতিরক্ষা দিতে?
হাসিনা নসিহত করে হরতালের বিরুদ্ধে । হরতাল যে দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর সে উপদেশও দেয়। এটিও কি কম ভন্ডামী? অথচ তিনিই বিএনপি আমলে ১৭৩দিনের হরতাল করেছেন। একটানা ৯৬ ঘন্টার হরতাল করেছেন। তার দলীয় কর্মীরা হরতাল চলাকালে গানপাউডার দিয়ে ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল। প্রচন্ড ভন্ডামি হয়েছে সর্বদলীয় সরকারের নামে। সর্বদলীয় সরকারের নামে সরকার গঠিত হয়েছে মাত্র ৪টি দল থেকে। অথচ বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা বহু। কিন্তু হাসিনার সর্বদলের সংজ্ঞায় পড়ে মাত্র আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদ ও ওয়াকার্স পার্টি -এ চারটি দল। গণতন্ত্রের নামে তেমনি একটি মশকরা করেছিল হাসিনার পিতা শেখ মুজিবও। মুজিবের কাছে একদলীয় বাকশাল ছিল গণতন্ত্র। আর সকল বিরোধী দলীয় পত্রিকাকে বদ্ধ করাটি ছিল বাকস্বাধীনতা। বাংলাদেশের বুক দিয়ে ব্রিটিশ যুগ গেছে। পাকিস্তান আমলের ২৩ বছরও গেছে। কিন্তু গণতন্ত্রের নামে এতবড় ধাপ্পাবাজী কি কোনকালেও হয়েছে?
অপরাধ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে:
যুদ্ধ প্রতিদেশেই রক্তপাত ডেকে আনে। একাত্তরের যুদ্ধে পাকিস্তানী ও ভারতীয় বাহিনীর রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বাংলাদেশ। সে যুদ্ধে বহু বাঙালী যেমন প্রাণ হারিয়েছে, তেমনি প্রাণ হারিয়েছে বহু অবাঙালীও। সেটি যেমন পাকিস্তানী বাহিনী ও সহযোদ্ধাদের হাতে তেমনি ভারত ও তার সহযোদ্ধা মুক্তিবাহিনীর হাতে। যে কোন যুদ্ধে মূল যুদ্ধটি করে সেনাবাহিনীর লোকেরা। কারণ তাদের হাতেই থাকে সর্বাধিক মারণাস্ত্র। তাই যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে হলে প্রথম ধরতে হয় তার জেনারেলদের। তাই নুরেমবার্গে অনুষ্ঠিত বিচারে যাদের শাস্তি দেয়া হয়েছিল তারা কেউ হিটলারের রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ছিল না। তারা ছিল সামরিক বাহিনীর অফিসার। কিন্তু হাসিনার সরকার পাকিস্তান ও ভারতীয় বাহিনীর অফিসারদের বিচারে তুলেননি। তার পিতা শেখ মুজিবও তোলেননি। তাদের কাউকে ডেকে নিয়ে কোন প্রশ্ন পর্যন্ত করেননি। অথচ পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর হাতে বহু নিরাপরাধ মানুষ মারা গেছে। তেমনে ভারতীয় বাহিনীর হাতে্ মারা গেছে। ভারতীয় বিমান বাহিনীর বোমা বর্ষণে ঢাকার একটি ইয়াতিম খানার শতাধিক আবাসিক ছাত্র নিহত হয়েছিল। সে খবর বিদেশী পত্রপত্রিকায় ছাপা হলেও আওয়ামী ঘরানার পত্রিকাগুলো তা কোনদিন ছাপেনি। অথচ সেটি ছিল ভয়ানক যুদ্ধাপরাধ। নিরস্ত্র রাজাকারদের ঢাকা স্টেডিয়ামে বেয়োনেট দিয়ে খুচিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। সে চিত্র বিদেশী পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। বাংলাদেশের আনাচে কাঁনাচে এভাবে হত্যা করা হয় বহু হাজার নিরস্ত্র রাজাকারকে। কয়েক লাখ অবাঙালীকে তাদের নিজ ঘরবাড়ী থেকে নামিয়ে পথে বসানো হয়। সেগুলি কি কম যুদ্ধাপরাধ? আজ একই ভাবে পথে ঘাটে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে জামায়াত, শিবির ও বিএনপির নেতাকর্মীদের। এগুলিও কি কম অপরাধ? মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের শাস্তি দেয়ায় সরকারের সামান্যতম আগ্রহ থাকলে এ খুনিদের কেন বিচার হচ্ছে না? এসব আওয়ামী খুনিদের বিচার যে শেখ হাসিনার হাতে কোনকালেও হবে না তা নিয়েও কি সন্দেহ আছে?
