সীমান্তে বিএসএফের হাতে ১৮ বছরে ১১৪৪ বাংলাদেশী নিহত : লেবার পার্টি
পিবিসি নিউজঃ সীমান্তে গত ১৮ বছরে ১ হাজার ১৪৪ জন বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ, এমন তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ লেবার পার্টি।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ লেবার পার্টি আয়োজিত ‘করোনা ডেল্টা ভেরিয়েন্ট ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এ তথ্য জানায় দলটি।
বৈঠকে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০০০ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ভারতের সীমান্তরক্ষা বাহিনী বিএসএফের গুলিতে কমপক্ষে ১ হাজার ১৪৪ জন বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। ২০১৯ সালে সীমান্তে ৪৩ জন বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে সীমান্ত হত্যা বেড়েছে ১২ গুণ।
লিখিত বক্তব্য আরো বলা হয়, ভারতের সাথে ছয়টি দেশের স্থলসীমান্ত রয়েছে। এ দেশগুলো হলো- পাকিস্তান, চীন, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ। আর ভারতের সমুদ্রসীমান্ত রয়েছে শ্রীলংকার সাথে। আমরা এ-ও জানি, এই সবগুলো দেশের সীমান্তেই ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ মোতায়েন আছে। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য পাঁচটি দেশের সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে কোনো লোক নিহত হওয়ার কোনো খবর কিন্তু চোখে পড়ে না।
দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, সকল হত্যাই অপরাধ। কিন্তু এরমধ্যে কয়েকটি ঘটনা বাংলাদেশসহ বিশ্ব গণমাধ্যমে আলোচিত হয়ে আছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কুড়িগ্রামের অনন্তপুর-দিনহাটা সীমান্তের খিতাবেরকুঠি এলাকায় কাঁটাতারের বেড়ায় ফেলানীর লাশ পাঁচ ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে ছিল। ফেলানী হত্যার বিষয়টি সকলেই জানেন।
গত ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবসে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় জাহিদুল ইসলাম নামে এক বাংলাদেশী যুবককে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। এটিও গণমাধ্যমে এসেছে। করোনাকালেও মানুষ হত্যা বন্ধ হয়নি। সীমান্তে শুধু হত্যা নয়, এখন হচ্ছে বাংলাদেশের নারীদের ধর্ষণ।
গত ৩০ জুলাই এ বিষয়ে দেশ ও আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলো প্রকাশ করেছে। এরসাথে রয়েছে মানব পাচারসহ চোরাচালানের ঘটনা।
সীমান্ত আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত সকল ধরনের চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে। জনগণকে শতভাগ টিকার আওতায় আনতে হবে। বর্তমানে আফগানিস্তানের নতুন সরকারের সাথে ভারতের বৈরী সম্পর্ক বিশ্ববাসী দেখেছে। তার কোনো প্রভাব যেন আমাদের সীমান্তে না হয় সেদিকেও সরকার কঠোর হতে হবে।
বৈঠকে সরকারের উদ্দেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ধানাই-পানাই বাদ দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেন। এবং ভারত সীমান্ত বন্ধ করে দেন। ভিসা বন্ধ করেন তা নাহলে করোনা আরো বেড়ে যাবে।
সরকারের উদ্দেশে এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ বলেন, ‘বিএনপি কর্মীরা নতুন দায়িত্ব পেয়েছে, তাদের নেতাকে শ্রদ্ধা জানাবে। সেখানে কেন আপনারা পুলিশ দিয়ে পেটাবেন? এই ধরনের কাজগুলো আপনারা খুব খারাপ করছেন। যে পুলিশকে দিয়ে আজকে তাদের পেটাচ্ছেন একদিন দেখলাবেন এই পুলিশই ঘুরে দাঁড়াবে। এইসব বন্ধ করেন।’
আজকে চন্দ্রিমা উদ্যানে ছাত্রদল ও পুলিশ সংঘর্ষের কথা উল্লেখ করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘যেকোনো দলের কর্মীরা তাদের নেতার কবরে মাজারে ফুল দিতে যায়। এটা স্বাভাবিক। তাতে তাদের পিটাতে হবে, গুলি করতে হবে এই রকম ঘটনা কখনো দেখিনি। আপনারা সীমান্ত বন্ধ করতে পারেন না। সীমান্ত দিয়ে ভাইরাস নিয়ে মানুষ ঢুকে যায়, সেটা বন্ধ করতে পারেন না। কেবলমাত্র বিরোধী দলের ওপর নির্যাতন করতে পারেন। আপনাদের উন্নয়ন মানে অত্যাচারী উন্নয়ন। এসমস্ত উন্নয়ন আমাদের শোনানোর দরকার নেই।’
এসময় ছাত্রদেরকে আহ্বান করে মান্না বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আপনারা যার যার মতো শিক্ষকদের অনুরোধ করে শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেন।
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা: মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, করোনার তৃতীয় ঢেউ রুখতে ভারত সীমান্ত বন্ধ করা উচিত। তা নাহলে দেশের মানুষদেরকে করোনা থেকে বাঁচানো যাবে না। ভারতের ডেল্টা ভেরিয়েন্ট মোকাবিলায় অবিলম্বে ভিসা কেন্দ্রগুলোর কার্যক্রম স্থগিত করা উচিত। ভারত বন্ধু নয় প্রভুর মতো আচরণ করছে। বাংলাদেশ ছাড়া পার্শ্ববতী কোনো দেশের সাথে ভারতের সুসম্পর্ক নেই।
গোলটেবিল বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, লেবার পার্টির মহাসচিব লায়ন ফারুক রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান হিন্দুরত্ম রামকৃষ্ণ সাহা, মুক্তিযোদ্ধা দলের শহিদুল ইসলাম চৌধুরী মিলন, গণস্বাস্থ উপদেষ্টা জাহাংগীর আলম মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক হুমাউন কবীর, এনডিএম সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুজ্জামান হীরা, ছাত্র অধিকার পরিষদের ফারুক হোসাইন, যুব মিশনের আহ্বায়ক ইমরুল কায়েস, বাংলাদেশ ছাত্র মিশনের সভাপতি সৈয়দ মো: মিলন, সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম প্রমুখ। লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার সংরক্ষণ সংস্থার সভাপতি অ্যাডভোকেট জহুরা খাতুন জুঁই।