অ্যাসাল’র ১৩ তম বার্ষিক কনভেনশন অনুষ্ঠিত
‘দ্য নিউ নরমাল-অ্যামব্রেসিং দ্য চেইঞ্জ’- শ্লোগানের মধ্য দিয়ে গত ১২ ডিসেম্বর শনিবার নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয়েছে অ্যালায়েন্স অব সাউথ এশিয়ান আমেরিকান লেবার-অ্যাসাল’র ১৩ তম বার্ষিক কনভেনশন। করোনা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ওইদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এ কনভেনশনটি ভার্চুয়ালে অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে মূলধারায় দক্ষিণ এশিয়ার ৮ দেশীয় ইমিগ্র্যান্টদের একমাত্র সংগঠন অ্যাসালের এ ব্যতিক্রমী মিলনমেলায় রেকর্ড সংখ্যক মূলধারার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি সহ দক্ষিণ এশিয় ইমিগ্র্যান্টরা যুক্ত হন। ভার্চুয়াল কনভেনশনটি অ্যাসাল’র সদর দফতর নিউইয়র্কে জামাইকার ১৬৫-২৩ হিলসাইড অ্যাভিনিউ থেকে পরিচালিত ও সম্প্রচারিত হয়। কনভেনশনটি দশ মিলিয়নেরও বেশি দর্শকের মাঝে বিশ্বব্যাপী প্রচারিত হয়।
অ্যাসালের ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ও প্রতিষ্ঠাতা মাফ মিসবাহ উদ্দিন, ন্যাশনাল সেক্রেটারী মোহাম্মদ করিম চৌধুরী এবং মিশিগান চ্যাপ্টার সভাপতি ড. মোঃ রাব্বি আলমকে সাথে নিয়ে এই সম্মেলনটি পরিচালনা করেন।
কনভেনশনের উদ্বোধনী ভাষণে প্রখ্যাত লেবার ইউনিয়ন লিডার অ্যাসাল প্রেসিডেন্ট মাফ মিসবাহ উদ্দিন অ্যাসাল প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, আদর্শ, লক্ষ্য ও কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশিসহ দক্ষিণ এশিয়ান-আমেরিকানরা যাতে নিজ নিজ অধিকার ও মর্যাদা সুসংহত রাখতে পারেন সেজন্যে একযোগে কাজের অঙ্গিকারেই মূলত: ‘অ্যাসাল’ গঠিত হয়।
তিনি বলেন, অ্যাসাল গ্লোবালী চিন্তা-চেতনায় তৃণমূল থেকে বাংলাদেশীসহ দক্ষিণ এশিয়ানদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া জোরালোভাবে উপস্থাপন করছে। ইমিগ্র্যান্টদের নানা ইস্যুগুলো জনপ্রতিনিধিদের ইস্যুতে পরিণত করে তা বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করছে অ্যাসাল। তিনি সকল অ্যাসাল চ্যাপ্টারের কঠোর পরিশ্রমের স্বীকৃতি দিয়ে বলেন, “আমাদের আত্ম-কেন্দ্রিক হওয়া উচিত নয়, আশেপাশের লোকদের কেন্দ্র হওয়া উচিত আমাদের।” “সর্ব হারানো লোকের প্রতিনিধিত্ব করাও অ্যাসালের দায়িত্ব। মূলধারার প্রখ্যাত লেবার ইউনিয়ন লীডার মাফ মিসবাহ উদ্দিন বলেন, অ্যাসাল ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার” আন্দোলনকে সমর্থন করছে কারণ আমরাও মর্যাদার পক্ষে লড়াই করছি। মনে রাখতে হবে স্বল্প আয়ের অভিবাসীদের রক্ত-ঘামে আমেরিকা বিনির্মাণ হয়েছে। তিনি ইমিগ্র্যান্টদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় মূলধারার রাজনীতিতে দক্ষিণ এশীয়দের অবস্থান আরো সুসংহত করতে অ্যাসাল দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
