টাকা নয়, হেলেনার সাথে সেফুদার হৃদয়ের লেনদেন!
পিবিসি নিউজ ঃহেলেনা জাহাঙ্গীরের সাথে টাকা-পয়সার নয়, হৃদয়ের লেনদেন রয়েছে। এমনটাই বলছেন বিতর্কিত অস্ট্রিয়া প্রবাসী সেফাত উল্লাহ সেফুদা। তিনি বলেন, প্রায় তিন বছর ধরে তিনি হেলেনাকে চিনেন।
আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য পদ থেকে সম্প্রতি অব্যাহতি পাওয়ার পর বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেফতার হেলেনা জাহাঙ্গীরের সেফুদার সাথে আর্থিক লেনদেনের কথা র্যাব গণমাধ্যমকে জানালে, তার প্রেক্ষিতে সেফুদা এমন কথা বলেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বহুল আলোচিত সেফুদা শনিবার দুপুরে ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, ‘র্যাব বলেছে আমি নাকি হেলেনা জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে টাকা-পয়সা নিই কিংবা সে নাকি আমাকে টাকা-পয়সা দেয়। এরকম কী কী জানি বলেছে।’
তিনি বলেন, ‘হেলেনা জাহাঙ্গীরের সাথে আমার টাকা-পয়সার লেনদেন নেই। সম্পদের লেনদেন নেই। হৃদয়ের লেনদেন আছে। হেলেনা জাহাঙ্গীর লাস্ট কালকেও আমাকে বলেছে, দাদা আই লাভ ইউ। আমি বলেছি লাভ ইউ টু। কারণ লাভ ইজ পাওয়ার। আপনারা জানেন ভালোবাসা আমার আদর্শ।’
এসময় লাভ ইজ পাওয়ার লেখা সম্বলিত এবং তার ছবি সংযুক্ত টি-শার্ট দেখিয়ে বলেন, ‘হাজার হাজার লোক এই টি-শার্ট কিনছে।’
তিনি বলেন, ‘আই লাভ হেলেনা জাহাঙ্গীর। হোয়াই নট, হোয়াই আই সুড নট লাভ হেলেনা জাহাঙ্গীর?’ এরপর অবশ্য তিনি বলেন, ‘হু ইজ হেলেনা জাহাঙ্গীর? আই ডোন্ট নো, আই ডোন্ট নিড টু নো।’
এরপরই তিনি আবার বলেন, ‘অনলাইনে গত প্রায় তিন বছরের কম সময় ধরে আমি তাকে চিনি। মানে আমাকে সে আবিষ্কার করেছে।’
সেফুদা বলেন, ‘হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতারের সময় চেহারায় কোনো অনুতাপ নেই (ছিল না)। অনুতাপ থাকবে কেন? তিনি কঠোর পরিশ্রমী একজন শিল্পোদ্যোক্তা। নিজের পরিশ্রমের ফসল আজ তার কোটি কোটি টাকা, অনেকগুলো শিল্প, অনেক বাড়ি-গাড়ির মালিক। তিনি সমাজের ওপর স্তরের মানুষ। টাকা-পয়সা না থাকলে তার কোনো দাম নেই।’
নিজেকে অনেক ধনী দাবি করে সেফুদা এসময় বলেন, ‘আমার ছেলে স্বপ্নীল আমাকে অনেক সময় বলে, আব্বু আপনি যত বড় স্কলারই হোন না কেন, আপনার চেয়ে বড় দার্শনিক, বড় স্কলার পৃথিবীতে নেই। কিন্তু আপনার পকেটের টাকা নাই, তাই আপনাকে কেউ সম্মান করে না। আমি বলেছি, তারা বেকুব। তারা মূর্খ। তারা অশিক্ষিত বর্বর। যারা সম্পদকে সম্মান করে, টাকাকে সম্মান করে, তারা অশিক্ষিত-বর্বর-মুর্খ। ওদের জন্যই পৃথিবীতে অশান্তি, পৃথিবীটা নরকের মতো হয়ে যায়। কথা বোঝা গেছে?’
এর আগে শুক্রবার এক ভিডিওতে হেলেনা জাহাঙ্গীরের মুক্তি দাবি করেন সেফুদা। ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, ‘আমার সাথে হেলেনা জাহাঙ্গীরের দেখা হয়নি। তবে টেলিফোনে কথা হতো। হেলেনা জাহাঙ্গীর একজন স্মার্ট নারী, তিনি দুঃসাহসের সাথে কথা বলতেন। অবিলম্বে এবং সম্মানের সাথে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে ছেড়ে দিতে হবে।’
নামের সাথে ‘লীগ’ যুক্ত করে একটি সংগঠনের সভাপতি হিসেবে নিজেকে ঘোষণার পর বিষয়টি সরকারি দল আওয়ামী লীগ ভালোভাবে নেয়নি। তাকে বহিষ্কার করা হয় দলীয় পদ থেকে।
এরপর বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) রাত ১২টার দিকে গুলশানের ৩৬ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাসায় দীর্ঘ প্রায় চার ঘণ্টা অভিযান শেষে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটক করে র্যাব।
এ সময় তার বাসা থেকে বিদেশী মদ, অবৈধ ওয়াকিটকি সেট, চাকু, বৈদেশিক মুদ্রা, ক্যাসিনো সরঞ্জাম ও হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয় বলে জানায় র্যাব। এছাড়া আটকের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়।
এছাড়া হেলেনা জাহাঙ্গীরের মালিকানাধীন আইপি টেলিভিশন জয়যাত্রার কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়। তার বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলাও হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র্যাব সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, সেফুদা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের মাধ্যমে দেশবাসীর নজর কাড়তে চেষ্টা করেন। তার সাথে গ্রেফতারকৃত হেলেনার নিয়মিত যোগাযোগ ও লেনদেন রয়েছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়।
তিনি আরো বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীর অপকৌশলের মাধ্যমে নিজেকে ‘মাদার তেরেসা’, ‘পল্লীমাতা’, ‘প্রবাসীমাতা’ হিসেবে পরিচিতি পেতে জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন। তার পৃষ্ঠপোষকতায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া খেতাবের অপপ্রচার চালাত।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বিভিন্ন দেশী-বিদেশী সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গ থেকে জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের নামে অর্থ সংগ্রহ করতেন। যা মানবিক সহায়তায় ব্যবহারের চেয়ে গ্রেফতারকৃতের খেতাব প্রচার-প্রচারণায় বেশি ব্যবহার করা হতো। হেলেনা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততা রেখে নিজের বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেন। তার ১২টি ক্লাবের সদস্য পদ রয়েছে।