ভারতকে হতাশ করে পাকিস্তানের সঙ্গেই ঘনিষ্ট হচ্ছেন বাইডেন!
ভারতে দীর্ঘ ৩০ বছরের এক ক্যাডার কূটনীতিক, নাম এম কে ভদ্রকুমার, এখন অবসরে আছেন। পূর্ণ রাষ্ট্রদূত ছিলেন সর্বশেষে তুরস্কে ও উজবেকিস্তানে। এ ছাড়া উপরাষ্ট্রদূত অনেক রাষ্ট্রে- পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরানসহ অনেক দেশেই। কিন্তু এসব বিচারে তিনি বিশেষ কেউ নন। তার বিশেষত্ব অন্যখানে। অনেকে বলতে পারেন, তিনি আন্তর্জাতিক নীতি পলিসি বা অভিমুখ নিয়ে গবেষক ও লেখক। নিয়মিত প্রতি সপ্তাহে, তার তিন-চারটি লেখা দেশে-বিদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় এখন ছাপা হয়। কিন্তু এগুলোও তার মূল বিশেষত্ব নয়। চলতি শতকের শুরু থেকেই আমেরিকা ভারতের ওপর মনোযোগ ঢেলে প্রভাব বিস্তারে দেশটাকে কাজে লাগায়; তার চীন ঠেকানোর কাজের ঠিকা ভারতকে দেয়া আর ভারতের অ্যাকাডেমিক জগতের মাস্টার্স বা হায়ার স্টাডিজের স্কলারশিপ বিতরণ করে লোভ দেখিয়ে আমেরিকান বয়ান মননে ঢুকিয়ে দেয়া, আমেরিকান থিংকট্যাংকের ভারতীয় শাখা খুলে দেয়া ইত্যাদি শুরু হয়েছিল। ফলে ডিপ্লোম্যাটরা চাকরিতে থাকা অবস্থা থেকেই ওসব বয়ানে অনুরক্ত হতে শুরু করেছিলেন যাতে চাকরি শেষে কোনো থিংকট্যাংকে আবার চাকরি পাওয়া যায়। এসব বিচারে একেবারেই ব্যতিক্রম হলেন ভদ্রকুমার। তিনি অনেকের চেয়েই সক্ষম স্বাধীন গবেষক ও লেখক। তিনি আমেরিকান বয়ান বা তাদের অর্থ দ্বারা প্রভাবিত কোনো থিংকট্যাংকের সাথে যাননি। নিজের স্বাধীন চিন্তা অবস্থান নিয়ে লিখে চলেছেন। যেমন ভদ্রকুমারই সম্ভবত একমাত্র ভারত যুক্ত আছে এমন ‘ইন্দো-প্যাসিফিক’ জোট বা ‘কোয়াড’ জোটের একদম কোনো ভবিষ্যৎ দেখেন না। ফলে ভারতের এই যুক্ত হওয়া ‘খামোখা’ মনে করেন। তবে আরেক গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, তার কালেকশনে থাকে প্রচুর তথ্য ও ইন্টেলিজেন্স যা তিনি নিজের লেখায় ব্যবহার করেন যেটা সম্ভবত তার কূটনীতিক জীবনের ধারাবাহিকতায় প্রাপ্ত প্রবেশ-অধিকারের বদৌলতে।
বাইডেন প্রশাসনের ক্যাবিনেট সদস্যদের নিয়োগে সিনেট অনুমোদনের কাজ শেষ হয়েছে। তারা এরপর নতুন প্রশাসনের নীতি-পলিসিগুলো নিয়ে পারস্পরিক সমন্বয় শেষে কাজে নেমে পড়ছেন আস্তে ধীরে। সভা সেমিনারে গিয়ে নতুন প্রশাসনের পলিসি নিয়ে মুখ খোলাও শুরু হয়েছে। সেসব নিয়ে ভদ্রকুমারের একটা বড় রচনা ছাপা হয়েছে ‘এশিয়া টাইমস’ পত্রিকায়। সে লেখাকে পটভূমিতে রেখে আজকের প্রসঙ্গ।
