চিকিৎসার অভাবে গরীবদের রাস্তায় পড়ে থাকা মেনে নেয়া যায় না : ফখরুল
পিবিসি নিউজ ঃ সরকারের অপরিকল্পিত লকডাউনে জনজীবন বিপন্ন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, গরীব মানুষ চিকিৎসার অভাবে রাস্তায় পড়ে থাকবে এটা মেনে নেয়া যায় না।
সোমবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই ভয়াবহ বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের সময়ে এই সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়েছে। তাদের উদাসীনতা, তাদের অযোগ্যতা, তাদের ব্যর্থতা, তাদের দুর্নীতি আজকে দেশকে এবং দেশের মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে ফেলেছে, জীবিকাকে বিপন্ন করে ফেলেছে
তিনি বলেন, ‘হাসপাতালগুলোতে বেড নেই, অক্সিজেন নেই, আইসিইউ বেড নেই এবং ওষুধ নেই। জনগণের জীবন আজকে বিপন্ন। করোনা হবে চিকিৎসা পাবে না, ভুল চিকিৎসা হবে, গরীব মানুষ চিকিৎসার অভাবে রাস্তায় পড়ে থাকবে এটা মেনে নেয়া যায় না।’
‘আমরা সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছিলাম প্রান্তিক মানুষকে যেন যে সময়টা লকডাউন চলবে সেই সময়টাতে এককালীন ১৫ হাজার টাকা অনুদান হিসেবে দেয়া হয়। তারা (সরকার) কোনো কথাই শুনেনি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকের পত্রিকাতে আছে, তারা যে ২৮ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছে তার ৮৬ শতাংশই ভুয়া। অর্থাৎ তারা যে নামগুলো দিয়েছে সেখানেও তারা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নামগুলো দিয়েছে যাতে করে তারা সেই টাকা নিয়ে নিতে পারে। এটা সর্বক্ষেত্রেই হচ্ছে।’
সিলেট-৩ উপনির্বাচনে গ্রেফতার-হয়রানি
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করছি না। অথচ আমাদের নেতা-কর্মীদের অস্থির করে রেখেছে। বাড়ি বাড়ি রেইড করছে, নেতা-কর্মীদের হয়রানি করছে, তাদেরকে গ্রেফতার করছে।’
বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য, একদলীয় একটা শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য, ১৯৭৫ সালে বাকশাল সৃষ্টির মাধ্যমে যেটা করেছিল, আজকে তারা সেটাই করতে ওই অবস্থাটাই সৃষ্টি করেছে। এটা এক দিনে হয়নি, ধীরে ধীরে ক্রমান্বয়ে সুচতুর ভাবে এই অবস্থাটা তারা সৃষ্টি করেছে। এর মূল বিষয়টা ছিলো ১/১১। ১/১১-এর মূল্য লক্ষ্য ছিল বিরাজনীতিকরণ করা। সেটাই হচ্ছে এখন।’
বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখনকার যে পৃথিবী, এখনকার যে রাজনীতি এই রাজনীতিটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। একটা নষ্ট সময়, একটা ভয়ংকর সময়, যে সময়টা রাজনীতিকে সঠিক খাতে প্রবাহিত করে না, যে সময়টা মানুষকে রাজনীতিতে সঠিকভাবে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ দেয় না। যে রাজনীতি শুধুমাত্র নষ্টের দিকে যায়, খারাপের দিকে যায়, যে রাজনীতি মানুষকে খারাপ করে তোলে এই রাজনীতির সময় কিন্তু চলছে।’
তিনি বলেন, ‘৯০, ৬৯-এর আন্দোলনের কথা এবং ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের কথা যদি বলি, সেই সময়টা আর এই সময়টা ভিন্ন। গত একযুগের বেশি সময় ধরে চলছে ভিন্ন এই সময়টা। এর মধ্যেও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা বিএনপিকে ধরে রেখেছি, ধরে রাখার চেষ্টা করেছি, ধরে রাখতে পেরেছি। বিএনপিকে অনেকবার ভাঙার চেষ্টা হয়েছে, অনেকবার বিএনপিকে ধ্বংস করে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে কিন্তু বিএনপিকে কখনোই ভেঙে ফেলতে পারেনি। কারণ একটাই, আমাদের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে দর্শন দিয়েছেন সেটা জনগণের অন্তুরের সাথে একাত্ম হয়ে গেছে।’
সরকারকে হটাতে হবে
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সার্বিক ভাবে একটাই কথা- এই সরকারকে যদি না সরানো যায় তাহলে ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের যে মূল লক্ষ্য ছিল সেই লক্ষ্য পুরোপুরিভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে। এখন এটা সারা দেশের মানুষের দায়িত্ব এই সরকারকে সরাতে হবে, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।’
‘বিএনপির দায়িত্বটা বেশি। বিএনপিকেই এর নেতৃত্ব দিতে হবে। এবং সেজন্য আমাদের যেটা প্রয়োজন- আমাদের কখনো হতাশ হওয়া যাবে না। হতাশা ও ব্যর্থতা নিয়ে এগুনো যাবে না। আমাদেরকে অবশ্যই আশাবাদী হতে হবে, জনগণকে সংগঠিত করতে হবে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সেই লক্ষ্যে কাজ করছেন। অনেক বাধা-বিপত্তি, অনেক সুবিধা-অসুবিধার মধ্যেও কাজ হচ্ছে, সেই কাজগুলোকে আমাদের একত্রিত করতে হবে।’
বিএনপি মরহুম সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল খানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আবদুল আউয়াল খান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘স্মৃতিতে অম্লান’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল স্মরণ সভা হয়।
এ সময় আউয়াল খানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব।
গত বছরের ২০ জুলাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান আবদুল আউয়াল খান।
আবদুল আউয়াল খান ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা সাবেক হুইপ মনিরুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়ার সঞ্চালনায় এই ভার্চুয়াল আলোচনায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ ও মরহুম আবদুল আউয়াল খানের ছেলে আসাদুজ্জামান খান বক্তব্য রাখেন।