ড. কামালকে ছাড়াই নতুনভাবে আসছে ঐক্যফ্রন্ট
ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট একেবারেই অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। ঢাকাসহ দেশের কোথাও এই ঐক্যফ্রন্ট সাংগঠনিক ঠিকানা গড়ে তুলতে পারেনি। বিভিন্ন সময়ে দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, এমনকি ভয়াবহ করোনা মহামারির পরও ঐক্যফ্রন্টের কাগুজে অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যায় না। অর্থাৎ প্রতিবাদ, বিক্ষোভ সমাবেশ তো নয়ই, বিবৃতিও দেননি কামাল হোসেনসহ ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
ড. কামাল ও তার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অখণ্ড নির্লিপ্ততা এবং জনজীবনের দুর্ভোগ নিয়ে সরকারের সমালোচনামূলক কোনো বক্তব্য রাখতে চরম ব্যর্থতায় ঐক্যফ্রন্টের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা হতাশ, ক্ষুব্ধ। ড. কামালের গণফোরাম এরই মধ্যে বিভক্ত হয়ে গেছে। তার সাথে উল্লেখ করার মতো কোনো দল ও নেতা নেই। ঐক্যফ্রন্টের শরিক বলতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ছোট ছোট শরিকরা। ড. কামাল জামায়াতকে সাথে করে চলার পক্ষে নন। জামায়াতে ইসলামীও ড. কামালের নেতৃত্ব মেনে নিতে চায় না। তারা কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে প্রস্তুত।
ড. কামালের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে কোনো কর্মসূচিতে জামায়াত অংশ নেবে না বলে বিএনপিকে জানিয়ে দিয়েছে। ২০ দলীয় জোটের অন্য শরিক ছোট ছোট দলগুলোও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যাপারে অনাগ্রহ প্রকাশ করে বিএনপিকে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার তাগিদ দিচ্ছে। তারা কর্নেল (অব.) অলির এলডিপি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারাসহ আরো কয়েকটি দল নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার কথা বলেছেন। এ নিয়ে কর্নেল অলি, জামায়াতের তিন নেতা, বিএনপির নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ, ঐক্যফ্রন্টের অধ্যাপক আবু সাইয়্যিদ, মোস্তফা মহসীন মন্টুসহ আরো কয়েকজন নেতার মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে কথাও হয়েছে।
তারা ড. কামাল হোসেনকেও সম্মানজনক অবস্থান দিয়ে তার নেতৃত্বাধীন গণফোরামকে সঙ্গে নিয়েই চলার পক্ষে। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, তার পুত্র মাহী বি চৌধুরী সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করে চললেও তাদের মধ্যে দূরত্বের রেখা ক্রমে বিস্তৃত হচ্ছে। মাহীর বিরুদ্ধে সরকারি তৎপরতাই এর কারণ। অবশ্য তা প্রশমিত করার জন্য সরকারি মহল থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
ড. কামালকে একক নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে যৌথ নেতৃত্বে এনে নতুন নামে জোট গঠনের কথা ভাবা হচ্ছে। তবে এই প্রক্রিয়ায় ড. কামাল নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে চাচ্ছেন না। বর্তমান জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে থাকতেই তিনি অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন শারীরিক ও পারিবারিক কারণে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল এবং লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানও এ বিষয়ে অবহিত। ড. কামালকে নিয়ে আগের মতো আগ্রহও তাদের মধ্যে নেই। তবে এখনই তাকে সরিয়ে বা বাদ দিয়ে অন্য কাউকে নেতৃত্বে আনা হলে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে। এতে রাজনৈতিকভাবে বিএনপিই অধিকতর ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ কারণে কিছুদিন নীরব থাকবে বিএনপি। ভেতরে ভেতরে বিকল্প নেতৃত্বে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার প্রক্রিয়াও শুরু করতে যাচ্ছে বিএনপি।