জাবি প্রশাসনকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
পিবিসি নিউজ: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের গেরুয়া এলাকায় স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষের জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস উত্তাল হয়ে উঠেছে। সকালের দিকে বিক্ষোভ ও চার দফা দাবি উত্থাপনের পর দুপুরের দিকে শিক্ষার্থীরা বন্ধ হলের তালা ভেঙে সেখানে অবস্থান নিয়েছেন। গতকাল শনিবার প্রায় দিনভর শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালের দিকে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে জড়ো হন। এক পর্যায়ে তাঁরা চার দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো : সব আবাসিক হল খুলে দেওয়া, হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন, হামলায় জড়িত ও মাইকে ঘোষণাকারীদের বিচার এবং গেরুয়া প্রান্তের ফটক স্থায়ী প্রাচীর করে চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া।
শিক্ষার্থীরা সকাল ১১টায় শহীদ মিনার থেকে মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের কাছে তাঁদের দাবিগুলো তুলে ধরেন। সেখান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ও কয়েকজন শিক্ষক তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। তিনটি দাবি মেনে নিলেও আবাসিক হল খুলে দেওয়ার বিষয়ে সরকারের নির্দেশ প্রয়োজন বলে জানান তাঁরা।
এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে দুপুর ১২টার দিকে প্রথমে আল-বেরুনী হল ও পরে ফজিলাতুন নেছা হলের তালা ভাঙেন। এরপর একে একে ১৬টি হলের তালা ভাঙেন শিক্ষার্থীরা। কয়েকটি হলের তালা ভেঙে শিক্ষার্থীরা চলে গেলে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা নতুন করে তালা লাগিয়ে দেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আবার তালা ভেঙে হলে অবস্থান নেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ছাত্র হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করলেও মেয়েদের হলে কেউ ছিলেন না। বিক্ষোভ চলাকালে ক্যাম্পাসের রাস্তা ধরে মোটরসাইকেলে করে যাওয়ার সময় গেরুয়া গ্রামের এক যুবককে আটকে বেধড়ক মারধর ও তাঁর মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। পরে আহত অবস্থায় ওই যুবককে গেরুয়া এলাকায় পাঠিয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা।
হল খোলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘হল খোলার বিষয়টি আসলে আমাদের হাতে নেই। সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত এলে তবেই হল খোলা সম্ভব। আজ উপাচার্যদের সঙ্গে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের সভা রয়েছে। আশা করি সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হল খোলা-না খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।’ বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বিশ্ববিদ্যালয় বহন করবে। মিছিল, জমায়েত, আবাসিক হলের তালা ভাঙা সিন্ডিকেট সিদ্ধান্তের পরিপন্থী। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
শিক্ষার্থীরা বলছেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ‘আন-অফিশিয়ালি’ হলে থাকতে পারছেন। হল বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করায় শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। পাশাপাশি স্থানীয়দের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ঝামেলা হচ্ছে।
বিকেলে শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের জরুরি বৈঠক হয়। এরপর সাংবাদিকদের জানানো হয়, সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয় বহন করবে বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে, যার প্রস্তুতি এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। আর শিক্ষার্থীদের হল খুলে দেওয়ার দাবি সরকারকে জানানো হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার জন্য অনুরোধ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এখন হল খোলার কোনো প্রস্তুতি নেই। সরকারের নির্দেশে হল বন্ধ হয়েছে। সরকার যখন বলবে তখনই হল খুলে দেওয়া হবে।
শুক্রবার গেরুয়া এলাকায় ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মারধরের ঘটনায় স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। স্থানীয় লোকজন মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা দিয়ে এলাকাবাসীকে জড়ো করে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ৪০ জন আহত হয়। গতকাল গেরুয়া গ্রামে থমথমে অবস্থা ছিল। গেরুয়া বাজারের সব দোকান বন্ধ রয়েছে এবং সেখানে অন্তত দেড় শ পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকার স্থানীয় যুবক ও গ্রামবাসী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গেরুয়া গ্রামবাসী নিজেদের পাশাপাশি অন্য এলাকা থেকেও যুবকদের ডেকে এনে সংঘর্ষ ও হামলা মোকাবেলার প্রস্তুতি নিয়েছে। ওই সব এলাকায় যেসব শিক্ষার্থী রয়েছেন তাঁরা এলাকা ছাড়তে শুরু করেছেন।
ঢাকা উত্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুল্লাহিল কাফি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংঘর্ষ এড়াতে আমাদের সব প্রস্তুতি আছে। পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ থাকবে।’ তিনি জানান, গত রাতের সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয় লোকজনের হামলার ঘটনায় ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টসহ বিভিন্ন সংগঠন।