আল্লামা কাসেমীর জানাজা সম্পন্ন, মানুষের ঢল
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকারমে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। আজ সোমবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে আল্লামা কাসেমীর জানাজা হয়। তার ছোটো ছেলে জাবেদ হোসাইন কাসেমী জানাজায় ইমামতি করেন। এতে বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেন।
গতকাল হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জাতীয় ঈগাহ ময়দানে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে আজ সকালে জানাজা সেখান থেকে স্থানান্তর করে সকালে বায়তুল মোকারমে নেওয়া হয়। জানাজায় অংশ নিতে আসা লোকজনও দল বেধে বায়তুল মোকারমে যান।
আজ সোমবার সকাল ৮টার আগেই নূর হোসাইন কাসেমীর জানাজায় অংশ নিতে হাজার হাজার মানুষ জাতীয় ঈদগাহে জড়ো হন। পরে তারা যখন জানতে পারেন জানাজা বায়তুল মোকারমে হবে, তখন তাঁরা দলে দলে বায়তুল মোকাররমে যান।
জানাজায় অংশ নিতে আসা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় বায়তুল মোকাররম ও এর আশপাশের এলাকা। মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ পাশের এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। বায়তুল মোকাররমের চার পাশের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
জানাজার আগে বক্তব্যে হেফাজতে ইসলামের আমীর মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, ‘নূর হোসাইন কাসেমীর সঙ্গে আমার হৃদয়ের সম্পর্ক ছিল। তাকে হারিয়ে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি তা প্রকাশের ভাষা নাই। আমাদের অনেক বড় লোকসান হয়ে গেছে। আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছি। তিনি ইসলামের জন্য আজীবন কাজ করে গেছেন, অনেক মানুষকে ইসলামের পথে এনেছেন। তাঁর মৃত্যুতে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে।’
আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর বক্তব্যের সময় উপস্থিত অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বাবুনগরী বলেন, ‘উনি কোনো বাতিলের সঙ্গে আপস করেননি, উনি হকের উপরে ছিলেন। কোনো হুমকিধামকির কাছে মাথা নত করেননি। আমাদেরও উনার মত দৃঢ় থাকতে হবে।’
এ ছাড়া জানাজার আগে বক্তব্য দেন ভারতের দেওবন্দ থেকে আসা মাওলানা শফিক আহমেদ কাসেমী, হেফাজতে ইসলামের জ্যেষ্ঠ নেতা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, নূর হোসাইন কাসেমীর ছোটো ভাই মাওলানা আবদুল কুদ্দুসসহ অনেকে।
নূর হোসাইন কাসেমী রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল রোববার দুপুর ১টায় ইন্তেকাল করেন। গত ১ ডিসেম্বর শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতার কারণে আল্লামা কাসেমীকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাৎক্ষণিক তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। নূর হোসাইন কাসেমীর ঠান্ডা ও শ্বাসকষ্ট থাকলেও কয়েক দফা করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল আসে।
নূর হোসাইন কাসেমী হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটির ঢাকা মহানগর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। সংগঠনের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.)-এর মৃত্যুর পর গত ১৫ নভেম্বর নতুন করে কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে আল্লামা বাবুনগরীকে আমির ও নূর হোসাইন কাসেমীকে মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়।
তিনি একাধারে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব, আল হাইআতুল উলয়ার সহসভাপতি, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র সহসভাপতি এবং জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা ঢাকা ও জামিয়া সোবহানিয়া মাহমুদ নগরের শায়খুল হাদিস ও মহাপরিচালক ছিলেন।
হেফাজত আন্দোলন, খতমে নবুয়ত আন্দোলনসহ প্রভৃতি আন্দোলনে নূর হোসাইন কাসেমী নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছেন। এ ছাড়া তিনি প্রায় ৪৫টি মাদ্রাসা পরিচালনার কাজে যুক্ত ছিলেন।