সংবাদ প্রকাশের পর অবশেষে মহাদেবপুর থানা পুলিশের মামলা গ্রহন
কিউ, এম, সাঈদ টিটো, নওগাঁ : গত বৃহস্পতিবার বিভিন্ন মাধ্যমে ‘মহাদেবপুরে ভিক্ষুকের বাড়ি ভেঙ্গে রাস্তা করলো সন্ত্রাসীরা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর ঘটনার তিন দিন পর রাতেই অবশেষে মহাদেবপুর থানা পুলিশ এব্যাপারে ভিক্ষুকের মেয়ের দায়ের করা মামলাটি এন্ট্রি করেছে। রাতেই থানা পুলিশ আসামীদের ধরতে ওই গ্রামে ব্যর্থ অভিযান চালায় বলেও জানা গেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নুর ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামলা এন্ট্রি হওয়ায় গ্রামবাসীরা সাংবাদিকদের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
থানা পুলিশ মামলা নিতে দেরি করলেও এব্যপারে মহাদেবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব ভোদন পরিস্থিতির সুষ্ঠু সমাধানে মহতি উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বুধবার দুপুরে তিনি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত ভিক্ষুকের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু সমাধানের জন্য উভয়পক্ষকে নিয়ে বৈঠকের আহ্বান জানান।
তার আহ্বানে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় তার অফিস কক্ষে তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্যদের মধ্যে মহাদেবপুর থানার ওসির পক্ষে এসআই রায়হান আলম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাবুল চন্দ্র ঘোষ, চাঁন্দাশ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চাঁন্দাশ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ, চাঁন্দাশ ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুন নবী রিপন, খাজুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলাল উদ্দিন, গ্রামবাসীদের পক্ষে চাঁন্দাশ ইউপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আলী, সাবেক মেম্বার ও বিএনপি নেতা এমদাদুল হক দুলু, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক, মমতাজ হোসেন, মহাদেবপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও দৈনিক ভোরের কাগজের মহাদেবপুর প্রতিনিধি গৌতম কুমার মহন্ত, অভিযুক্তরা এবং উপজেলা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক কিউ, এম, সাঈদ টিটো প্রমুখ এতে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের শুরুতেই সাংবাদিক গৌতম কুমার মহন্ত যারা ভিক্ষুকের বাড়ি ভেঙ্গে রাস্তা বের করেছে তাদেরকে প্রকাশিত সংবাদে সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং সম্মানী মানুষদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিক সাঈদ টিটোর প্রতি ভর্ৎসনা করতে থাকেন। তার পত্রিকা থেকে তাকে ফোন করে ওই বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে বলেও জানান। উপজেলা চেয়ারম্যান তাকে নিবৃত করেন। বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনার পর ক্ষতিগ্রস্ত ভিক্ষুকের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপুরন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এছাড়া প্রতিবেসীদের চলাচলের জন্য রাস্তাটি আরও একফুট বাড়ানোর জন্য জমির মালিককে অনুরোধ করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু গ্রামবাসী আব্দুর রাজ্জাক ও সাবেক মেম্বার এমদাদুল হক দুলু বলেন, গ্রামের বাইরে থেকে লোকজন এসে বাড়ি ভেঙ্গে দেয়ার ঘটনায় গ্রামবাসীরা এক হয়ে গেছেন। এটাকে গ্রামের ইজ্জতের উপর হস্তক্ষেপ বলে তারা মনে করেন। তাই যেকোন সিদ্ধান্ত গ্রামে বসেই নেয়ার দাবি জানান। চাঁন্দাশ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ বলেন, ‘রাস্তার জমিটি সামু খালার (ভিক্ষুকের স্ত্রী) কেনা সম্পত্তি। রাস্তা করার জন্য তার কাছ থেকে জমি নিতে হলে জোর করে নয়, বরং তাকে অনুরোধ করেই নিতে হবে।’
এসআই রায়হান আলম দৈনিক ডেল্টা টাইমস পত্রিকার কপি হাতে নিয়ে বলেন, ‘বিষয়টি মিমাংসা করতে দেরি হবে। কিন্তু মামলা এন্ট্রি না করলে সাংবাদিকরা আবার লেখবে যে, পুলিশ মামলা নিচ্ছেনা।’ তিনি বলেন, ‘রাস্তার ইট তুলে ফেলার জন্য ওই ভিক্ষুক পরিবারের বিরুদ্ধে একটি ও বাড়ি ভেঙ্গে ফেলার জন্য প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে অপর একটি মামলা এন্ট্রি করা হবে।’ সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন জানান, মামলার বাদি ভিক্ষুকের মেয়ে অসুস্থ্য থাকায় এই বৈঠকে আসতে পারেননি। বৈঠকে উপস্থিত নেতারা মামলা এন্ট্রি করা বন্ধ রেখে দ্রুত বিষয়টি সমাধান করা হবে বলে জানান। কিন্তু থানা পুলিশ রাতেই মামলাটি এন্ট্রি করে।
উল্লেখ্য, নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার চাঁন্দাশ ইউনিয়নের রামরায়পুর গ্রামের ভিক্ষুক ও বীরমুক্তিযোদ্ধা উমর আলীর প্রতিবেসী বেলাল, তার ভাই ও চাচাসহ কয়েকটি পরিবারের যাতায়াতের জন্য ভিক্ষুক উমর আলীর মেয়ে রুমিয়া বেগমের কেনা আড়াই কাঠা জমির মধ্যে এক কাঠা জমি জবর দখল করে গাছপালা কেটে ফেলে গত ২০১৯ সালের ২২মে রাস্তা বের করা হয়। গতবছর ২৫ এপ্রিল সেখানে ইট দিয়ে ৫ফুট রাস্তা সোলিং করা হয়।
রুমিয়া বেগম যখন পাকা বাড়ি করবেন তখন একফুট ইট তুলে ফেলতে পারবেন বলে জানানো হয়। ভিক্ষুকের লোকজন এতে বাধা দিলে সন্ত্রাসীদের স্বসস্ত্র হামলায় ভিক্ষুকের স্ত্রী সামছুন্নাহার, মেয়ে রুমিয়া, ছেলে সামসুদ্দিন ও ছেলের বউ রুমিয়া খাতুন মারাত্মক আহত হয়। সামসুদ্দিনের পা ভেঙ্গে যায় ও মাথায় ৬টি সেলাই দিতে হয়। গত ২৫ জানুয়ারী রুমিয়া বেগম বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ওই রাস্তার ১ফুট ইট তুলে সেখানে ওয়াল দিয়ে বাড়ির দুইট ঘর নির্মান করেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারী প্রতিপক্ষরা সেই বাড়ি ভেঙ্গে দেয়।