মহাদেবপুরে আত্রাই নদী দুষণ, দুষণ বন্ধের উদ্যোগ নেয়নি কেউ
কিউ, এম, সাঈদ টিটো, নওগাঁ : নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সদরের আত্রাই নদীতে ফেলা হচ্ছে পশুপাখির নারি-ভুঁড়ি ও যাবতীয় বজ্র। ফলে নদীর পানি দুষিত হয়ে মাছের বংশবৃদ্ধি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিদিন প্রকাশ্য দিবালোকে এই বজ্র ফেলা হলেও এটি বন্ধের উদ্যোগ নেয়নি কেউ। বরং সংশ্লিষ্টদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতাতেই চলছে এই কাজ। জানতে চাইলে প্রশাসনের কর্তারা দুষছেন একে অপরকে।
উপজেলা সদরের আত্রাই নদীর মহাশ্মশান এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দুপুরের পর একজন রিক্সাভ্যান চালক কয়েকটি ভর্তি বস্তা তার ভ্যানে করে বয়ে নিয়ে ওই এলাকায় আসেন। নদীর পাড়ের উপর ভ্যানগাড়ি রেখে বস্তাগুলো নামান। একে একে সেগুলো ফেলেন নদীর কিনারায়। বস্তার মুখের দড়ি খুলে নদীর পানিতে ঢালেন ভিতরের বস্তুগুলো। ভ্যান সেখানে পৌঁছানোর সাথে সাথে অসংখ্য কুকুর তার পিছু নেয়। কুকুরগুলো নদীর অল্প পানিতে নেমে খেতে শুরু করে সেসব। অসংখ্য ভুবন চিল উড়তে থাকে চারিদিকে। সাথে আরও অনেক পাখি। পানির স্রোতে ভেঁসে যাওয়া বজ্রগুলো ছোঁ মেরে ধরে সেগুলো খাওয়ার প্রতিযোগিতা করে পাখিগুলো।
ভ্যানচালক জানান, বস্তার ভিতরের বস্তুগুলো উপজেলা সদরের বাজারের বিভিন্ন দোকানের হাঁসমুরগি আর গরুছাগলের নারি-ভুঁড়ি, পালক আরও অন্যান্য বজ্র। প্রতিদিন দুপুরে ও সন্ধ্যার পর তিনি দোকানগুলো ঘুরে ঘুরে এসব সংগ্রহ করে এখানে এনে ফেলেন। এজন্য তিনি প্রতিদিন প্রায় তিনশ’ টাকা পান। আগে তিনি এসব বজ্র আত্রাই নদীর বেইলি ব্রিজের উপর থেকে নদীতে ফেলতেন। এখন এই শ্মশান এলাকায় ফেলছেন। অনেক বজ্র নদীতে জমা হয়ে আছে। ফলে নৌচলাচল, জেলেদের মাছ ধরা ও নদীর স্বাভাবিক পানির প্রবাহ ব্যহত হচ্ছে। ধংস হচ্ছে মাছের প্রজাতি। কিন্তু এই ভ্যানচালক বললেন অন্য কথা। তার মতে এই বজ্রগুলো মাছে খায়। এতে মাছের বংশবৃদ্ধি বেশি হয়। মাছ বেশি হবে এজন্যই তিনি এসব নদিতে ফেলেন বলেও জানান। তার রিক্সাভ্যানে লেখা আছে গ্রিন মহাদেবপুর, ক্লিন মহাদেবপুর, মহাদেবপুর ইউনিয়ন পরিষদ। তিনি জানান, উপজেলা সদরের বিভিন্ন স্থানে রাখা ডাস্টবিন থেকে ময়লা সংগ্রহ করে সেগুলো অপসারণ করার জন্য সদর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিনামূল্যে তাকে এই রিক্সাভ্যানটি দেয়া হয়েছে।
শ্মশানের প্রবেশস্থলে এই বজ্র ফেলার জায়গায় ইলেক্ট্রিক পোলের সাথে একটি ছোট সাইনবোর্ড লাগানো আছে। তাতে লেখা এখানে ময়লা ফেলা নিষেধ। যে ময়লা ফেলা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিবে তাকে দুইশ’ টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। সেখানে দেয়া ফোন নম্বরে কল দিলে ফোন রিসিভ করেন মহাশ্মশান পরিচালনা কমিটির সভাপতি গোপাল চন্দ্র সাহা। তিনি বলেন, ওই রাস্তা তারকাঁটার বেড়া দিয়ে বন্ধ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান মিলন জানান, বিষয়টি বন্ধ করার জন্য সদর ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সদর ইউপি চেয়ারম্যান মুহা: মাহবুবুর রহমান ধলু বলেন, বিষয়টি তিনি উপজেলার মাসিক উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় উত্থাপন করেছেন। কিন্তু ময়লা ফেলার কোন জায়গা না থাকায় নদীতে ময়লা ফেলার বিষয়টি বন্ধ করা যায়নি।
স্থানীয় পরিবেশবাদিদের মতে এখানে একটি খাস জায়গা দেখে সেখানে বড় গর্ত করে সেখানে এসব ময়লা ফেলার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।