একজন আশ্রাফ আলী হাওলাদার ও পটুয়াখালী জেলা বিএনপি
পিবিসি নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশের সর্ব কনিষ্ঠ গ্রাম সরকার, পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সিনিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট, পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক, মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জনাব আশ্রাফ আলী হাওলাদার ওরফে ব্রুনাই আশ্রাফ মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির অভিভাবক হিসাবে পরিচিত। সুখে দুঃখে সাধারণ কর্মীদের পাশে থাকা এই নেতাকে নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদন।
তৃনমুল কর্মীদের প্রান পুরুষ জনাব আশ্রাফ আলী হাওলাদার দলীয় কোন্দল ও ষরযন্ত্রের কারনে জেলা বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও বঞ্চিত ছিলেন দীর্ঘদিন! ১৯৯৬ ও ২০০১ সনে পটুয়াখালী-১ আসন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রার্থী ছিলেন আশ্রাফ আলী হাওলাদার। ২০০১ সনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পটুয়াখালী-১ আসনে সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এভিএম আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়ায় প্রত্যক্ষভাবে তিনি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। মির্জাগঞ্জ উপজেলার নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা আশরাফ আলী হাওলাদারের বিচক্ষণতায় জনাব এবিএম আলতাফ হোসেন চৌধুরী বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। নির্বাচনের সকল কার্যক্রম আশরাফ আলী হাওলাদারের নিজস্ব অফিস থেকেই পরিচালিত হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় এলে প্রথমে তাকে মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়, আস্তে আস্তে তার জেলা বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদও কেড়ে নেয়া হয়। এমনকি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও তাকে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়নি! এভাবেই অবহেলিত ছিলেন বিএনপি আমলের সেই পাঁচ বছর।
আশ্রাফ আলী হাওলাদারের সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ পটুয়াখালী জেলাধীন মির্জাগঞ্জ উপজেলার প্রানকেন্দ্র সুবিদখালী বাজারের প্রভাবশালী ধর্মভীরু পরিবারের আলহাজ্ব আব্দুল কাদের হাওলাদারের সন্তান, আলামিন সুপার মার্কেট ও আশ্রাফ ব্রিক ফিল্ডের মালিক জনাব আশ্রাফ আলী হাওলাদার ছাত্রজীবন থেকে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত।
পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আশ্রাফ আলী হাওলাদার এলাকার জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকলেও প্রতিহিংসা ও ষরযন্ত্রের কারনে পদবঞ্চিত ও অবহেলিত হয়ে আছেন দীর্ঘদিন! একজন সফল ব্যবসায়ী ও সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে রাজনীতিতে একটি বিরাট অবস্থান রয়েছে সাবেক এই ছাত্র নেতার। ছাত্রবেলা থেকেই তিনি বিএনপি রাজনীতিতে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত।
১৯৭৫-৭৬ সনের খুলনা বিএল কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের প্রভাবশালী ছাত্রনেতা আশ্রাফ আলী হাওলাদার ১৯৮০ সনে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে যোগদান করেন। শহীদ জিয়ার পটুয়াখালী সফর কালে এই তরুন আশ্রাফ আলীর কর্মচঞ্চলতা দেখে তাঁকে তিনি পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সিনিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়ীত্ব প্রদান করেন এবং পরবর্তীতে তিনি মির্জাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮২ সালে এরশাদ সরকারের সামরিক শাষন জারি হলে দেশব্যাপী বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ধরপাকর শুরু হয় তাই কিছুদিন আত্মগোপনে থেকে জীবন বাঁচাতে বিদেশে চলে যান।
