ওয়াজ মাহফিল বন্ধ করতে সরকারি নির্দেশ
বিশেষ প্রতিনিধি: ভাস্কর্যের নামে শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি নির্মান নিয়ে আলেমদেরকে আওয়ামী লীগের হুশিয়ারি পাল্টা হুশিয়ারির মধ্যেই ওয়াজ মাহফিল বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। বাংলাদেশের সামাজিক সংস্কৃতির অংশ ওয়াজ মাহফিল বন্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই পুলিশের এসপি, ওসি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে জাতীয় সংসদের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নিমিত্তে এমন উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
আমার দেশ ইউ কে’র হাতে আসা সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যায়ল থেকে ২৫ নভেম্বর (২০২০) ইস্যু করা চিঠিটি সাক্ষর করেছেন সহকারি কমিশনার ইন্দ্রজীত সাহা। চিঠিটি পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহি অফিসার ও থানার ওসিদের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। এরকম চিঠি প্রতিটি উপজেলা নির্বাহি অফিসার এবং থানার ওসিকে সব জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ইন্দ্রজিত সাহার লেখা চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, খুলনার বিভাগী কমিশনারের অফিসের নির্দেশনার আলোকে এই চিঠি লেখা হয়েছে। চিঠির বিষয়বস্তুতে বলা হয়েছে, একাদশ জাতীয় সংসদের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ষষ্ঠ বৈঠকের কার্যবিবরণীর ১২(ঘ) নং সিদ্ধান্ত/সুপারিশ বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে। চিঠিতে পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহি অফিসার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) নির্দেশ দেয়া হয়েছে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ বাস্তায়নে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য। সংসদীয় কমিটির সিদ্ধান্তটির বর্ণনায় বলা রয়েছে-‘দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত ওয়াজ মাহফিলে লাউড স্পীকার ব্যবহারে যে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয় তা লাঘবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা।’
এই নির্দেশনার মাধ্যমে মূলত বাংলাদেশের আবহমান কালের সামাজিক সংস্কৃতির ঐতিহ্য ওয়াজ মাহফিলকে বন্ধ করার একটি প্রক্রিয়া নিয়েছে সরকার। এ অঞ্চলের মুসলিমদের সংস্কৃতি হচ্ছে ওয়াজ মাহফিল। প্রতিটি মসজিদ, মাদ্রাসা ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এই ওয়াজ মাহফিল আয়োজন করে থাকেন। মাইকের প্রচলন যখন থেকে শুরু তখন থেকেই ওয়াজ মাহফিলে এটা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এ অঞ্চলের মুসলিম ঐতিহ্যের ওয়াজ মাহফিলে এতদিন লাউড স্পীকার ব্যবহারে কোন রকমের জনদুর্ভোগ হয়নি। এখন শেখ হাসিনার এই জামানায় এসে মাইকে জনদুর্ভোগের অজুহাতে ওয়াজ মাহফিল বন্ধের জন্য বলা হচ্ছে। ওয়াজ মাহফিল ছাড়াও বিভিন্ন গান-বাজনা এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে লাউড স্পীকার ব্যবহা করে উচ্চস্বরে আওয়াজ করা হয়। এ প্রসঙ্গেও কিছু উল্লেখ নেই। শুধু বলা হয়েছে ওয়াজ মাহফিলের মাইক ব্যবহারে জনদুর্ভোগ হচ্ছে।
এর আগে মাসজিদে জু’মার খুৎবা নিয়ন্ত্রণের জন্য শেখ হাসিনার সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছিল। ইসলামিক ফাইন্ডেশনকে ব্যবহার করে খুৎবায়, কতটুকু কি বলা যাবে, বা বলা যাবে না সেই বিষয়ে নির্দেশণা জারি করেছিল শেখ হাসিনা সরকার। এছাড়া ১৪৪ ধারা জারি করেও অনেক ওলামায়ে কেরামের ওয়াজ মাহফিলে বন্ধ করে দিতে দেখা গেছে ইতোমধ্যে।
গত বছরখানেক আগে মিজনুর রহমান আজহারি নামক একজন তরুণ আলেমের ওয়াজ মাহফিলের বিভিন্নস্থানে প্রথমে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। একপর্যায়ে তাঁকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে।
২০১৪ সালে বিনা ভোটের সরকার গঠন করে এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ভোটের আগে রাতে কেন্দ্র দখলে নিয়ে ব্যালটে সীল মেরে ক্ষমতা আকড়ে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিরোধী দলকে কঠোরভাবে দমনের পর এখন ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিলকেও ভয় পাচ্ছে ফ্যাসিবাদি সরকার।
৯০ শতাংশ মানুষের সামাজিক সংস্কৃতি ওয়াজ মাহফিল বন্ধের উদ্যোগের পাশপাশি দেশের বিভিন্ন জায়গায় শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি স্থাপন নিয়ে চলছে তোড়জোড়। সরকারের মন্ত্রি ও আওয়ামী লীগের মন্ত্রিরা মূর্তি নির্মানে বিরোধীতাকারীদের হুশিয়ারি দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। আলেম সমাজ যাতে মূর্তি নিয়ে ওয়াজ মাহফিলে ধর্মীয় দৃষ্ঠিকোণ থেকে আলোচনা করতে না পারেন সেটাই হচ্ছে মূল লক্ষ্য।
ওয়াজ মাহফিলে ওলামায়ে কেরাম ভাস্কর্য ও মূর্তি নির্মানে ইসলাম ধর্মের ব্যাখ্যা কোরআন হাদীসের আলোকে তুলে ধরছেন। যা শেখ হাসিনা সরকারের মূর্তি নির্মানের কর্মসূচিকে গ্রাম পর্যন্ত মানুষের সামনে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তাই ওয়াজ মাহফিল বন্ধের মাধ্যমে শেখ হাসিনা এখন আলেমদের মুখও বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে।