এমপি শাহীন চাকলাদার ও ওসির মধ্যকার ফোনালাপ ফাঁস !
থানায় বোমা মরার মত জঘন্য নির্দেশ দিচ্ছেন সয়ন স্থানীয় এমপি ,এমনি একটি কল রেকর্ড ফাঁস করেছে কেউ একজন। যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এবং যশোরের কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিনের কথোপকথনের একটি অডিও ভাইরাল হয়েছে। সেই কথোপকথনে ইটভাটা-সংক্রান্ত বিষয়ে এক আইনজীবীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের জন্য ওই ওসিকে নির্দেশনা দিয়েছেন এমপি শাহীন চাকলাদার। এ সময় তিনি ওসিকে নির্দেশনা দেন, থানায় কিংবা যেকোনো ইটভাটায় বোমা মেরে ডাকাতির উদ্দেশ্যে হামলার অভিযোগ করে আইনজীবী সাইফুল্লাহকে যেন মামলার আসামি করা হয়। সপ্তাহ দুয়েক আগে তাদের মধ্যে মোবাইলে এই কথোপকথনটি হয়।
কেশবপুরের একটি ইটভাটার বিষয়ে অভিযোগ দাখিল করায় সাইফুল্লাহ নামের ওই আইনজীবীকে শায়েস্তা করতে এ পরামর্শ দেন শাহীন চাকলাদার। একই সঙ্গে যেকোনো ইটভাটায় সিভিল পোশাকের পুলিশ দিয়ে বোমা হামলা চালিয়ে ডাকাতির অভিযোগে আইনজীবী সাইফুল্লাহকে মামলার আসামি করারও পরামর্শ দেন তিনি। এমনকি হাইকোর্টের নির্দেশনাকেও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হয় ওই অডিও ক্লিপে।
সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার ও ওসি মো. জসিম উদ্দিনের কথোপকথনটি ছিল এ রকম :
ওসি : স্লামালাইকুম স্যার।
শাহীন চাকলাদার : ঘুম?
ওসি : না স্যার। ঘুমাইনি স্যার।
শাহীন চাকলাদার : সাতবাড়িয়ার সাইফুল্লাহ কিডা?
ওসি : সাতবাড়িয়া… সাইফুল্লাহ আছে, স্যার ওই ইটভাটার একটা বিষয় নিয়ে সাইফুল্লাহ, ‘বেলা’য় (বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি) যেয়ে মামলা-টামলা করে আর কি। বাজে একটা ছেলে স্যার।
শাহীন চাকলাদার : সাইফুল্লাহ… আপনি এখন রাত্তিরে থানায় বোম মারেন একটা। মারায়ে ওর নামে মামলা করতে হইবে। পারবেন? আপনি থাকলে এগুলো করতে অইবে। না অইলে কোন জায়গায় করবেন? আমি যা বলছি, লাস্ট কথা ইডাই। যদি পারেন ওই এলাকা ঠান্ডা রাখতি, আমি বন ও পরিবেশবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য। ওখানে কারও বাপের ক্ষমতা নেই। বারবার যেয়ে কেন করে, আপনি কী করেন?
ওসি : ও তো স্যার হাইকোর্টের কাগজ নিয়া আসে বারবার।
শাহীন চাকলাদার : আরেহ… কোথার হাইকোর্ট-ফাইকোর্ট। কোর্ট-ফোর্ট যা বলুক, বলুইগ্যা। অন্য… আমাদের খেলা নাই? খেলা নাই?
ওসি : হাইকোর্টে স্যার…
শাহীন চাকলাদার : ওসি হলি, ওসি কিন্তু ডায়নামিক হইতে অয়। আজকে বাগারপাড়া ওসি আসছিল আমার কাছে। ওরে আবার চৌগাছায় দিয়ে দিচ্ছি। ও ওসি..চেনেন? বাগারপাড়া ওসিকে চেনেন?
ওসি : চিনি না আবার স্যার? মামুন সাহেবরে?
শাহীন চাকলাদার : কথা বইলেন তার সাথে। তাকে নিয়ে আসতেছি চৌগাছায়। আপনে ওকে যেকোনোভাবে, যেকোনো লোক দিয়ে, কাইলকে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটায়ে কালকে কাজটা করেন, ওকে?
ওসি : স্যার, দেখি স্যার। কী হয়েছে স্যার? ও কি ডিস্টার্ব করতেছে আবার?
শাহীন চাকলাদার : ও কী ডিস্টার্ব করবে? আচ্ছা, বন ও পরিবেশ অফিসে আমি আছি। কার বাপের ক্ষমতা আছে এখানে আসবে! আমি বলছি কী, একটা আপনি খেলা খেলে ওকে ভেতরে নিয়ে আসেন। কথা বুঝেন নাই?
ওসি : স্যার, স্যার। দেখবোনে স্যার।
শাহীন চাকলাদার : কেমন অফিসার আপনি, আল্লাই জানে। কাজ দিলি কাজ পারেন না।
ওসি : হা হা হা হা স্যার। সব কাজই তো করি, স্যার।
শাহীন চাকলাদার : সব কাজ করেন, না? তালি পরে যেকোনো ভাটায় যেয়ে, দরকার হলি পুলিশের লোক দিয়ে সিভিলে বোম ফাটায় দিয়ে চলে আসুক। বলতে হবি যে হামলা করেছে ডাকাতি করার জন্য। এটা ছিল অমুক। একটা বানাই দিলে অয়া গেল।
ওসি : ও স্যার, ওই যে, ওই যে, বেলার যে কাগজটা আসছে, ওডা দেখছেন স্যার আপনে? হাইকোর্টের কাগজটা।
শাহীন চাকলাদার : বেলা-ফেলা আমি দেখবোনে, আমি তো স্থায়ী কমিটির সদস্য।
ওসি : হাইকোর্টের কাগজটা স্যার। হাইকোর্ট।
শাহীন চাকলাদার : হাইকোর্টের কাগজে কী বলেছে?
ওসি : রিসেন্টলি, গতকাল একটা কাগজ আসছে হাইকোর্টের থেকে স্যার।
শাহীন চাকলাদার : কী আছে?
ওসি : আমি দেখাবনে স্যার কালকে। কালকে সকালে হোয়াটসঅ্যাপে দিয়ে দেবোনে আপনারে, স্যার। হাইকোর্ট থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা আসছে ওই যে, সুপার ব্রিকস বন্ধ রাখার নির্দেশ দিসে স্যার।
শাহীন চাকলাদার : আমাদের এলাকায় স্কুল-কলেজ বাদে আমি আমার এলাকায় কোনো ব্রিকস বন্ধ করব না। যে যেই দিগ্যা। আমি করব না।
ওসি : কাগজটা তো দেখবেন, স্যার। কী লিখছে, স্যার।
শহীন চাকলাদার : ঠিক আছে, ওকে।
ওসি : আচ্ছা।
জানা যায়, কেশবপুর উপজেলার উত্তর সাতবাড়িয়া গ্রামের সাতবাড়িয়া মৌজার ১৫০৪ নম্বর খতিয়ানের ৪১৫৭ নম্বর দাগে অবস্থিত ‘মেসার্স সুপার ব্রিকস’ নামের ইটভাটার অবৈধ কার্যক্রম বিষয়ে অভিযোগ করেন স্থানীয় আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাইফুল্লাহ। ওই ইটভাটা বন্ধ করতে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে নির্দেশনাও এনেছিলেন তিনি