কনভেনশনে বিগত বছরের কার্যক্রম তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন অ্যাসালের ন্যাশনাল সেক্রেটারী এম করিম চৌধুরী। তিনি এসময় অ্যাসালের ন্যাশনাল কমিটিসহ বিভিন্ন চ্যাপ্টারের কর্মকর্তাদের পরিচয় করিয়ে দেন।
করিম চৌধুরী বলেন, অ্যাসাল দক্ষিণ এশীয় আমেরিকানকে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম দিয়েছে যাতে আমরা সকলেই মূলধারার রাজনীতিতে সমৃদ্ধ হতে পারি। অ্যাসাল আমাদের কমিউনিটি এবং মূলধারার রাজনীতির মধ্যকার সেতু।
তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট পদে বিজয়ী হওয়া, হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ এবং সম্ভাব্য ইউএস সেনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আমাদের যাত্রার শেষ নয়। মারাত্মকভাবে বিভক্ত জাতিকে একত্রিত করা, করোনা মহামারীকে পরাজিত করা, সম্পূর্ণ ভঙ্গুর অর্থনীতিটি পুনর্গঠন করা, আন্তর্জাতিক জোটের অংশীদারদের মধ্যে ভঙ্গুর ট্রাস্টকে পুনর্গঠন করা, আমেরিকান মূল্যবোধকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করা, শেষ পর্যন্ত আমরা যে বিশ্বাস ও সম্মান হারিয়েছি তা পুনরুদ্ধার করার দুর্দান্ত কাজগুলো চার বছরের ট্রাম্পের তান্ডব আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জিং কাজ।
তিনি বলেন, ট্রানজিশন টিম প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নিতে কাজ শুরু করার সাথে সাথে অ্যাসাল নিম্নলিখিত বিষয়গুলোকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত জো বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত কমলা হ্যারিসের নজরে আনতে চায়:
জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা: আমেরিকান অর্থনীতি, জাতি, অভিবাসন এবং ধর্মীয় সম্পর্ক সম্পর্কিত ট্রাম্পের মতামতের কারণে আমাদের জাতি গভীরভাবে বিভক্ত। ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতগুলো তাত্ক্ষণিকভাবে নিরাময় শুরু করা দরকার।
কভিড -১৯ ইরিডিকেশন পরিকল্পনা: করোনাভাইরাস প্রসারণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ কর আবশ্যক।
জরুরী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার: আমাদের ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়, ব্যক্তি ও পরিবারগুলোকে ত্রাণ সরবরাহ করার জন্য আমাদের বিস্তৃত অর্থনৈতিক উদ্দীপনা প্যাকেজটি সরবরাহ এবং বিতরণ করা দরকার। সরকারী সংস্থাগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। দেশব্যাপী এই বাজেট সংকট কাটিয়ে ওঠতে ফিডসকে আর্থিক সহায়তা সরবরাহ করতে হবে।
মধ্যবিত্ত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আঘাতকারী ট্রাম্পের বেআইনী কর নীতি বাতিল এবং প্রতিস্থাপন করতে হবে। শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণির পক্ষে মধ্যবিত্ত শ্রেণির কর নীতি জাতির প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি।