প্রথমে তিনি ব্রুনাই দারুসসালামের একটি কম্পানীতে চাকুরী শুরু করেন এবং ১৯৮৭ সনে ব্রুনাইয়ের লোকাল মালায়ু মালিক হাজী হুসাইনির সাথে যৌথভাবে ঠিকাদারী ব্যবসা শুরু করেন। বিদেশের মাটিতে ব্যবসায়ীক সফল হয়ে অর্থনৈতিক সফলতা নিয়ে এরশাদ সরকার পতনের পরে ১৯৯১ সনের প্রথম দিকে বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
১৯৯১ সনের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও সাবেক বানিজ্যমন্ত্রী এম কেরামত আলীকে (বিএনপি) সমর্থন দিয়ে আবার পুর্নদ্যমে বিএনপির রাজনীতি শুরু করেন। ঐসময় থেকে জনগনের মাঝে দান খয়রাত ও সামাজিক উন্নয়নমুলক কাজে নিজেকে এতবেশী জড়িয়ে ফেলেন যে দেশের মানুষ ভালবেসে তাঁকে “ব্রুনাই আশ্রাফ” নামে ডাকতে শুরু করেন। এভাবেই তিনি এলাকায় জনপ্রিয় ব্রুনাই আশ্রাফ হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি রাজনীতির পাশাপাশি ঠিকাদারী, ইটের ভাটা, সুপার মার্কেট ইত্যাদি ব্যবসার সাথে জড়িত।
এলাকার বেকার ছেলেদের কর্মসংস্থানের জন্য দেশ বিদেশে মুলত মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইতে প্রায় সহস্রাধিক লোক প্রেরন করেছেন, যাদের মধ্যে এখনো অনেকে সচ্ছলভাবে প্রবাসে অবস্থান করছেন। ১৯৯৫ সালে মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি ও ২০০২ সালে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে উপজেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হন।
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে আবারো তিনি বিএনপির মনোনয়ন চাইলেও সাবেক বিমান বাহিণী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে সমর্থন করেন এবং তাঁর নির্বাচনী দায়ীত্ব পালন করে বিজয়ী হন। বিএনপি ক্ষমতায় এলে জনাব আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। দায়ীত্ব প্রাপ্তির কিছুদিনের মধ্যে আশ্রাফ আলী হাওলাদারের সাথে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী বৈরী আচরন শুরু করেন, এলাকার প্রতিহিংসার রাজনীতির ধারাবাহিকতায় আশ্রাফ আলী হাওলাদারকে কিছুদিনের মধ্যে সড়িয়ে দেয়া হয় উপজেলা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে।
তাঁর জীবনের এই রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসা বানিজ্যের নেমে আসে চরম দুসময় অথচ তিনি তখনকার ক্ষমতাসীন রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন! শুধুমাত্র স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর বৈরী আচরনের কারনে আশ্রাফ আলী হাওলাদারকে হাড়াতে হয়েছে প্রবাস থেকে অর্জিত অনেক সম্পদ। এমনকি ২০০৬ সনে তিনি তাঁর ঢাকাস্থ আবাসিক ও ব্যবসায়ীক বাড়ি বিক্রি করে এলাকায় ক্ষুদ্র ইটের ভাটায় বিনিয়োগ করে নতুনভাবে কাজ শুরু করতে বাধ্য হন। লন্ডন ও আমেরিকা প্রবাসী ছেলে ও ভাগিনাসহ নিকটাত্মীয়দের সহায়তায় আবার তিনি ব্যবসায়ীক সফলতা ফিরে পেয়েছেন বলে সকলেরই জানা আছে।
বর্তমানে তিনি মির্জাগঞ্জ উপজেলার সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের কাজের সাথে নিজেকে জড়িত রেখেছেন। তিনি প্রতি বছর গরীব ও মেধাবী ছাত্রদের মাঝে বৃত্তি প্রদান করে থাকেন, এলাকার মানুষের দুঃখ দুর্দশায় তাৎক্ষনিকভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এভাবেই তিনি মিশে আছেন মির্জাগঞ্জ উপজেলার মাটি ও মানুষের সাথে। সময় এসেছে ত্যাগী এই নেতাকে আবার বিএনপির রাজনীতিতে মূল্যায়ন করার। ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়নের মাধ্যমেই সংগঠন ফিরে পাবে নিজস্ব শক্তি, আশাপ্রদ হবে ক্ষমতায় ফিরে আসার স্বপ্ন। সূর্য সকাল ফিরে পাবার এখনই সময়।