যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে বাইডেন
বিদায়ী ট্রাম্প প্রশাসন দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শের তেমন তোয়োক্কা না করলেও করোনার ব্যাপারে বাইডেনের অবস্থান বেশ স্পষ্ট। তাই তো ক্ষমতায় এসেই ট্রাম্পের দেখানো পথে না হেঁটে নতুন করে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
বিদায়ী ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছিল, ২৬ জানুয়ারি থেকে ব্রাজিল ও ইউরোপের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা আর থাকবে না।
রোববার (১৪ জানুয়ারি) ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, নতুন এই কড়াকড়ি আরোপের ফলে দক্ষিণ আফ্রিকাসহ মার্কিন নাগরিকদের ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
সোমবার (২৫ জানুয়ারি) থেকে নতুন এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। এতে করোনা ঝুঁকিতে থাকা ইউরোপের ২৬টি দেশসহ ব্রাজিল, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ডের নাগরিক মার্কিন মুলুকে প্রবেশ করতে পারবে না।
এই তথ্য নিশ্চিত করে যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ বিভাগের উপপরিচালক ড. অ্যানি সাসট জানিয়েছেন, নতুন ধরনের করোনার সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়তে থাকায় আমরা এই নিষেধাজ্ঞার তালিকায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে যুক্ত করেছি। আমরা আশা করছি, এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনার বিস্তার রোধ করা অনেকটাই সহজ হবে।
অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের আশঙ্কা করোনার আবিষ্কৃত টিকা দক্ষিণ আফ্রিকায় দেখা দেওয়া করোনার নতুন ধরনের ওপর কার্যকর হবে না।
দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনার এই নতুন ধরনের নাম দেওয়া হয়েছে ফাইভ জিরো ওয়ান ওয়াই ডট ভি টু। এই ধরনটি বিদ্যমান করোনা ভাইরাসের চেয়ে ৫০ ভাগ বেশি সংক্রমিত করার ক্ষমতাসম্পন্ন এবং এটি কমপক্ষে ২০টি দেশে দেখা দিয়েছে। আর একারণে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় নতুন নতুন আরও দেশ যুক্ত হতে পারে বলেও জানিয়েছে মার্কিন রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ বিভাগ।
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোন অঙ্গরাজ্যেই এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকায় দেখা দেওয়া করোনার নতুন ধরনটি পাওয়া যায়নি। তবে যুক্তরাজ্যে পাওয়া বি ডট ওয়ান ডট ওয়ান ডট সেভেন ডট ধরনটি যুক্তরাষ্ট্রের ২০টি অঙ্গরাজ্যে পাওয়া গেছে। তবে এই ধরনটিকে আবিষ্কৃত টিকাতেই ঠেকানো সম্ভব বলে জানানো হয়েছে।
সোমবার থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই বাড়তি সতর্কতায় সব বিমান, ফেরি, ট্রেন, বাস, ট্যাক্সি ও রাইড শেয়ারিং পরিবহনের যাত্রীদের অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। শুধু খাবার খাওয়া আর পানি ও পানীয় পান করার জন্য অল্প সময়ের জন্য মাস্ক খোলা যাবে বলেও ওই কড়া নির্দেশনায় বলা হয়েছে।
নতুন এই নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে আগামীকাল মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে ভ্রমণকারী সব যাত্রীকে তিন দিনের মধ্যে করা করোনা নেগেটিভ সনদ রাখতে হবে।
এর আগে গত ১২ জানুয়ারিতে স্বল্প পরীক্ষার ক্ষমতাসম্পন্ন কয়েকটি দেশের নাগরিকদের জন্য করোনা নেগেটিভ সনদের বাধ্যবাধকতার ক্ষেত্রে যে শিথিলতার কথা বলা হয়েছিল এবার তা থাকছে না। যদিও এই ব্যাপারে রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ বিভাগকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে দেশটির কয়েকটি বিমান পরিবহন সংস্থা।
তবে, বিভাগটি বলছে একদম ঢালাওয়াভাবে এই পদক্ষেপ নেওয়া না হলেও বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখবে সংস্থাটি। বর্তমানে ১২০টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
কঠোরতায় বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার পর সাত দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে এবং করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করা হবে ফেরার পাঁচ দিনের মধ্যে।
অভ্যন্তরীণ বিমান ভ্রমণের ক্ষেত্রে কতটা কড়াকড়ি আরোপ করা হবে তা নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনা চলছে। তবে এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্তে আসেনি মার্কিন প্রশাসন বা দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ।