একটি ছবির ব্যাখ্যা ও ইতিকথা…..
আমাদের রাজনীতি ভিন্ন হলেও লক্ষ্য একটিই, সেটি হলো উন্নয়ন, সুখী ও সমৃদ্ধির আগামীর বাংলাদেশ
প্লিজ, আমাদের পক্ষে লেখার কোন প্রয়োজন নেই, আপনি সত্যটা লিখুন সেটাই আমাদের পক্ষে আসবে: তারেক রহমান
বাবুল তালুকদার: একজন শিল্পী যখন তার শিল্পকে হৃদয়ের গভীরে প্রবেশ করিয়ে, নিখুঁত রূপে মহা মূল্যবান অলংকারে সজ্জিত করে দর্শকের সামনে উপস্থাপন করে এবং দর্শক যখন সেটার গভীরতা অনুধাবন করতে সক্ষম হয় ঠিক তখনই শিল্পীর শিল্পটি পরিপূর্ণতা পায়।
আর এমনই প্রতিটি শিল্পের পেছনে থাকে অনেক ঘটনা, হাসি কান্না বেদনা। ঠিক তেমনি নানান ঘটনাবহুল এই ছবিটির ইতিকথা শোনাবো আজ (সম্মানিত শুভাকাঙ্ক্ষী ও পাঠকের বিশেষ অনুরোধে অত্যন্ত সংক্ষেপে ঘটনাটি উপস্থাপন করছি)।
ঘটনার সময়কাল ২০০৫ সাল, জানুয়ারি ২০ তারিখ শুক্রবার। বিকেল তিনটা, ইউনিয়ন প্রতিনিধি সম্মেলন উপলক্ষে বনানীস্থ বিএনপি’র কার্যালয় থেকে (সম্ভবত) বরিশালের উদ্দেশ্যে যাত্রা।
বাসা থেকে নিজেকে গুছিয়ে, আমার ভাঙাচোরা ইয়ামাহা হোন্ডায় চেপে ধানমন্ডি থেকে বনানীস্থ বিএনপি’র কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে আসতেই বেঁধে গেল বিপত্তি, তখন এ রাস্তাটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল। আমি সেই রাস্তায় বাইক নিয়ে প্রবেশ করা মাত্রই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বাসায় প্রবেশ করেন। এসময় এ রাস্তাটি লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে, এ অবস্থায় আমার সামনে যাওয়া অথবা পেছনে যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। তাই বাধ্য হয়েই আমাকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছিলো সেখানে।
তারপর রাস্তা ক্লিয়ার হলে আমি যথারীতি রওনা দিলাম, এবং আমি ২০ মিনিট দেরি করে ৩ টা বেঁচে ২০ মিনিটে পৌঁছালাম। এ সময় জনাব তারেক রহমান আমাকে বললেন, তোমার জন্য আমাদের ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছে! এর কারণ কি ? তিনি জানতে চাইলেন।
এসময় আমি বললাম, আমি বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে আটকা পড়ে ছিলাম (পুরো ঘটনাটি খুলে বলি)। তিনি পুরো ঘটনাটি শুনে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে? আমি বললাম জী, বঙ্গবন্ধু বাড়ির সামনে, তিনি আবার বললেন, বঙ্গবন্ধুর বাড়ি? আমি বললাম জী, এরপর তিনি একটু মুচকি হেসে বললেন, চলো গাড়ি গাড়িতে উঠো।
আমি গাড়িতে উঠলাম ঠিকই, তবে তার মুচকি হাসার রহস্যটা জানতে পারলাম না। বরিশালে সুন্দরভাবে ইউনিয়ন প্রতিনিধি সম্মেলন কাভার করে ২১ তারিখ ভোররাতে আমরা ঢাকায় পৌছালাম। ঠিক তখনও আমার মনের মধ্যে সেই হাসির কিউরি সিটি টা অজানাই রয়েই গেল।
যাইহোক, জানুয়ারি ২৫ তারিখ বনানীস্থ বিএনপি’র কার্যালয়ে জনাব তারেক রহমানের সঙ্গে আমার দেখা হওয়া মাত্র তিনি বললেন, বাবুল আমরা কিন্তু শীঘ্রই তোমার একটি জায়গায় যাচ্ছি। আমি এ সময়, জানতে চাইলাম কোথায় যাচ্ছি? তিনি কিছুই বললেন না, আবারো সেই মুচকি হাসলেন, এসময় প্রথম আলোর বিএনপি বিটের একজন সাংবাদিক (সংগত কারণেই তার নামটি প্রকাশ করছি না) তিনি মাথা চুলকাতে চুলকাতে রুমে প্রবেশ করলেন এবং বলতে লাগলেন, ভাইয়া আমরা তো আপনাদের পক্ষে লিখতে চাই। কিন্তু যখনই লিখে জমা দেই, মতি ভাই সেটা মুড়িয়ে ডাস্টে ফেলে দেয়। (এখানে উল্লেখ্য, সেই সময় তৃণমূল সভা গুলোর সংবাদ, সকল মিডিয়ায় গুরুত্ব সহকারে প্রচারিত হলেও শুধুমাত্র প্রথম আলোতে খুব একটা স্থান পেত না )।
তখন জনাব তারেক রহমান, সে সাংবাদিকের কাঁধে হাত রেখে ছোট্ট করে তিনবার স্পর্শ করে বলেছিলেন, মিস্টার….. সাহেব, প্লিজ আমাদের পক্ষে লেখার কোন প্রয়োজন নেই, আপনি সত্যটা লিখেন, সেটাই আমাদের পক্ষে আসবে। আর শুনেন, আগামীকাল আপনার এলাকা রাজবাড়ীতে আমরা সম্মেলন করতে যাচ্ছি, নিশ্চয়ই আপনি যাচ্ছেন আমাদের সঙ্গে।