ভদ্রকুমার হদিস দিচ্ছেন আমেরিকায় নয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন ভারতের মন্ত্রী জয়শঙ্করের সাথে ফোনে কথা বলেছেন। জানা গেল, সে কথা খুবই সংক্ষিপ্ত; মূলত সৌজন্য বিনিময় দিয়ে শুরু করা মাত্র। ফলে ঠিক কী কথা হয়েছে সেটা জানার চেয়ে এই কথা সম্পর্কে ভারত ও আমেরিকা উভয়েই প্রেসের জন্য কী নোট নিজ নিজ ওয়েবসাইটে টাঙ্গিয়েছে, সেটা দেখা দরকার।
যেমন দেখা যাচ্ছে ভারত অর্থহীন ফুলানো শব্দ ব্যবহার করেছে বেশি। বলতে চেয়েছে মূলত আমরা আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু ভারত সেটাকে ফুলিয়ে বলেছে, ‘আমাদের বহুমুখী স্ট্রাটেজিক সম্পর্ক পোক্ত করতে আর বিস্তার ঘটাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ আর যেকথা মনে করে এসব লিখেছে সেটা হলো, কেবল আমেরিকার অস্ত্র কেনাকেই এক ‘স্ট্রাটেজিক সম্পর্ক’ বলে জ্ঞান করে। ভারতের সাথে আসলে পুরা ট্রাম্পের আমলে তেমন কোনো সম্পর্কই ছিল না, ভারতের অস্ত্র কেনা ছাড়া। আমেরিকান অস্ত্র কেনাবেচাতে বহুবিধ শর্তাবলি থাকে। অস্ত্র কিনতে ভারতের সেসব একসাথে মেনে চলাকেই এখানে ‘স্ট্রাটেজিক সম্পর্ক’ বলা হচ্ছে। এরই একটা অস্ত্র কেনাবেচার সাইড চুক্তি, যেমন ‘ইন্ডিয়া-ইউএস ২+২’।
আবার ভারতের কথিত ‘বহুমুখী’ (মাল্টিফ্যাসেট) শব্দটা অবশ্যই অহেতুক; কিছুই প্রকাশ করে না এমন, কথার কথা। আসলে ভারত বলতে চেয়েছে, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক’ হবুজোট ও ‘কোয়াড’ জোট নিয়ে আমাদের সম্পর্ক আছে। কিন্তু ভারতের সন্দেহও আছে যে, এই কথাগুলোতে আসলে ট্রাম্পের চীনবিরোধী পলিসির অংশ ছিল যা আসলে বাইডেনেও মানবেন কি না, একে নিজের বলবেন কি না তা নিয়ে ভারত নিশ্চিত নয়। তাই ভারত ‘ইন্দো-প্যাসিফিক’ ও ‘কোয়াড’ শব্দ ব্যবহার না করে আরো আবছা এক শব্দ ‘বহুমুখী’ বলল। কারণ ভারতের এই প্রেস বিফিং ড্রাফটের সময়ে তখনো ভারত জানে না, আমেরিকা তাদের প্রেস ব্রিফিংয়ে কী লিখে রাখবে। তাই আমাদের এই অনুমানটা স্পষ্ট হবে আমেরিকা কী লিখে রেখেছে, এখন তাদের প্রেস ব্রিফিংটাও দেখলে। তামশাটা হলো, ভারত ‘ইন্দো-প্যাসিফিক’ ও ‘কোয়াড’ শব্দ দুটো ব্যবহারে দ্বিধা রেখে তা আর বলেনি। আর আমেরিকা বলেছে, মানে ব্যবহারে এনেছে শব্দ দুটো। কিন্তু অর্থ বদলে দিয়ে। বলেছে, আমরা ‘ইন্দো-প্যাসিফিকে আমেরিকার হবু পার্টনার হিসেবে ভারতের ভূমিকায় জোর দেই’ এবং ‘কোয়াডের মাধ্যমেসহ একসাথে কাজ ও সহযোগিতার দিকে গুরুত্ব দেই।’
তাহলে ব্যাপারটা কেমন হলো?