বিচারে সুবিচার করতে হলে তাকে নিরপেক্ষ হতে হয়। কিন্তু যখন বেছে বেছে রাজনৈতিক শত্রুদের হাজতে তোলা হয় এবং তাদেরকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন ও বিচার করা শুরু হয় -তখন সেটিকে কি আর বিচার বলা যায়? সেটি তো রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। সরকারের পক্ষ থেকে সে প্রতিহিংসার ঘটনা হলে সেটি ভয়ানক অপরাধ। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তখন বিপন্ন হয়। সরকার এভাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করছে। পুলিশ, র্যাব, বিজিবী ও আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মীবাহিনী রাজপথে বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হত্যা করছে আর সরকার সেটি করছে আদালতের বিচারকদের দিয়ে। পার্থক্যটি কোথায়? পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর অফিসারগণ এখন আর আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক শত্রু নয়। ফলে তাদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় তোলা হাসিনা সরকারের রাজনৈতিক লক্ষ্যও নয়। কিন্তু জামায়াতে ইসলামি এবং বিএনপির নেতা-কর্মীগণ তাদের রাজনৈতিক শত্রু। তাই তাদের নির্মূলটি আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের রাজনৈতিক লক্ষ্য। আর সে লক্ষ্য পূরণেই গঠিত হয় আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কি মনে করে, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ বিচারের নামে এরূপ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বিষয়টি বোঝে না? শিশুরাও সেটি বুঝে। ফলে জামায়াতের প্রতি সাধারণ মানুষের সহানুভূতি বাড়ছে। সেটি বুঝা যায় তাদের মিছিল গুলোতে প্রচুর লোক সমাগম দেখে। সেটি বুঝেই তারা সুষ্ঠ নির্বাচনের বদলে ভোট ডাকাতিতে নামে।
গণতন্ত্রের পথে সবচেয়ে বড় বাধা এখন হাসিনা সরকার। সকল অপরাধী শক্তি এখন তার পক্ষ নিয়েছে। শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয়, হাসিনা সরকারের ছলচাতুরি বিশ্ববাসীও বুঝে ফেলেছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন কোন থেকে এ বিচারের বিরুদ্ধে ধিক্কার শুরু হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ শুধু দেশের অভ্যন্তরে নয় বিদেশেও বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে। ডুবু ডুবু হাসিনার একমাত্র রক্ষক এখন ভারত। প্রশ্ন হলো, ভারত একা কি শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের তলা ধ্বসে যাওয়া নৌকাকে আবার ভাসাতে পারবে? প্রচন্ড জন-উত্তালের মাঝে আওয়ামী লীগের ডুবন্ত নৌকা ভাসাতে আসলে তারা নিজেরাও যে ডুববে তা নিয়েও কি সন্দেহ আছে? এতে প্রচন্ড তীব্রতা পাবে বরং ভারতবিরোধীতা। তাতে প্রচন্ড লাভবান হবে বাংলাদেশের ইসলামের পক্ষের শক্তি এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারত। ভারতের প্রখ্যাত ইংরেজী দৈনিকী “দি হিন্দু” ভারত সরকারকে তো সে হুশিয়ারিটিই শুনিয়েছে।