শিক্ষার্থী ফরগিভনেস এবং টিউশন ফ্রি কলেজ শিক্ষা (স্নাতক ডিগ্রি অবধি) মধ্যবিত্ত বৃদ্ধির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
বিভিন্ন জাতি এবং ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করতে হবে। ভাল, জাতি, ধর্ম এবং উত্স দেশ ভিত্তিক বৈষম্য সমাধান করা আবশ্যক। সাদা আধিপত্য অবিলম্বে সম্বোধন করা আবশ্যক।
অভিবাসন সংস্কার: ১১ মিলিয়নেরও বেশি অনিবন্ধিত এলিয়েন, ডিএসিএ এবং টিপিএস প্রাপককে বৈধ করার পথ প্রদান করতে পারে এমন ব্যাপক অভিবাসন সংস্কারের প্রয়োজন। ইমিগ্রেশন গ্রিডলককে অবশ্যই সম্বোধন করতে হবে যাতে যোগ্য অভিবাসীরা বৈধ হওয়ার আগে আমাদের অর্থনীতির একটি অংশ হতে পারে।
বিদ্যমান ফেডারেল পাবলিক চার্জ আইন সংশোধন : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক চার্জ আইন অযৌক্তিক হিসাবে প্রমাণিত। আমেরিকান সংবিধানের মূল থিম, অভিবাসন নীতি এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের সাথে সাংঘর্ষিক। অ্যাসাল ফেডারাল পাবলিক চার্জ আইন সংশোধন বা নির্মূল করার জন্য ফাইট ব্যাক কৌশল শুরু করার পরিকল্পনা করেছে। প্রথম প্রজন্মের অভিবাসীদের উপর বর্তমান পাবলিক চার্জ আইনের বিধ্বংসী প্রভাব থেকে আমাদের জনগণকে রক্ষার জন্য আমরা সব কিছু করব।
সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা: আমরা সকলেই একমত হয়েছি যে স্বাস্থ্যসেবা আর কোনও সুযোগ-সুবিধা নয়। তবে এটি আধুনিক সময়ের অন্যতম মৌলিক অধিকার। আমেরিকার সমস্ত বাসিন্দাদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের স্বাস্থ্যসেবা পরিকল্পনা করতে হবে এবং
কর্মচারী নিখরচায় আইন: আমাদেরকে যে কোনও জায়গায় সংগঠিত করতে, ইউনিয়ন কাজ তৈরি করতে, মধ্যবিত্ত শ্রেণি তৈরি করতে সহায়তা করা আবশ্যক।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অ্যাসালের ১৩ তম বার্ষিক কনভেনশন কমিটির চেয়ার ও সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের অধ্যাপক ড. মহসিন পাটোয়ারি।
বক্তব্য রাখেন, নিউইয়র্ক স্টেট কম্পট্রোলার থমাস দিনাপলি, নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিয়া তিশ জেমস, নিউইয়র্ক স্টেট সেনেট মেজরটিলি লিডার আন্দ্রেয়া স্টুয়ার্ট-ক্যাসিনস, নিউইয়র্ক স্টেট এসেম্বলী স্পিকার কার্ল হেস্তি, নিউ ইয়র্ক সিটির কম্পট্রোলার স্কট স্ট্রিংগার, কংগ্রেসম্যান পল টনকো, ম্যাক্স রোজ, কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং, ক্যারলিন বি ম্যালোনি ও ইয়ভেট ডি ডি ক্লার্ক, ম্যানহাটান বরো প্রেসিডেন্ট গ্যাল এ ব্রিউয়ার, সদ্য নির্বাচিত কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট ডোনভান রিচার্ডস, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর ডায়ান জে সাভিনো, রোক্সান পারসৌড, লুইস সেপুলভেদা, জন ল্যু, জামাল বেইলি, রবার্ট