শ্যালিকার জন্য স্ত্রীর লাশ গুম : ১০ মাস পর রহস্য উদঘাটন
পিবিসি নিউজ ঃ ঢাকার কেরানীগঞ্জে শ্যালিকার সাথে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনের পর তাকে পাওয়ার জন্য স্ত্রীকে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ গুম করার ১০ মাস পর হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন করল দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় স্বামীর দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কেরানীগঞ্জ উপজেলার আব্দুল্লাহপুরের চরকদমপুর এলাকার ভাড়া বাসার পাশের পুকুরে তল্লাশি চালিয়ে স্ত্রী মোহনার লাশের হাড়, মাথার খুলি, চুলের কিছু অংশ ব্যবহৃত কাপড়সহ বেশ কিছু আলামত বস্তাবন্দী অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১০ বছর আগে উপজেলার ভাওয়ারভিটি এলাকার মৃত মন্টু মিয়ার বড় মেয়ে মোহনা আক্তারের সাথে একই এলাকার মৃত আব্দুলের ছেলে ইকবালের বিয়ে হয়। বিয়ের দুই বছর পর মোহনার মা রহিমা বেগম বিদেশে চলে যান। এই সুবাদে মোহনার ছোট বোন আরিফা বোনের বাসায় থাকতে শুরু করে। কিছু দিন যেতে না যেতেই মোহনার বোন আরিফা তার ভগ্নিপতি ইকবালের প্রেমে পড়ে। এই প্রেমকে সফল করার লক্ষ্যে ইকবাল তার স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ গুম করে শ্যালিকা আরিফাকে নিয়ে পালিয়ে চরকদমপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় ওঠে। ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর থেকে মোহনা নিখোঁজ থাকলে বিদেশ থেকে ফিরে নিহত মোহনার মা রহিমা বেগম গত ১৪ জুন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা মামলা দায়ের করেন। এ মামলার এক নম্বর আসামি ইকবাল ও রহিমা বেগমের ছোট মেয়ে আরিফাকে গ্রেফতার করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আব্দুল্লাহপুর ও কদমপুর এলাকার ইকবালের ভাড়া বাসার পার্শ্ববর্তী পুকুর থেকে একটি হাড়ের সন্ধান পেয়েছিল পুলিশ। এরপর সেটিকে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। এ ঘটনার পর ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ সর্দারের নির্দেশে সহকারী কমিশনার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) শাহাবুদ্দিন কবির, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ, ইন্সপেক্টর তদন্ত খালেদুর রহমান ও এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সাইফুল আলমের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে, যত দ্রুত সম্ভব এই হত্যার রহস্য উদঘাটন করার কথা বলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে বৃহস্পতিবার ফের ওই পুকুরে অভিযান চালিয়ে জাল টেনে নিহত মোহনার হাড় মাথার চুল, জমাটবাঁধা মাংসের টুকরা ব্যবহৃত কাপড় চোপড়সহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সাইফুল আলম জানান, মামলার তদন্তভার আমার ওপর ন্যস্ত হওয়ার পর থেকে এ মামলার জন্য দীর্ঘ পরিশ্রম করতে হয়েছে। অবশেষে মামলার মূল রহস্য উদঘাটন করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ জানান, আসামি ইকবালের জবানবন্দী মোতাবেক আমরা যে লাশের অংশবিশেষ উদ্ধার করেছি তার সাথে জবানবন্দীর সম্পূর্ণ মিল রয়েছে। তার পরেও অধিকতর তদন্তের স্বার্থে লাশের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করা হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল এলে উদ্ধারকৃত লাশের নমুনা মোহনার কি-না তা সম্পূর্ণ নির্ধারণ করা যাবে। এ ঘটনায় বর্তমানে ইকবাল ও আরিফা কারাগারে রয়েছে।
এ বিষয়ে তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর এই হত্যারহস্য উদঘাটন করতে পেরেছি, এটা বাংলাদেশ পুলিশের একটি সাফল্য।