তখন সেই সাংবাদিক বললেন, ভাইয়া আমি আজ রাতেই অফিস থেকে ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যাচ্ছি, পরশুদিন আপনার সঙ্গে দেখা হচ্ছে, ইনশাআল্লাহ।
এরপর ২৬ তারিখ সকালে আমরা গোপালগঞ্জে বিএনপির প্রতিনিধি সম্মেলনের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। রাতে সার্কিট হাউসে রাত্রিযাপন করে, ২৭ জানুয়ারি সকালবেলা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে আমি সহ সকল সাংবাদিকরা অপেক্ষা করছিলাম নেতার জন্য, এসময় জনাব তারেক রহমান সার্কিট হাউস থেকে বের হলেন, এবং সকল সাংবাদিকদের সাথে কথা বললেন। কিন্তু প্রথম আলো সেই সাংবাদিককে তিনি দেখতে পেলেন না, তখন তিনি আমাকে বললেন বাবুল দেখতো তিনি (প্রথম আলোর সাংবাদিক) কোথায় আছেন।
আমি তখন তাকে ফোন করলাম, সে বললেন (সাংবাদিক) বাবুল আমার তিন মিনিট লাগবে আসতে, একথা শুনে জনাব তারেক রহমান আবার ভেতরে চলে গেলেন। এবং সে আসার পর তাঁর হাত ধরেই হাঁটতে হাঁটতে স্টেজ পর্যন্ত গেলেন। এ সুন্দরভাবে সম্মেলনটি বিকেলের মধ্যেই সমাপ্তি ঘাটে।
এরপর আমাদের সকলের ক্লান্ত শরীরে ঢাকা যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে আমরা বের হলাম, এসময় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ৬ টি গাড়ি বহর আমাদের সাথে ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই আমাদের গাড়িগুলো উল্টো রাস্তায় চলতে শুরু করলো। আমরা কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না! একজন আর একজনকে জিজ্ঞেস করছিলাম কোথায় যাচ্ছি আমরা? বাট, কেউই জানে না। কিন্তু আমরা না জানলেও কিভাবে যেন সেখানকার এলাকাবাসী জেনে গিয়েছিল নেতার আগমনের খবর।
টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবর জিয়ারত করতে বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব জনাব তারেক রহমান এসে পৌঁছালেন সমাধিস্থলে। গাড়ি থেকে নামতেই চোখে চোখ পড়লো, আবারো সেই মুচকি হাসি। অবসান হলো আমার সেই কাঙ্খিত অজানা মুচকি হাসি রহস্য। আমি ভাবলাম এ কারণেই তিনি জননেতা……
জনাব তারেক রহমান সহ আমরা সকল সফরসঙ্গী অজু করে, মরহুমের কবর জিয়ারত করলাম। আমি ছবি তুললাম ক্লিক ক্লিক ক্লিক……
বঙ্গবন্ধুর সমাধি স্থল থেকে বের হয়ে, আমার মনে হলো, সেই দিনটিতে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকার মানুষ নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ, শিশু কেউই ঘরে বসে থাকেনি! নেতা কে একনজর দেখার জন্য সারিবদ্ধ ভাবে দু’পাশে দাঁড়িয়ে ছিল তারা সুশৃংখল ভাবে, আমিও ছবি তুলেছিলাম অনেক।
সবচাইতে বেশি যেটা আমার হৃদয়ের দাগ কেটেছে, সেটা হলো মাথায় সিঁদুর পরা নারীগুলো। তারা বলছে, বাবা তুমি আমাদের এখান থেকে নির্বাচন করবা। জনাব তারেক রহমান হাসিমুখে কথা শুনেছিলেন এবং বাড়িয়ে দিয়েছিলেন দুটি হাত। তারাও যেন নেতার সাথে করমর্দন করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করেছিল।
আমি এই ঐতিহাসিক ক্ষণের সাক্ষী হয়ে থাকলাম, এবং মিডিয়ার মাধ্যমে দেশবাসীকে জানানোর জন্য সকল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ছবিটি মেইল করলাম। কিন্তু ছাপা হলো না কোন মিডিয়াতে! কারন সেদিন হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে ঈদ পরবর্তী জনসভায় জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া। আর এ কারণে জনাব তারেক রহমানের মহত্ত্বের এই নিদর্শনটি চাপা পড়ে যায়।
আমার দেখা মতে, জনাব তারেক রহমান তার রাজনৈতিক চিন্তার বাইরে সম্মান করতেন ভিন্ন রাজনিতির পথ ও মতের।
আমার সামনেই একদিন বগুড়ার এক আওয়ামী লীগ নেতাকে বললেন, কি নেতা আপনার রাজনীতি কেমন চলছে? নেতা হাসিমুখে বলল জ্বি ভালো।
তখন তিনি বললেন, আমাদের রাজনীতির ভিন্ন হলেও আমাদের লক্ষ্য একটিই সেটি হল, উন্নয়ন, সুখী ও সমৃদ্ধির আগামীর বাংলাদেশ।