টরন্টোতে বাংলাদেশি ‘বেগমপাড়া’ এখন টক অব দ্য টাউন
পিবিসি নিউজ, কানাডা: কানাডার টরন্টোতে বাংলাদেশি ‘বেগমপাড়া’ নিয়ে গত কয়েকবছর ধরেই অনেক কথাবার্তা চলছে। বলা হয় বাংলাদেশে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়া বহু ব্যবসায়ী-আমলা-রাজনীতিক তাদের স্ত্রী-সন্তানদের পাঠিয়ে দিয়েছেন কানাডায়। তাদের নিয়েই গড়ে উঠেছে এই ‘বেগমপাড়া’। এখন এই ‘বেগমপাড়া’ শুধু কানাডাই নয়, সারা বিশ্বে আলোচিত খবর। গত দুই দিন বাংলাদেশের মিডিয়ায় এটি ছিল প্রধান শিরোনামে। এ সংবাদে প্রবাসী বাঙালিদের মাঝে শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। দেশটিতে সারাদিনই খবরটি ছিল ‘টক অব দ্য টাউন।’
উল্লেখ্য, এ বছরের প্রথমদিকে ঢাকার পত্র-পত্রিকায় দুর্নীতি এবং ব্যাংকিংখাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে কতিপয় লুটেরা কানাডায় বসতি স্থাপনের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশিদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে জানুয়ারি থেকেই তারা শুরু করে সামাজিক আন্দোলন।
‘রুখো লুটেরা বাঁচাও স্বদেশ’ শীর্ষক আন্দোলনে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারকারী লুটেরাদের শাস্তির দাবিতে বাংলা, ইংরেজি এবং ফরাসি ভাষায় হাতে লেখা পোস্টার, ফেস্টুন নিয়ে প্রবাসীদের উদ্যোগে বছরের শুরুতে টরেন্টো ও মন্ট্রিয়লে প্রতিবাদী মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
টরোন্টোর প্রবাসী বাঙালি লিটন মাসুদ জানান, দুর্নীতিবাজ লুটেরা, অর্থপাচারকারী এদের কোনো দল নেই। এরা দেশ ও জাতির শত্রু। কানাডায় বসবাসরত দুর্নীতিবাজদের এবং তাদের পাচারকৃত অর্থ বাংলাদেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্যর জোর দাবি জানাচ্ছি।
টরোন্টো প্রবাসী বাঙালি খালেদ শামীম জানান, অর্থ-পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বাংলাদেশ এবং কানাডা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। জন্মভূমি হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি এবং আবাসভূমি হিসেবে কানাডার প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে।
অন্যদিকে কানাডায় বিপুল পরিমাণ অর্থ বিভিন্ন দেশ থেকে পাচার হয়ে আসছে। দেশটির সন্দেহভাজন আর্থিক লেনদেন দেখভালের দায়িত্বে থাকা ফেডারেল সংস্থা ফিনট্র্যাক সম্প্রতি এ তথ্য দিয়েছে।
দ্য ফাইনান্সিয়াল ট্রানজেকশনস অ্যান্ড রিপোর্ট এনালাইসিস সেন্টার অব কানাডা (ফিনট্র্যাক) সম্প্রতি গত এক বছরে ১৫৮২ মুদ্রা পাচারের ঘটনা চিহ্নিত করেছে। ইতোমধ্যে সংস্থাটি সারাদেশ থেকে খুঁজে বের করা মুদ্রা পাচারকারীদের বিস্তারিত তথ্য কানাডীয়ান সিকিউরিটিজ ইনটেলিজেন্স সার্ভিস এবং আরসিএমপির কাছে হস্তান্তর করেছে।
জানা গেছে, ব্যাংক, ইন্সুরেন্স কোম্পানি, শেয়ারবাজারের ব্রকার, রিয়েল এস্টেট ব্রোকারেজ এবং ক্যাসিনো থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ফেডারেল এই সংস্থাটি অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে মুদ্রা পাঁচারের ঘটনা উদঘাটন করে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, কোভিডের মধ্যেও বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে কানাডায় আসছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে ফিনট্র্যাক বাড়তি তদন্ত শুরু করে। রিয়েল এস্টেট ব্রোকারেজগুলোয় গোয়েন্দাদের বাড়তি নজর রয়েছে বলে জানা যায়।
উল্লেখ্য, কানাডার বহুল আলোচিত বেগম পাড়ায় আমলাদের বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে সাবেক এবং বর্তমান উচ্চ পদে রয়েছেন এমন আমলারাও রয়েছে। গত রোববার বেগমপাড়ার সাহেবদের পরিচয় জানতে হাইকোর্টে রুল জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে দেশের বাইরে অর্থ পাচারকারীদের তালিকা জানতে হাইকোর্ট একটি রুল জারি করেছেন৷ চার সপ্তাহের মধ্যে ওই তালিকা দিতে বলা হয়েছে৷ ১৭ ডিসেম্বর রুলের শুনানি হবে৷ তালিকা জমা দিতে বলা হয়েছে দুদক চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্রসচিব, পররাষ্ট্রসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, এনবিআর চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা প্রশাসককে৷
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের বেঞ্চ অর্থ পাচারকারীদের দেশের শত্রু বলে অভিহিত করেন৷
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম বলেন, ‘‘তালিকা শব্দটি ঠিক নয়৷ আদালত মূলত অর্থ পাচারের বিষয়ে দুদকসহ বিভিন্ন সংস্থার তদন্তের অগ্রগতি জানতে চেয়েছেন৷ আমি এরইমধ্যে মধ্যে দুদকে চিঠি দিয়ে এবিষয়ে সর্বশেষ তথ্য জানতে চেয়েছি৷ তথ্য পেলে আমি তা আদালতকে জানাব৷ আর আদালত তা প্রকাশ করলে সবাই তা জানতে পারবেন৷ আমরা তো প্রকাশ করতে পারি না৷”