জ্যাকসন, ব্রায়ান এ বেঞ্জামিন, জুলিয়া সালাজার, এবং কেভিন থমাস, অ্যাসেম্বলিম্যান ডেভিড আই ওয়েপ্রিন, অ্যালিসিয়া এল হেন্ডম্যান, মাইকেল কাসিক, জেফ অব্রে, ইনেজ ডিকেন্স, ল্যাট্রিস ওয়াকার, কারিনেস রেস, নাথালিয়া ফার্নান্দেজ, রন কিম, হার্ভে এপস্টেইন, চার্লস ডি ফলস, জেনিফার রাজকুমার ও জেসিকা গঞ্জালেজ রোজাস, কাউন্সিলম্যান বেঞ্জামিন কল্লোস, ভেনেসা গিবসন, মার্ক লেভাইন, ইদানিস রদ্রিগেজ, ব্র্যাড ল্যান্ডার, হেলেন রোজনথাল, ব্যারি গ্রোডেনচিক, আই ডানিক মিলার, অ্যাড্রিয়ান অ্যাডামস, এবং ফারাহ লুইস, কোয়ালিশন অব ব্ল্যাক ট্রেড ইউনিয়নিস্ট প্রেসিডেন্ট এবং টিডব্লিউইউ লোকাল ১০০ এর ভাইস প্রেসিডেন্ট চার্লস জেনকিনস, এনওয়াইএস পাবলিক এমপ্লয়িজ ফেডারেশন (পিইএফ) এর প্রেসিডেন্ট ওয়েন স্পেন্স, লোকাল ৩৭২ এবং ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল ৩৭ এর প্রেসিডেন্ট শন ডি ফ্রাঙ্কোইস আই, কমিউনিটি লীডার ইব্রাহিম খান, শেরিল ফেটিক, লাস্ট্রিস ক্যাশ, সাইমন সাইয়েদ, হেলাল শেখ, সান্দ্রা ওয়াং, ইউদেলকা তাপিয়া, ড. নীতা জৈন, ড. দিলীপ নাথ, জেনি লো, এবং কোশি টমাস, ‘বাংলাদেশীজ ফর বাইডেন ন্যাশনাল কাউন্সিল’র ন্যাশনাল ডাইরেক্টর আনিস আহমেদ, ন্যাশনাল ট্রাস্টি ইউটিসি এসোসিয়েটস এর সিইও ইঞ্জিনিয়ার আজিজ আহমেদ, অ্যাসাল কর্মকর্তা শরাফত হুসেন, নুরুল হক, সাহানা বেগম, জামিলা উদ্দিন, সুলতানা খানম, আদন ইসলাম, আফরোজা বেগম রোজি, শারমিন সুলতানা, সৈয়দ তাহমিদুল হক, মোঃ আলাউদ্দিন, ডা. মজিবুর রহমান, খায়রুল হোসেন, ইরশাদ শেখ, রেজিনাল্ড রাজ্জাকরুনা, আবু দিখাতে, ফারুক হোসেন; মোঃ আলী হোসেন, সৈয়দ আলম, ড. রাশিদ মালিক, ইব্রাহিম আল জাহিম, শাহ ফরিদ, মিজাবুর রহমান, মেঠু আমিনুল ভূঁইয়া, মুকিত রহমান প্রমুখ।
কনভেনশনে শুভেচ্ছা সহ বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে করণীয় নিয়ে বক্তব্য দেন মূলধারার নির্বাচিত প্রতিনিধি, শ্রমিক ইউনিয়ন এবং অ্যাসালের বিভিন্ন চ্যাপ্টারের প্রতিনিধিরা। গত নির্বাচনে অ্যাসালের ঐতিহাসিক ভূমিকা সহ মূলধারায় দক্ষিণ এশিয়ানদের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও কনভেনশনে ওঠে আসে। অ্যাসাল মূলধারার রাজনীতিতে একটি পাওয়ার হাউস হয়ে ওঠছে মন্তব্য করে বক্তারা অ্যাসালের অসামান্য কাজের জন্য ধন্যবাদ জানান। তারা অ্যাসালের প্রথম ভার্চুয়াল এ কনভেনশনটিকে একটি সেরা কনভেনশন হিসেবেও অভিহিত করেন।
সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা আন্ড্রেয়া স্টুয়ার্ট-কাজিন্স বলেন, “যদি অ্যাসালের কোন সমস্যা থাকে তবে তারা বিষয়টি নিয়ে আমার অফিসে ফোন করতে পারে অথবা আমার সাথে বৈঠক করতে পারে। অন্যরাও তাদের বক্তৃতাকালে অনুরূপ আশ্বাস প্রদান করেন।
শেষে অ্যাসাল ন্যাশনাল করেসপন্ডিং সেক্রেটারি জেড মাতালোনে ধন্যবাদ সূচক বক্তব্যে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।